রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি

ndicia24

অক্টো ২৪, ২০২২ | ইতিহাস ও ঐতিহ‌্য

Ended soon

একজন বাঙ্গালী হিসেবে বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আমাদের সবারি কম বা বেশি জানা আছে। সাহিত্য রচনাকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন এবং এসব স্থান সম্পর্কে আমরা খুব কমই খোজ খবর রাখি। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে দ্বারিয়াপুর গ্রামে অবস্থিত “রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি” এমনি একটি ঐতিহাসিক স্থান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪২ সালে ইংরেজদের কাছ থেকে প্রথম এই বাড়িটি কিনেছিলেন । এটি একটি দোতলা ভবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০ সালের দিকে প্রথম শাহজাদপুর এই কুঠিবাড়িতে আসেন এবং এখানেই রচনা করেছেন তার অনেক বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম। সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৪০.২ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর উপজেলায় রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি অবস্থিত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাবধারায় নির্মিত এই দ্বিতল সুরম্য অট্টালিকাটি করতোয়া নদীর একটি খালের উত্তর পাড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার এই কুঠিবাড়িটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে শাহজাদপুর অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালের দিকে কবি এখানে জমিদার হয়ে আসেন এবং ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন। শাহজাদপুরের জমিদারি ১৮৪০ সালে নিলামে উঠলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩ টাকা ১০ আনায় এই জমিদারি কিনে নিয়েছিলেন। এর আগে কাছারি বাড়ির মালিকানা ছিল নীলকরদের হাতে এবং এখনও সেখানে একটি নীলকুঠি রয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে বসে তার অনেক বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন, যেমন: সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুইপাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হৃদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি, গীতাঞ্জলী কাব্যের কাজও শুরু করেন। যার কারনে পরবর্তীতে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। পোস্ট মাস্টার গল্পের ‘রতন’ চরিত্রও শাহজাদপুরে বসেই তিনি লেখেন। চিত্রা, শীতে ও বসন্তে, নগর সঙ্গীতে এবং চৈত্রালীর ২৮টি কবিতা, ছিন্ন পত্রাবলীর ৩৮টি, পঞ্চভূতের অংশবিশেষ এবং ট্রাজেডি “বিসর্জন” নাটক তিনি শাহজাদপুরে বসেই রচনা করেছেন।

তিনি ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে অবস্থান করেছেন। প্রায় দশ বিঘা জমির উপর ইন্দো ইউরোপীয় ধাচে নির্মিত এই কাছারি বাড়িটি যা এখন জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছ। জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ১৬ টি কক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশব থেকে প্রবীণ সময়ের বিভিন্ন ছবি, ও ব্যবহৃত জিনিস সংরক্ষিত করা হয়েছে। যার ভিতরে রয়েছে কবির আঁকা অনেক ছবি ও আলোকচিত্র, বেহারার পালকি, স্পিডবোট, কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, পালংকসহ বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিস ও আসবাবপত্র। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এই ভবনের পরিমাপ ২৭ মি ১৪.২০ মি। উভয় তলায় ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মোট সাতটি কক্ষ রয়েছে। উপরে উঠার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম দিকে একটি করে দুটি সিঁড়ি অবস্থিত। বৃটিশ স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত এই ভবনটিতে পরবর্তীকালে কিছু কিছু সংস্কার করা হয়। বর্তমানে ভবনটি কবির স্মৃতি বিজড়িত স্থান হিসেবে প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে এবং রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন