Ended soon
প্রাণিকুল ও উদ্ভিদজগৎ (Flora and Fauna):
কেপ টাউনের প্রাণিকুল ও উদ্ভিদজগৎ খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ সময়ে আমরা পেংগুইন সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বিচিত্র্য ফুল ও বৃক্ষরাজি অবলোকন করি। মাথা উচু করে বীরদর্পে দন্ডায়মান সদাজাগ্রত বিশালাকৃতির ও বহু বিস্তৃত শৈল পর্বত, যার তীরভূমি মিশে গেছে মহাসাগরে। পর্বতের কোল ঘেষে ও পাদদেশে প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য। আফ্রিকান পেংগুইনের প্রধান আবাসভূমি এই কেপ টাউন। প্রোটিয়া ও ইরিকেটস ফুল প্রস্ফুটিত হয়, ভ্রমর গুঞ্জরিয়া সুমিষ্ট মধু সংগ্রহ করে। তাছাড়া উপকূল জুড়ে জেব্রা ও সমুদ্রে সীল, ডলফিন ও তিমির অবগাহন মন জুড়িয়ে যায়। সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় আইন কঠোর ভাবে প্রযোজ্য। Chacma baboons, বড় আকারের বানর কেপ-এ আসা পর্যটকদের বড় আকর্ষণ। এক সময় কালো কেশর সিংহ এখানে দেখা যেতো। অষ্ট্রিচের রাজসিক আনাগোনাও কেপ এলাকায় দৃশ্যমান।
Cape Floristic Kingdom হচ্ছে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ পৃথিবীর ৬ষ্ঠ উদ্ভিদ সম্রাজ্য। কেপের উদ্ভিদ রাজ্যে রয়েছে ১১,০০০ ধরণের বর্ণিল অনির্বচনীয় সৌন্দর্যময় উদ্ভিদ, সুবাসিত পুষ্পপত্র পল্লবিত বৃক্ষ। কিং প্রোটিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ফুল। ৮১ ধরণের কিং প্রোটিয়া রয়েছে। ফুলের রং ও পাঁতার বিভিন্ন বিচিত্র্য দৃষ্টিও মনকে নাড়া দিয়ে যায়। তাছাড়া রয়েছে কসমস, বারবেরটন, ডেইজি, ব্লাড লিলি, ডে ওয়াটার লিলি, ডেভিল থন, গাজানিয়া, ইমপালা, লিলি, কুডু লিলি ইত্যাদি ফুলের চোখ ধাঁধানো বাহার। প্রোটিয়া সাধারণত গরম সময়ে জন্মে। ফুলে মধু থাকে যা ভ্রমর, মৌমাছি ও ছোট্ট পাখিদের আকর্ষণ করে। প্রোটিয়ার পাঁতা চা হিসেবে পান করা হয়। প্রোটিয়া নামটির নামকরণ হয়েছে গ্রীক দেবতা প্রোটিয়াসের নাম অনুসারে যিনি বহু রূপ ধারণ করতে পারতেন। প্রোটিয়াও বহু রূপ, বর্ণ ও পাঁতার একটি ফুল। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলকেও প্রোটিয়া বলা হয়। প্রোটিয়া ফুল গাছ সাধারণত ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
ধ্যানমগ্ন শৈল পর্বত, মহাসাগরে কলরোল, গাঙচিলের ঝাপাঝাপি:
কেপ টাউন মূলতঃ শিলাময় পর্বতের পাদদেশের বিস্তৃত শহর। পর্বত কেটে কেটে নির্মিত হয়েছে রাস্তা, বাড়িঘর, আবকাশ কেন্দ্র। সমুদ্র যেখানে শেষ, সেখানেই শিলাময় পর্বত। সমুদ্রের তীর ঘেষে পর্বতের কিছু অংশ কেটে নির্মিত হয়েছে রাস্তা। শত শত কিলোমিটার জুড়ে এই রাস্তা। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ রাজপথে গাড়ীতে চলতে চলতে সমুদ্রের গর্জন, গাঙচিলের সমুদ্রবক্ষে ঝাপাঝাপি দেখে, কখনও বা পেংগুয়িনের চিৎকার শুনে আর পর্বতের বিশালতা দেখে দেখে প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টির মাঝে খুঁজে পান এক অপার আনন্দ।
কেপ টাউনে ইসলাম, মসজিদ নির্মাণ ও মুসলিম কমিউনিটি:
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ শুক্রবার জুম্মাবার হওয়ায়, জুম্মার নামাজ আদায়ে শহরের নূরুল ইসলাম মসজিদে যাই এবং আমরা জুম্মার নামাজ আদায় করি। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্বিন ও অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে ভাব বিনিময় হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লক্ষ ৭৫ হাজার। আয়তন ১২.২ লক্ষ বর্গ কি.মি.। মুসলিম জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১.৩৬%। সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হলেও ইসলাম দ্রুত ধাবমান। মূলতঃ ইন্দোনেশিয়া, মালয়, ভারত থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া আলেম উলেমা যারা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাদেরকে আটক করে Cape এ অন্তরীণ করে রাখা হয়। তারাই ইসলামের সূত্রপাত করেন।
১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বাংলা, মালাবার কোষ্ট এবং মাদাগাস্কার থেকে দাস হিসেবে এবং রাজনৈতিক বিদ্রোহীদেরকে কেপ টাউনে জোড়পূর্বক আনা হয়। তাদের মধ্যে স্মরণীয় ইন্দোনেশিয়ার তিদোয়ের তুয়ান গুরু ইমাম আবদুল্লাহ কাদী আবদ আস সালাম (১৭১২-১৮০৭)। আবেদীন তাদিয়া যোশেফ, যিনি শেখ ইউসুফ (১৬২৯-১৬৯৯) নামে সমাধিক পরিচিত, তাকে ১৬৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কেপে নির্বাসনে আনা হয়। ইন্দোনেশিয়ার মাকাসারে তার জন্ম। এই ইসলামী চিন্তাবিদগণ কেপ টাউনে ইসলামের গোড়াপত্তন করেন। অনেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কারণ ইসলাম অশেতাঙ্গ, অখ্রিষ্টীয়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এবং মানুষে মানুষে সাম্যের পক্ষে সোচ্চার।
তিনশত বছর ধরে অন্যান্য কমিউনিটির সাথে কেপ টাউনে মুসলিমরা বসবাস করছে। ভাষা হিসাবে Afrikaans ব্যবহৃত হওয়ায় আন্ত:সম্পর্ক আরো দৃঢ় করছে। কেপ টাউন ছাড়াও নাতাল ও ট্রান্সভাল শহরে মুসলিমরা বসবাস করছে। ইসলাম চর্চার জন্য জামিয়াতুল উলেমা নিজামিয়া মুসলিম স্কুল কাজ করে যাচ্ছে। আইন ও পরামর্শ প্রতিষ্ঠান হিসাবে মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল, হালাল সার্টিফিকেশন, সাউথ আফ্রিকা হজ্জ ও উমরাহ কাউন্সিল ইসলামের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে মুসলিমরা জড়িত। ১৯৯৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আফ্রিকান মুসলিম পার্টি ও ইসলামি পার্টি অংশ নেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানরা প্রধানত সুন্নি, তবে কিছু শিয়া ও আহমদিয়া রয়েছে। ভারত থেকে অভিবাসী মুসলিমরা হানাফী মাজহাব অনুসরণ করে, মালয়, কিছু ভারতীয় ও পূর্ব আফ্রিকা থেকে আগতরা ইমাম শাফী (র:) এর মাজহাবের অনুসারী। আবদুল্লাহ ইবনে কাদবী আবদুস সালাম যিনি তুয়ান গুরু নামে পরিচিত ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্দোনেশিয়ার টারনেট দ্বীপের তিদোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তিদোরের রাজপুত্র। তার পূর্ব পুরুষরা রাসূলে করিম (স:) এর বংশধর। তাকে রাজবন্দী হিসাবে ৬ এপ্রিল, ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে কেপ-এ এনে রোভেন দ্বীপে বন্দী করে রাখে ডাচরা। তার সাথে ছিলেন আবদুল রউফ ও বদরুদ্দীন নূরুল ইমাম। ডাচদের বিরুদ্ধে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহের কারণে তাদেরকে সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় এনে আটক রাখা হয়। বন্দী অবস্থায় তিনি একজন কোরাআনের হাফেজ হিসেবে স্মৃতি থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ লিখেন। ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্সের উপর মারেফাতুন ইসলাম বইটি লেখেন ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে । তার লেখা পবিত্র কোরআন শরীফ কেপ টাউনে সংরক্ষিত আছে। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে রোভেন দ্বীপ থেকে মুক্তির পর কেপ টাউনের ডরপ স্ট্রীটে তিনি বসবাস শুরু করেন। একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মাদ্রাসা। ১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা কেপের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আউয়াল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মসজিদ। তিনি ছিলেন রোভেন দ্বীপের প্রথম রাজনৈতিক বন্দী এবং নেলসন ম্যান্ডেলা শেষ রাজনৈতিক বন্দি। এ কারণে নেলসন ম্যান্ডেলা তুয়ান গুরুর প্রতি সব সময়ই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে উপস্থিত হয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা রোভেন দ্বীপের প্রথম রাজনৈতিক বন্দি তুয়ান গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি ও ভাষা:
দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক নাম হচ্ছে Republic of South Africa. দাপ্তরিক ভাষা মোট ১১টি- ১) আফ্রিকানস ২) ইংরেজী ৩) সাউদার্ন নডিবেলি ৪) যোশা ৫) জুলু ৬) নর্দান সুথো ৭) সাউদার্ন সুথো ৮) সোয়ানা ৯) সোয়াতি ১০) ভেন্ডা ১১) সংগা
১৯৯৪ সালের পূর্বে দুটো দাপ্তরিক ভাষা ছিল ইংরেজী আর আফ্রিকানস। এ দুটো ভাষাই প্রধানত এখন ব্যবহৃত হয়। মুদ্রার নাম: সাউথ আফ্রিকানস রান্ড। অর্থ বছর: ১ এপ্রিল থেকে ৩১ শে মার্চ। কান্ট্রি গ্রুপ: উচ্চমধ্যম আয়ের অর্থনীতি। জনসংখ্যা: ৫৮,৭৭৫,০২২ জন (২০১৯ সনের হিসাব অনুযায়ী)। জিডিপি: ৩৫ তম (নমিনাল ২০১৯), ৩০ তম (পিপিপি ২০১৯)। জিডিপি প্রবৃদ্ধি: ১.৪%। জিডিপির আকার: ৩৫৮.৮৩ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয়: ৬,১০০ মার্কিন ডলার। দারিদ্র রেখার নীচে জনগোষ্ঠী: ৫৫.৫% ( বিশ্বব্যাংক ২০১৪ ), ১৬.৬% ( বিশ্বব্যাংক ২০১৬ ), ৫৭.১% দৈনিক আয় ৫.৬ মার্কিন ডলার নীচে। প্রধান শিল্প: প্লাটিনাম উৎপাদনে পৃথিবীর এক নম্বর দেশ, গোল্ড, ক্রোমিয়াম, অটোমোবাইল, মেটাল ও মেশিনারী, টেক্সটাইল, লোহা ও স্টীল, রসায়ন শিল্প, সার, খাদ্য, বাণিজ্য জাহাজ মেরামত ইত্যাদি। রপ্তানী: ১০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানী পণ্য: গোল্ড, ডায়মন্ড, কয়লা, আয়রণ, প্লাটিনাম, ফল, মদ, কৃষিপণ্য, মেশিনারী, ইকুইপমেন্ট। আফ্রিকা মহাদেশে নাইজেরিয়ার পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি শক্তিশালী। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখনো শেতাঙ্গরাই। ভারতের মিত্তাল গ্রুপ, টাটা গ্রুপ ডারবানে অটোমোবাইলসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা জি-২০ গ্রুপের একমাত্র আফ্রিকান সদস্য দেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী ও অ-আফ্রিকান অভিবাসী:
মানুষের জন্ম ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্ম একই ধরণের প্রাচীন। প্রত্নতাত্বিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে প্রথম মানুষ সৃষ্টির (hominids) জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকা। যিশু খ্রীষ্টের জন্মের দুই কিংবা তিন হাজার বছর পূর্বে খৈ খৈ জনগোষ্ঠী দক্ষিণ আফ্রিকার জনপদে একটি শিকার নির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। বিশ্বাস করা হয় যে বৎসোয়ানা, পশ্চিম জিম্বাবুয়ে থেকে এরা দক্ষিণ আফ্রিকায় আসে। ডাচরা সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কেপের টেবিল বে-তে যখন উপনিবেশ স্থাপন করে তখন তারা এই খৈ খৈ জনগোষ্ঠিকে Hotentots হিসাবে অভিহিত করে।
দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব দক্ষিণের দেশ। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার কৌশলগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। আর্টলান্টিক ও ভারত মহাসাগর দক্ষিণ আফ্রিকার সর্ব দক্ষিণের স্থান Cape Aghlhas এ মিলিত হয়েছে যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে পর্তুগীজ অভিযাত্রীরা সমুদ্রপথে ভারত ও দূর প্রাচ্যে আসার বিকল্প পথ খুজছিল। অটোমান তুর্কী সম্রাজ্যের অভ্যুত্থানে ভূমধ্যসাগর ও আরব পেনিনসুলায় চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন সমুদ্র পথ আবিষ্কার অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৮৮ সালে পর্তুগীজ ক্যাপ্টেন বার্থলোমো ডায়াস কেপের নামকরণ করে The Cape of Storns । পর্তুগীজদের আগমনের পর্যাপ্ত দৃষ্টান্ত না থাকলেও সেখানে পাথরের ক্রস (Padraos) বীচ রয়েছে যা খ্রীষ্টান বিশ্বাসের নজির। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সিস ড্রেক বিখ্যাত বিশ্বভ্রমণ শেষে কেপে অবতরণ করেন।
১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথ কতৃক ইংলিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সনদ প্রাপ্ত হয়। ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠিত হয়। এরপর পঞ্চাশ বছর ধরে পর্তুগীজদের পরিবর্তে ইংরেজ ও ডাচরা কেপের চারপাশের রুট ধরে সমুদ্র বাণিজ্যে তৎপর হয়। ইর্ষ্টান কেপ থেকে নাতাল বা ডারবান উপকূলে ১০০০ টি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকায় এই সমুদ্র পথ কত ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ছিল তা সহজেই বোঝা যায়।
১৮ শতকের শেষ দিকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশে দাস ব্যবসা দক্ষিণ আফ্রিকা কেন্দ্রিক ছিল। প্রায় পাঁচ লক্ষ দাস পূর্ব আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় ১৮০০ থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়। ১৬৫২ খ্রিষ্টাব্দে ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কেপে জাহাজ চলাচলের জন্য একটি দূর্গ গড়ে তোলেন। ডাচ কমান্ডার জন ভন রিবেক দূর্গ স্থাপন করে ফল, সবজির বাগান ও কৃষি খামার স্থাপনে উৎসাহী হয়। ১৫০ বছর ধরে ডাচ শাসন চলে। এ সময় ডাচ, খৈ খৈ, মালয়, যোশা, জুলু, পর্তুগীজ, ইংলিশ শব্দ নিয়ে আফ্রিকানস ভাষা দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে চালু হয়। এই ডাচদের উত্তরসূরীরা আফ্রিকানারাস হিসাবে পরিচিত হয়। ডাচ কতৃক নিযুক্ত খামারীরা অস্ত্র শস্ত্রের সহায়তায় উন্নত প্রযুক্তির আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে খৈ খৈ জনগোষ্ঠীর জমি, গবাদি পশু জোর পূর্বক দখল করে নেয়।
১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাজের জন্য মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ভারত মোজাম্বিক, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পূর্ব উপকূলের ভেলিগুয়া উপসাগর এবং জানজিবার থেকে দাস আমদানি করা হয়।
উত্তমাশা অন্তরীপের ক্যাসেল:
১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ডাচরা দূর্গের পরিবর্তে কেপ অব গুড হোপের ক্যাসেল নির্মাণ করেন। ১৩ বছর সময় ধরে ক্যাসেলটি র্নিমাণ করা হয়। মূল উদ্দেশ্য ইংরেজ বা অন্যান্য ইউরোপীয় জাতির আক্রমণ থেকে নতুন বসতিকে রক্ষা করা। এই ক্যাসেলটি উপনিবেশের প্রাচীনতম গূরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ১৯৩৬ সালে জাতীয় মনুমেন্ট হিসেবে ইহা স্বীকৃতি লাভ করে।
১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে কেপে বসতি গড়ার মধ্য দিয়েই কেপ টাউনের যাত্রা শুরু। এই ক্যাসেল থেকে কেপ টাউনের প্রশাসন পরিচালনা করা হতো। কেপ টাউনের প্রথম চারটি স্ট্রীট যথা ষ্ট্রান্ড ষ্ট্রীট, ক্যাসল ষ্ট্রীট, শর্ট মার্কেট ষ্ট্রীট, লং মার্কেট ষ্ট্রীট এখানো বিদ্যমান আছে। ক্যাসেলে হাজতীদের আটকে রেখে নির্যাতন করার জন্য ছিলো Dark Hole বা অন্ধকার কূপ। তখনকার আইন অনুযায়ী দোষ স্বীকার না করলে অপরাধীরা শাস্তি পেতনা, তাদেরকে নির্যাতন করার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়। ১৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে সেটেলমেন্টের কমান্ডার পদ পরিবর্তন করে গর্ভনর করা হয়।
(চলবে…)