অপূর্ব কারুকাজের নির্মাণশৈলী পাগলা বড় মসজিদ| হাওর ট্যুরিজম (পর্ব-২)

চৌধুরী আব্দুল হাই
উন্নয়নকর্মী ও লেখক

এপ্রি ২৪, ২০২২ | ইতিহাস ও ঐতিহ‌্য

Ended soon

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুনামগঞ্জ জেলা। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রাকৃতিক ও দৃষ্টি নন্দন নির্দশন ছড়িয়ে রয়েছে এখানে । যার মধ্যে রয়েছে এই জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা রায়পুর গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন রায়পুর বড় মসজিদ। স্থানীয়রা এই মসজিদটিকে ইয়াছিস মসজিদ বা পাগলা মসজিদ নামে চেনে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ফুট ও প্রস্থ্য ২৫ফুট। মসজিদটিতে রয়েছে বিশাল আকৃতির ৩টি গম্বুজ ও ৬টি বড় মিনার। এছাড়াও রয়েছে ১২টি ছোট মিনার। সাথে রয়েছে ১টি বারান্দা ও বিশাল ঈদগাহ ময়দান। মসজিদের বাহিরের তুলনায় ভিতরের দৃশ্য খুবই নান্দনিক। মসজিদটির মেঝে ও চারপাশের কারুকার্য দৃষ্টি জুড়ানোর মতো। জানা যায়, মসজিদের চারপাশে তিনফুট উচ্চতায় যে নান্দনিক টাইলস লাগানো হয়েছে তা আনা হয়েছে সুদূর ইতালি ও ইংল্যান্ড থেকে। মসজিদে আসা যাওয়ার জন্যে রয়েছে ১টি মূল প্রবেশদার। এই সুবিশাল মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী এক নজরে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ঐতিহ্যবাহী এই পাগলা মসজিদের মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইয়াসিন মির্জা ও তার ভাই ইউসুফ মির্জা। তারা দুজন ছিলেন খুবই সম্পদশালী ও ধর্মপরায়ণ। এই মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগে ছিল প্রায় ১০ বছর। এ মসজিদের নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রধান কারিগর ছিলেন ভারতীয়। তবে পাগলা মসজিদটির মূল স্থপতি হলেন মুমিন আস্তাগার। তার আদিপুরুষ নির্মাণ করেছেন ভারতের ঐতিহাসিক তাজমহল। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ৫ই আশ্বিন শুক্রবার পাগলা মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্থ্যর স্থাপন করা হয়। ভূমিকম্প নিরোধক মজবুত পাতের উপর মসজিদটি নির্মাণ করার ফলে এখনও পর্যন্ত ফাঠল ধরেনি।

পাগলা মসজিদ ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

এ মসজিদের একটি বিশেষত্ব হলো মসজিদটি নদীর কূল ঘেঁষে নির্মিত হওয়ায় ডেকার হাওরের বাতাস সবসময় মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে যার কারনে মুসল্লিরা সবসময়ই শীতলবায়ু পায়। আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে দ্বিতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনাটি কোনো ধরনের রডের ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ ইটের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদে ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে ভূমি খনন করে বেশ মজবুত পাতের ওপর স্থাপনাটির ভিত নির্মিণ করাা হয়েছে। ফলে এখনো অনাকাঙ্খিত বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পও মসজিদটিতে ফাটল ধরাতে পারেনি। মসজিদ নির্মাণের পর এখনো বড় ধরনের কোনো সংস্কারের প্রয়োজন পড়েনি।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে প্রাচীন এই নিদর্শনটি অবহেলিত ও সরকারের নজরহীন। যদি এই প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে এই মসজিদটি পর্যটকদের অনন্য স্থান হতে পারে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন এর সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেই আশায় করছেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন: ৩৫০ বছরের মোঘল স্থাপত্যের সাক্ষী সাত গম্বুজ মসজিদ

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন