শেফ হিসেবে যেভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন

ndicia24

মে ২২, ২০২২ | জীবন গড়ি

Ended soon

বর্তমান যুগে প্রায় বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীরা শিক্ষাজীবন শেষেই তাদের নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়। আর ক্যারিয়ার বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সেই পেশায় চাকরির নিশ্চয়তা। আরো অনেক সুবিধা বিবেচনা করেই বর্তমানে শেফ পেশাটি চলে এসেছে মানুষের আলোচনার শীর্ষে। আজকে আমরা জানবো, কীভাবে আপনি একজন শেফ হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

কেন আসবেন এই পেশায়?

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলাতেই গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, মোটেল ও ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট। একই সঙ্গে বাড়ছে দক্ষ শেফের চাহিদা। তাছাড়া বাংলাদেশী খাবার সবসময়ই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশী শেফরা দেশি, বিদেশি, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের খাবার রান্না করা শিখে দেশের বাইরেও কাজ করছেন। আর সেসব দেশে বাংলাদেশি কুক বা শেফদের চাহিদাও রয়েছে। একজন শেফ বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ছাড়াও চাকরি পেতে পারেন বিভিন্ন এয়ার লাইন্স কোম্পানি, ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্সির কুক বিভাগে।

এই পেশায় আয় কেমন?

প্রতিষ্ঠান, কাজ ও অভিজ্ঞতাভেদে বেতন কাঠামোতে পার্থক্য হয়। চাকরির শুরুতে একজন শেফের বেতন হয়ে থাকে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। অভিজ্ঞদের বেতন সর্বোচ্চ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্তও হয়। দেশের বাইরে কাজের ধরন বুঝে পর্যাপ্ত বেতন ও ভাতা দেয়া হয়। আবার অনেক শেফরা নিজেরাই নিজেদের রেস্টুরেন্ট চালু করে থাকেন।

কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন এই পেশায়?

এইচএসসি পাস করার পর হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর অনার্স কোর্স করে এই পেশায় আসা যায়।  তাছাড়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশনের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেও এই পেশায় আসা যায়। ইংরেজি ভাষার উপরে ভালো দক্ষতা থাকলে এই পেশায় সহজেই সফল হওয়া সম্ভব। আপনি এসএসসি বা এইচএসসির পরেই যেকোনো শেফ কোর্স করে শেফ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। বাংলাদেশের শেফ হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্যে মূলত কোনো বিশেষ ডিগ্রির প্রয়োজন পড়ে না।

শেফ হওয়ার প্রশিক্ষণ কোথায় নেবেন?

হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের একটি অংশ হচ্ছে শেফ বা কুক। এছাড়াও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। এই কোর্স থেকে আপনি বাংলাদেশি, চায়নিজ, ইটালিয়ান, ইউরোপিয়ান ও ইন্ডিয়ান খাবার তৈরির প্রণালী, ডেকোরেশন, হাইজিন এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোর্সগুলো দুই মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রফেশনাল শেফ কোর্স নামের ডিপ্লোমা কোর্সটি করেও নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন।

তাছাড়া বর্তমানে বেসরকারিভাবে অনেক রেস্টুরেন্ট ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের শেফ কোর্স করাচ্ছে। এমনকি তারা কোর্স সমাপ্তির পর দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। যদিও ওসবের মধ্যে অনেকগুলো কোর্সই লোক ঠকানো ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সবদিক চিন্তা ভাবনা করে তারপরে কোনো প্রতিষ্ঠানের কোর্সে ভর্তি হোন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শেফের কোর্স করতে পারবেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (মহাখালী), বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (গ্রিনরোড), ইন্সটিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট (ধানমণ্ডি), বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (ধানমণ্ডি), রাজমণি ঈশা খাঁ হোটেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং কোর্স (কাকরাইল) ইত্যাদি।

এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা অনেক প্রতিষ্ঠানেও সরকারিভাবে শেফ কোর্স করতে পারবেন। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলেও আজকাল শেফ কোর্স করানো হয়। সেগুলোতেও চাইলে ভর্তি হতে পারবেন।

শেফ কোর্স করার জন্যে সম্ভাব্য কত খরচ হতে পারে?

দুই মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্সের সম্ভাব্য খরচ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্স সম্পন্ন করতে পারবেন ৫ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। আর ডিপ্লোমা ইন প্রোফেশনাল শেফ কোর্সের সম্ভাব্য খরচ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।

যারা বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেফ কোর্স করতে চান, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো কোর্সের সম্ভাব্য খরচ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে, কোর্সের সাথে ভিসার খরচ এবং ভাষা প্রশিক্ষণের খরচও যুক্ত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিভিন্ন শেফ কোর্সের ফি কিস্তিতে দেয়া যায়। অর্থ সমস্যায় থাকলে সেসকল প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করতে পারেন।

শেফ পেশার ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা ?

শেফদের চাহিদা বর্তমানে তুঙ্গে। কারণ দেশের পাঁচতারা রেস্টুরেন্টগুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোটোখাটো রেস্টুরেন্টেও এখন বাবুর্চির বদলে শেফ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এইসব জায়গায় কিছুদিন পরপরই শেফদের সংকট দেখা যায়। আর শেফ হিসেবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগের কথা তো আমরা সবাই জানি। দেশের বাইরে ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানিসহ আরো অনেক দেশেই বর্তমানে বাংলাদেশি শেফরা কাজ করছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে শেফ হতে পারলে দেশেও চাকরির জন্য খুব বেশি একটা কষ্ট করতে হয় না। একইসাথে প্রশিক্ষণ চলাকালীন অবস্থায় ইন্টার্নি করারও সুযোগ থাকে। প্রায় সময়েই দেখা যায়, যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানেই ভালো পদে কাজ পেয়ে যান অনেকেই। তাছাড়া ইন্টার্নির সুযোগকে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা হিসেবে ব্যবহার করে দেশে ও বিদেশে নিজের একটি ভালো অবস্থান তৈরি করা যায়।

তবে মনে রাখবেন, এই পেশায় কাজের মানের প্রশ্নে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আপনি কতদূর শিখলেন, কতটুকু জানেন, আপনার রান্না ও পরিবেশনায় মানুষকে কতটুকু মুগ্ধ করতে পারছেন, এগুলোর ওপরেই নির্ভর করবে এই পেশায় আপনার ভবিষ্যৎ।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন