ডলুরা শহিদদের সমাধি সৌধ (পর্ব 0৫)

চৌধুরী আব্দুল হাই
উন্নয়নকর্মী ও লেখক

ফেব্রু ১৫, ২০২৪ | ইতিহাস ও ঐতিহ‌্য

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বিছিন্নভাবে শহীদ হন ৪৮ মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরায় হিন্দু-মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করা হয়। গড়ে উঠে ৪৮ শহীদের স্মৃতি সমাধি সৌধ। ডলুরা শহীদের সমাধি সৌধটি একটি ঐতিহাসিক স্থান যেখানে গেলে মুহুর্তেই ৪৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় অন্তত চোখে ভাসে।

ডলুরা সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত, মেঘালয় সীমান্তবর্তী গারো আদিবাসী-অধ্যুষিত একটি গ্রাম। পাহাড়ের পাদদেশে চলতি নদীর তীরে লুকায়িত আছে সেই একাত্তরের রক্তত্যাগ সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জে ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সীমান্তবর্তী ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জের অন্যতম রণাংগন। এই রণাংগনটি ছিল ৪নং বালাট সেক্টরের অধীন। উক্ত রণাংগনে সম্মুখ সমরে যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন তাদের কয়েকজনকে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে ৪৮ জন শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ডলুরা শহীদ মাজার। ১৯৭১ সালে স্থানীয় মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি টাস্ট্র শহীদদের সমাধিগুলোর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। সব শহীদের নাম মার্বেল পাথরে খোদাই করে প্রতিটি কবরে পিলার বসানো হয়। ৪৮ সমাধির মধ্যে ৬ হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার সমাধি। ডলুরা একটি পাহাড় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। সুনামগঞ্জের ষোলঘরে ছিল হানাদার বাহিনীদের অবস্থান। উভয়ের মধ্যে অনেক সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে সব শহীদদের কবর দিতেন মধু মিয়া। জানাজা পড়াতেন মুন্সি তারু মিয়া। হিন্দু মুক্তিযোদ্ধাদের দাহ করতেন খেপু ঠাকুর। স্থানীয় সুমা আক্তার জানান, ৪৮ স্মৃতি সমাধি সৌধ দেখতে সারা দেশ থেকে দর্শনাথী আসেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, অনেকেই এই সমাধিতে প্রিয়জনের সন্ধান পেয়েছে। অনেকে সমাধিগুলো দেখতে আসে। এই সমাধি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করবে। অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের।

যেভাবে যাবেনঃ   

সুনামগঞ্জ শহরের নবীনগর নামক স্থান থেকে সুরমা নদী খেয়া যোগে পার হয়ে। হালুয়ারঘাট থেকে অথবা শহরের বালু মাঠ নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা যোগে হালুয়াঘাট থেকে রিক্সা অথবা টেম্পু যোগে ৫/৬ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি ডলুরা নামক স্থানে পৌছতে হয়। রিক্সাভাড়া ৫০ টাকা, টেম্পু ভাড়া ২০ টাকা।

যা কিছু দেখতে পাবেনঃ

ডলুরা যাওয়ার পথে নারায়নতলায় সাধু টমার্সের গির্জা নামে পরিচিত খিষ্ট্রান মিশনারী কতৃক পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া ডলুরা গ্রামের পাশে দিয়ে বয়ে চলা প্রবাহমান নদীর অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণকারীদের মোহিত করে, ডলুরা গ্রামের প্রকৃতির দৃশ্য নজরকারার মতো দৃশ্য। প্রবাহমান নদীর তীরের বালুকাময় প্রান্তর দেখে সাগরের বেলাভূমি বলে মনে হয়।

সংলগ্ন দর্শনীয় এলাকাসমূহঃ

সুনামগঞ্জ জেলা ভৌগোলিকভাবেই বৈচিত্রপূর্ণ। ডলুরা শহিদ মিনার, হাসন রাজা মিউজিয়াম ছাড়াও রয়েছে দেখার মতো অনেক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান । এদের মধ্যে অন্যতম হলো টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা ও শিমুল বাগান।

খাওয়া দাওয়াঃ

সুনামগঞ্জে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ উন্নতমানের হোটেল একটু কমই আছে। তবে মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল আপনারা পাবেন যেমনঃ হোটেল শামিমাবাদ, পাচঁ ভাই, হোটেল জনতা, হোটেল রাজ প্রভৃতি অন্যতম। এই হোটেলগুলোতেও ভালো মানের খাবার পাবেন।

থাকা ও রাত্রি যাপনের স্থানঃ

সুনামগঞ্জে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস ও মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে, যেখানে ৩০০ থেকে ১৫,০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাওয়া যায়। এসব হোটেলের মধ্যে রয়েছে –

হোটেল নূর: পূর্ববাজার, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫২২৫, মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-৬৩০ ৮৮৭;

হোটেল সারপিনিয়া: জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫২৭৮;

হোটেল নূরানী: পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫৩৪৬, মোবাইল: ০১১৯৬-১৪২ ৯৩৯;

হোটেল মিজান: পূর্ববাজার, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫৬৪০।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন