দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে হ্যান্ডিক্রাফট

ndicia24

এপ্রি ২৬, ২০২২ | সমসাময়িক

Ended soon

দেশজ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো হ্যান্ডিক্রাফট। বাংলাদেশে হ্যান্ডিক্রাফট এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই খুব জনপ্রিয়। তবে এর চাহিদা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও পৌঁছে গেছে। দিন দিন দেশ থেকে এ পণ্য রপ্তানি বাড়ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, চার বছর ধরে হস্তশিল্পের রপ্তানি বেড়েছে অনেক। বিগত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বা ২৪১ কোটি টাকার হস্তশিল্প রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। করোনার কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিড়াট আংশ এখাতের সাথে জড়িত রয়েছে এবং তাঁদের বিকল্প জীবিকায়নের একটি সুন্দর খাত হলো হ্যান্ডিক্রাফট।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ৫০টির বেশি দেশে হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি হয়। সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে পাটের তৈরি পণ্য, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন ধরণের বাস্কেট, ফ্লোর কাভারিংয়ের ম্যাট বা কার্পেট, নকশি কাঁথা ও নকশি বেডশিট এবং পুনপক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি কিছু পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের দেশের হ্যান্ডিক্রাফট একটি ভাল বাজার সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চায়না, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডেরমত দেশগুলো যারা হ্যান্ডিক্রাফট উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তারা এখন হাইটেক ইন্ড্রাস্ট্রির দিকে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করার সুযোগ আছে। আগের এসব পণ্যের ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতো না, এখন তারা বাংলাদেশে আসছেন বলেও জানা গেছে।

হ্যান্ডি ক্রাফট উন্নয়ন নিয়ে ভিডিওতে জানতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ ক্রাফট অ্যান্ড গিফটওয়্যার এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ হ্যান্ডিক্রাফট খাতের সঙ্গে জড়িত। অনেক জনবলের এ খাতের বিষয়ে আমাদের দেশে কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে এ বিষয়ে কোন গবেষণাও হচ্ছে না। এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডিজাইনার, উদ্ভাবক ও উদ্ভাবনের প্রয়োজন। এ খাতে বড় কোনো ধরণের বিনিয়োগ করা লাগে না। এছাড়া বড় ধরণের মেশিনেরও দরকার হয় না। তাই আমাদের যে জনশক্তি আছে তাকে কাজে লাগিয়ে এ খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর পরিমাণে হ্যান্ডিক্রাফট বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তবে এ খাতের চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো, দেশে এ খাতের কাঁচামাল প্রচুর আছে তারপরও কিছু কাঁচামালের অভাব রয়েছে। সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় তা বিদেশ থেকে আমদানিও করা যাচ্ছে না। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে যে ধরণের পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করার জন্য আমাদের দেশে পেশাদারী কোন ডিজাইনার নেই। কোন পণ্যের সঙ্গে কোন রং যাবে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়ার জন্য পেশাদারী কেউ নেই। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্য পরিচিত করার জন্য যে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সে ধরণের উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে।

হস্তশিল্প রপ্তানিতে দীর্ঘদিন ধরে ১৫-২০ শতাংশ নগদ সহায়তা বিদ্যমান ছিল। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সেটি কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এখন আবার সেটি ২০ শতাংশে উন্নীত এবং তা ২০২৫ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাক্রাফট। তাদের যুক্তি, হস্তশিল্পজাত পণ্য দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন করা হয়। আর কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সরাসরি জড়িত। সব মিলিয়ে হস্তশিল্পে মূল্য সংযোজনের হার শতভাগ। তাই বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তা দরকার।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন