টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার

মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম নয়ন
অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন সন্ধানী

সেপ্টে ২৭, ২০২১ | ইতিহাস ও ঐতিহ‌্য

Ended soon

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অংশে বিরাট সংখ্যক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর বাস যারা সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলসমূহে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে সাওতাল, ওঁরাও, কোচ, মুন্ডা, মাহাতো, ডালু, মাহালী, পাহান, পাড়াড়িয়া, তুরি, রাজবংশী, রাই, পাত্র প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বসবাস। আলোচ্য শিরোনামে তাদের নিয়ে আলোচনা করার প্রধান কারণ-তারা সমাজের আর দশজন মূলস্রোতধারার মানুষের মতো সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে ভোগ করতে পারে না। তারা শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, চাকুরী প্রাপ্তিতে, আয়সহ দৈনন্দিন নানা বৈষম্যের শিকার, এককথায় তাদের যাপিত জীবন বৈষম্যে ভরা। আজ যখন চারিদিকে সবার জন্য সমান উন্নয়নের দাবী উচ্চারিত হচ্ছে তখন সমতলের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নের বিষয়টি অতি অবশ্যই অগ্রাধিকারের দাবী রাখে।

সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা:

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য গৃহিত উন্নয়ন কর্মসূচি” তে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের সংখ্যা ২০১১ সালের জাতীয় জারিপ অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ লক্ষ ৮৬ হাজার এর কিছু বেশী। ফিলিপ গাইন সম্পাদিত Survival on the fringe: Adibashis of Bangladesh বইতে জাতীয় জারিপ ১৯৯১ ও ২০০১ কে ভিত্তি ধরে বলা হয়েছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মোট জনসংখ্যার ১.৫% হলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যারা মোট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংখ্যার ২৫.৭৭%। উত্তর-মধ্যাঞ্চলে গারোদের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার কিন্তু অন্য একটি গবেষণায় যাদের সংখ্যা বলা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ। এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ঐ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ১.১৩% যা জনসংখ্যার দিক থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজারের অধিক। এছাড়া উপকুলীয় জেলাগুলোতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যা পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠন এবং অন্যান্য গবেষণায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের সংখ্যা আরও অনেক বেশী বলে তারা দাবী করে আসছেন। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দাবী হলো-সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য জরিপ পরিচালনা করে প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকা একটি অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। তবে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান পেশা এখনও কৃষি। যাদের ভূমি আছে তারা কৃষি উৎপাদনের সাথে যুক্ত, আর যারা ভূমিহীন তারা মূলত কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে। কেউ কেউ পশুপালন, বাঁশ-বেতের কাজ ও মাছচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের জীবিকায়নেও বৈচিত্র্যের ছোঁয়া লেগেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাধারণত গ্রামের প্রান্তে, মূলভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে। কারণ- প্রায়শই তারা খাস বা অন্যের জমিতে বসবাস করতে বাধ্য হয়। যারা পূর্বপুুরুষের জমিতে বসবাস করছেন বলে দাবী করেন তাদেরও বেশীর ভাগেরই উপযুক্ত দলিলাদি নেই।

সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যেহেতু পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মতো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করে না তাই তাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়াও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যার অনিবার্য ফল হিসেবে দেখা যায়- সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে তেমন কোথাও প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না। জাতীয় সংসদসহ কোথাও তাদের পক্ষের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে।

যাহোক, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই যে পশ্চাৎপদতার অনেকগুলো কারণ উপরে বর্ণিত হয়েছে। এখন এইরকম একটি বাস্তবতায় আমরা দেশে এসডিজি বাস্তবায়ন করছি। সরকার বলছে- কাউকে পিছিয়ে রেখে নয় বরং সবাইকে সাথে নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু এই যে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী তারা কীভাবে এগিয়ে আসবে? কিভাবে তাদের এগিয়ে নেয়া হবে? আমরা যদ্দুর জানি-সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য মূলত উদ্যোগ নেবে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে। সরকারের ভাষ্যমতে, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তার প্রতিফলন রয়েছে। কিন্তু সরকারের আন্তরিক ইচ্ছা এবং কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেই কী পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে আসা নিশ্চিত হবে?

না, হবে না। কারণ– বাংলাদেশের সরকার তার সকল জাতীয় ও আন্তজার্তিক অঙ্গীকারে কোনো বৈষম্যকে উৎসাহিত না করলেও বৈষম্য কিন্তু থেমে থাকেনি বরং মানুষে মানুষে তৈরী হয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। দেশের একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ কেনো এখনও উন্নয়নের মহাসড়কে উঠতে পারলো না? এখানে প্রসঙ্গক্রমে দেখে নেয়া যাক রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অঙ্গীকারগুলো–

সংবিধানের ২৬-৪৭ ধারাসমূহে মানুষের মৌলিক অধিকার বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। শুরুতে অর্থাৎ ২৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,“এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে” এবং ২৬(২)-এ বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য কোন আইন প্রণয়ণ করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে(১২)।” পরবর্তী অনুচ্ছেদগুলোয় মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির সার্বিক অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোন প্রকার ধর্মীয়, বর্ণগত, গোষ্ঠীভিত্তিক, লিঙ্গভিত্তিক, জন্মভিত্তিক ইত্যাকার বৈষম্য প্রদর্শন করার কোন সুযোগ নেই।

এছাড়া ২৭, ২৮ (১) এবং ২৯ (১) ও (২) অনুচ্ছেদেও একই কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র ১৯৪৮-এর প্রথম ধারায় বলা হয়েছে, “সকল মানুষই (শৃঙ্খলহীন) স্বাধীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা সকলেই বুদ্ধি ও বিবেকের অধিকারী।” আর, দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে, “যেকোন প্রকার পার্থক্য, যেমন জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্মতি, জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে সকলেই উল্লিখিত সকল অধিকারের অংশীদার। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তিপত্র-১৯৬৬-এর ধারা ২ এ বলা হয়েছে- চুক্তিপত্র সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ নিশ্চয়তা সাপেক্ষে অঙ্গীকার করছে যে, বর্তমান চুক্তিপত্রে উচ্চারিত অধিকারসমূহ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক অথবা অন্য মতাদর্শ, জাতীয় ও সামাজিক উৎস, সম্পদ, জন্মগত ও অন্যান্য অবস্থানগত কারণ নির্বিশেষে কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই অনুশীলিত হবে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন-১৯৬৬ এর ধারা-২ এ বলা হয়েছে-

এ চুক্তির প্রত্যেক রাষ্ট্রপক্ষ বর্তমান চুক্তিপত্রে স্বীকৃত অধিকারসমূহ সকলের জন্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এক্ষেত্রে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক অথবা অন্য মতাদর্শ, জাতীয় ও সামাজিক উৎস, সম্পদ, জন্মগত ও অন্যান্য অবস্থানগত কারণ নির্বিশেষে কোন রকম পার্থক্য থাকবে না।

এতসব অঙ্গীকার থেকে এটা বলা যায় যে, সংবিধান, আইন ও আন্তর্জাতিক দলিলসমূহ প্রণয়নের সাথে যারা যুক্ত এবং যে রাষ্ট্রপক্ষ এগুলোতে স্বাক্ষর করেছে তারা মানুষে মানুষে সমতার নীতিরই প্রতিধ্বনি করেছেন। তারা অন্তত কাগজে-কলমে কোথাও বৈষম্য, বঞ্চনা বা বিভেদের ভেদবুদ্ধিকে প্রশ্রয় দেননি। কিন্তু এতসব অঙ্গীকার সত্ত্বেও এবং বিগত দুইদশক ধরে চলমান ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার ফলে অর্জিত ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও, মাথাপিছু আয়ের সীমা দেড়হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেলেও এখনও ২০.৫% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে। যার মধ্যে ১০.৫% চরম দরিদ্র অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। আর এই দরিদ্র্য ও চরম দরিদ্র মানুষের মধ্যে যারা পড়েন তাদের মধ্যে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অন্যতম।

উপরোক্ত বাস্তবতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে প্রয়োজন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসডিজি-কে দেখা। কারণ অভিষ্টগুলো একটি সমতার পৃথিবী তৈরীর জন্যই গৃহিত হয়েছে। আমরা যদি অভীষ্টগুলো পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো যে এর প্রায় সবগুলোই সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য। যেমন-অভীষ্ট-১. দারিদ্র্য বিমোচন, অভীষ্ট- ২. ক্ষুধা মুক্তি (তারা দরিদ্র বলেই ক্ষুধার মধ্যে বসবাস করে), সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে একরকম বঞ্চিতই বলা যায় (অভীষ্ট-৩. সুস্বাস্থ্য), শিক্ষা ক্ষেত্রে তারা এখনও অনেক পিছিয়ে (অভীষ্ট-৪. মানসম্মত শিক্ষা), তারা সুপেয় পানি ও পয়:নিস্কাষনের মারাত্মক সংকটে দিন কাটায় বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে (অভীষ্ট-৬. সুপেয় পানি ও পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা), সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গতানুগতিক কৃষিকাজের সাথেই এখনও জড়িত তারা কর্মবৈচিত্র্য তৈরী করতে পারছে না (অভীষ্ট-৮. কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি), তাদের জীবন তো বৈষম্যে পূর্ণ। তারা এখনকার দিনেও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে (অভীষ্ট-১০. বৈষম্য হ্রাস)। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তাদের প্রতি অত্যন্ত ব্যাপক (অভীষ্ট-১৩. জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ), তাদের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই (অভিষ্ট-১৬. শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান)।

এই যে বাস্তবতা এবং উন্নয়ন অভীষ্ট-সেগুলো কী গতানুগতিক আর দশটা উন্নয়ন পরিকল্পনার মতো বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে? উত্তর এক কথায়-না। এর জন্য প্রয়োজন হবে অধিকারের বাণীকে উর্ধ্বে তুলে ধরা যার অন্যতম চালিকা শক্তি হতে পারে সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা। স্থানীয়ভাবে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন বঞ্চিত মানুষের অধিকারকে জাগিয়ে তোলা। যাতে করে তারা সংগঠিত হয়ে যৌথভাবে আওয়াজ তুলতে পারে। আর এর মাধ্যমে সুশাসনের পূর্বশর্ত তথা স্বচ্ছতা, জাবাবদিহিতা, আইনের শাসন, সমঅংশগ্রহণের ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। এসজিডির যে মৌলিক সুর- “কাউকে পেছনে রেখে নয়” তা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু করা। আর এর জন্য সবগুলো অভীষ্ট যেমন দরকার তেমনি অভীষ্ট-১৬: শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবী উত্থাপন হতে পারে এক্ষেত্রে মুক্তির অন্যতম একটি পথ। এসডিজির লক্ষ্য ও সূচকের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে এটি সমস্যার মূলে গিয়ে আঘাত করতে চায়, সনাতনি চিন্তার খোল-নলচে পাল্টে দিয়ে সবচাইতে দুর্দশাগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর দ্বারপ্রান্তে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে চায়। এবং এই চলমান উন্নয়ন উদ্যোগে যারা পিছিয়ে আছে বা নানা মাত্রায় বৈষম্য ভোগ করছে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে চায় যাতে সবাই এককাতারে এসে উন্নয়নের ফসল ভোগ করতে পারে। তার জন্য বিদ্যমান নানাবিধ বৈষম্যকে রোধ করাও এসডিজি’র অন্যতম লক্ষ্য।

এসডিজি অর্জনে সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের আলোকে একটি অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা গ্রহণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের সূচনা করতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে-

সরকারের তরফ থেকে করনীয়:

১. সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পশ্চাৎপদতাকে চিন্তায় নিয়ে এবং তাদের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো (institutional mechanisms) তৈরী করা, যাতে করে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

২. সরকারি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ উদ্যোগ ও নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মূলস্রোতধারার মানুষের সাথে এক কাতারে সামিল হতে পারে।

৩. স্থানীয় সরকার ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এগিয়ে নিতে বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। যাতে করে যারা ক্ষমতাকাঠামোয় যুক্ত হয়ে নিজেদের দাবী-দাওয়াগুলো তুলে ধরতে পারে।

বেসরকারি/এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে করনীয়:

১. সরকারের পাশাপাশি সহযোগী ভূমিকায় এনজিওরা বিশেষ দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ফলে তারা নতুন নতুন উদ্ধাবনী কাজের নজির সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য এগিয়ে আসতে পারে। সেটা হতে পারে ব্যবস্থাপনাগত অথবা অন্য কিছু।

২. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংগঠিত করা একটি বড় কাজ। যে সকল এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস সেখানে স্থানীয় কমিউিনিটি ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলা এবং তাদের ক্যাপাসিটি তৈরী করা একটি অন্যতম অগ্রাধিকার হতে পারে।

৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর জন্য হালনাগাদ তথ্য প্রদান একটি অন্যতম কাজ। তারা যদি সরকারি-বেসরকারি সেবাসমূহ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পায় তার জন্য এনজিও কাজ করতে পারে।

তথ্যসূত্র:

১. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত ‘‘সমতলের ক্ষুদ্র–নৃগোষ্ঠীর জন্য গৃহিত উন্নয়ন কর্মসূচি” ব্রশিউর

২. Plainland Indigenous People of Bangladesh: Development Towards Dending Poverty-Dr. Mostafizur Rahman

৩. Survival on the fringe: Adibashis of Bangladesh- SEHD

৪. স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন ইএসডিও, আরকো, সার্প ও জিবিকে কর্তৃক বাস্তবায়িত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিবেদন।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন