মেধাবী ও কৃতি ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল

ndicia24

সেপ্টে ২৭, ২০২১ | সফল যারা

Ended soon

অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। দেশের মেধাবী ও কৃতি ব্যক্তিত্ব। শিক্ষাক্ষেত্রের সকল স্থরে অসামান্য কৃতিত্ব ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। যেখানে কোনো ব্যক্তির কমনওয়েলথ স্কলারশীপ অর্জনকে বিরল কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়; সেখানে জহিরুল হক শাকিল দু’ দু’বার সেই স্কলারশীপ অর্জন করেছেন। ২০০৯ সালে মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করার জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোনো গ্র্যাজুয়েট হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকার প্রদত্ত কমনওয়েলথ স্কলারশীপ পান। ২০১০ সালে এই স্কলারশীপের অধীনে ইংল্যান্ডের লিডস মেটের স্কুল অব এল্পাইড গ্লোবাল ইথিক্স এর পিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে মেরিটসহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১০ সালের অক্টোবরে ফিরে পুনরায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে ২০১২ সালে আবারো কমনওয়েলথ স্কলারশীপ অর্জন করেন পিএইচডি গবেষণা সম্পাদনের জন্য। দু’দুবার কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করা কেবল বাংলাদেশে নয়; কমনওয়েলথের ইতিহাসে বিরল। পিএইচডি গবেষণার অংশ হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ আয়োজিত কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও ওয়ার্কশপে লেকচার প্রদান করেন। আর, কোনো কারেকশন ছাড়া ২০১৮ সালে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ এর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ হতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান তথা যুক্তরাজ্য থেকে কোনো ধরণের সংশোধন ছাড়া পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন আরেক বিরল কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘মারজিনালাইজেশন এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিগ্রেডেশন: দ্য কেস অব বাংলাদেশ।’ তার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন সোয়াসের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক, সেন্টার ফর ওয়াটার এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট সেন্টার এর ডিরেক্টর ড. পিটার পি মলিঙ্গা। সহ-তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন সোয়াস’র ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ড. লরা হেম্মান্ড এবং একই প্রতিষ্ঠানের ফোর্সড মাইগ্রেশনের সিনিয়র লেকচারার ড. তানিয়া কায়সার।

ড. জহিরুল হক শাকিল শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৯৩ সালে শহরের জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল থেকে স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ১৯৯৫ সালে বৃন্দাবন সরকারী কলেজ এর মানবিক বিভাগ থেকে হবিগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তি হন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স বিভাগে। সেখানে তিনি বিরল ফলাফল করেন। যা আজ অবধি রেকর্ড হয়ে আছে। তিনি বিএসএস অনার্সে ডিস্টিংশনসহ সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করেন। তার সিজিপিএ শুধু পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স বিভাগে নয়; সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ছিল। এজন্য তিনি চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল বা প্রেসিডেন্ট পদক, ভাইস- চ্যান্সেলর মেডেল ও ইউনিভার্সিটি বুক মেডেল অর্জন করেন। একই বিভাগ থেকে মাস্টার্স লেভেলেও ডিস্টিংশনসহ বিভাগ ও অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করেন। এজন্য তিনি ভাইস- চ্যান্সেলর মেডেল ও ইউনিভার্সিটি বুক মেডেলে সম্মানিত হন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এওয়ার্ড লাভ করেন। বাংলাদেশে অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পর্যায়ে ডিস্টিংশন অর্জন খুবই বিরল। এছাড়া জহিরুল হক শাকিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেমিস্টার পরীক্ষায় প্রথম ব্যতিরেকে দ্বিতীয় হননি। ২০০২ সালে তিনি সিলেটের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান ও ২০০৬ সালে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১৪ সালে পদোন্নতি পান সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে। আর ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট থেকে তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক।

জহিরুল হক শাকিল ছাত্রজীবনে খেলাধুলা, সংস্কৃতি, স্কাউটিং ও বিএনসিসিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি জে কে এন্ড এইচ কে হাই স্কুল স্কাউটদলের লিডার, সরকারী বৃন্দাবন কলেজের সিনিয়র রোভারমেট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডট কোর সরকারী বৃন্দাবন কলেজ প্লাটুনের ক্যাডেট ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে চতুর্দশ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশে জে কে এন্ড এইচ কে হাই স্কুল স্কাউট দলের ও ১৯৯৫ সালে চতুর্দশ জাতীয় রোভার মুটে সরকারী বৃন্দাবন কলেজ রোভার দলের নেতৃত্ব দেন। কমনওয়েলথ স্কলারশীপ এলামনাই এসোসিয়েশন ইউকে ও লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্য জহিরুল হক শাকিল হবিগঞ্জ জীবন সংকেত নাট্যগোষ্ঠীর নির্বাহী সদস্য, সিলেট সন্ধানী নাট্যচক্র ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনেস্কো ক্লাব ইন বাংলাদেশ এর হবিগঞ্জ জেলা শাখার প্রেসিডেন্ট ও হবিগঞ্জ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক খোয়াই’র সাবেক স্টাফ রিপোর্টার জহিরুল হক শাকিল বর্তমানে পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেটস্থ হবিগঞ্জ সমিতি, হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি, হবিগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশন, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি, হবিগঞ্জ নজরুল একাডেমীর আজীবন সদস্য। এছাড়া তিনি হবিগঞ্জ ইউনেস্কো ক্লাবের সভাপতি, বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বর্ণমালা খেলাঘর আসরের সদস্য ।

বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের একজন সংগঠক জহিরুল হক শাকিল ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যাগে এবং সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সিলেটের পরিবেশ’ শীর্ষক জাতীয় কনভেনশনের সদস্য সচিব ছিলেন। তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের ঘোষণাপত্র সিলেটের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও বিপন্ন পরিবেশ রক্ষায় একটি রূপরেখা হিসেবে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি সিলেট তথা হবিগঞ্জ জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক জনমত গঠন করেন ও সাংগঠনিক তৎপরতা চালান। যুক্তরাজ্যে সিলেট বিভাগ তথা বাংলাদেশের নদ-নদী ও পরিবেশ রক্ষায় একটি প্লাটফর্ম তৈরীতে লন্ডন ওয়াটার কিপার এলায়েন্স ইউএসএ, ওয়াটার কিপার ও বাংলাদেশ ওয়াটার কিপার এর সাথে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্থানগর আবাসিক এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষক, হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জবরু মিয়া ও গৃহিনী আলহাজ্ব মোছাঃ রাবেয়া খাতুনের প্রথম সন্তান ড. জহিরুল হক শাকিল। ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে সবার বড় জহিরুল হক শাকিলের ছোট বোন আফিয়া খাতুন হবিগঞ্জ আলেয়া জাহির কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক, ছোট ভাই মোঃ ছায়েদুল হক ঢাকা ভাসানটেক সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ও অপর ছোটভাই মোঃ নূরুল হক কবির দৈনিক খোয়াই পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। তার স্ত্রী তাজমিনা সুলতানা লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে বিএসসি ও সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং এ এমবিএ ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাজমিনা সুলতানা সিলেটের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ই-কমার্সের সাথে জড়িত।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন