২০০ বছরের পুরনো গৌরারং জমিদার বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তর্গত গৌরারং ইউনিয়ন এর গৌরারং গ্রামে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে -ছিটিয়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মোঘল আমলে স্থাপিত জমিদারদের বিলাস বহুল পরিত্যক্ত অট্টালিকা, রয়েছে বাংলার জমিদারি প্রথা নানান অজানা কাহিনী। সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গৌরারং গ্রাম , আর এই গ্রামেই শত বছরের ইতিহাস বুকে নিয়ে ৩০ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে গৌরারং জমিদার বাড়ি । জানা যায় সুনামগঞ্জ তথা গৌরারং রাজ্যের প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন জমিদার রাম গোবিন্দ চৌধুরী, ১৮০০ সালের শুরুর দিকে এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাকাল বলে জানান স্থানীয়রা । ২০০ বছরের পুরনো এই অট্টালিকায় রয়েছে ৬ টি আলাদা ভবন, রঙমহলের দেয়ালে নর-নারী লতাপাতার বি আজও দর্শকদের আকৃষ্ট করে ।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে এখনো গা ছমছম করে , অন্ধকার থাকে এককালে রঙিন আলোয় আলোকিত রাজকক্ষসমুহ । এক সময়ে বাড়ির আঙিনায় রাজ বংশের বংশধর ব্যতীত কেউ জুতা পায়ে চলাচল করলে তার শাস্তি হত । ইতোমধ্যে দালানের গায়ে শ্যাওলা জমে দেয়াল গুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে । রঙমহল ভবনের সম্মুখভাগে রয়েছে বিশাল আকৃতির ত্রকটি পুকুর যা প্রাসাদ ত্রর সৌন্দর্যকে আরও একধাপ বারিয়ে দিয়েছে । মূলভবনের ডান পাশে রয়েছে আরও একটি দীঘি যেখানে জমিদার বাড়ির নারীরা গোসল করতেন যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয় জল বারান্দা। জমিদার রাম গোবিন্দ চৌধুরী যে কতটা সৌখীন ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় দেয়াল বেষ্টিত ঘাট দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখে । তবে রাজ বাড়ির মূল ভবনের ভেতরটা কেমন জানি ভুতুড়ে পরিবেশ মনে হয়। প্রতিবেশী অনেকেই রাত্রিকালে ভবনের আশেপাশে প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা চলাফেরা করেন না । দেখলে মনে হয় কোন ধ্বংসস্তুপ পরে আছে তবে একশত বছর আগে ভূমিকম্পে বাড়িটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । সেসময় ভূমিকম্পে চাপা পরে জমিদারের ছোট ভাই মারা যান বলে জানান স্থানীয়রা । এছাড়াও ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী বাড়ির মূল ফটক সহ বেশ কিছু স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলেছে। জমিদারদের উওরাধীকার দের মধ্যে কেউ আর এখানে থাকেনা । জমিদার রাম গোবিন্দ চৌধুরীর কয়েক প্রজন্ম পরের নগেন্দ্র চৌধুরী ছিলেন এই এলাকার সর্বশেষ জমিদার । তার পুত্র নিরঞ্জন চৌধুরী ত্রখন সুনামগঞ্জ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন । তার পরিবারের মধ্যে রয়েছে ছেলে অঞ্জন চৌধুরী সহ ছেলের বউ লিপি শ্যাম ও একমাত্র নাতি অয়ন চৌধুরী । সুনামগঞ্জ শহরে প্রাচীন রাজ গোবিন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় উনার নামানুসারেই । একসময় গৌরারং জমিদার বাড়িতে দোল পূর্ণিমা সহ নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হত । আজ সবকিছু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
যেভাবে যাওয়া যাবে
গৌরারং জমিদার বংশের আদিপুরুষ নিধিরামের বর্তমান গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদ অফিস সংলগ্ন জায়গায় এই প্রাচীন জমিদার বাড়ী রয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর হতে ওয়েজখালী হয়ে নৌকাযোগে টুকের বাজার থেকে রিক্সা, মোটরসাইকেল, সিএন জি, ইজিবাইক ইত্যাদি যোগে যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ সদর থেকে সড়ক ও নদী উভয়পথে ডাওয়া যায়। যেতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লাগে।
যা কিছু দেখতে পাবেনঃ
এই জমিদার বাড়িতে গেলে আপনার মন ভয়ে এবং আনন্দে ভরে উঠবে কারণ জমিদার বাড়িটি অনেক পুরোনো এবং সুবিশাল। প্রাকৃতিক গাছপালা দিয়ে প্রাসাদটি সুন্দর ভয়ানক রুপ ধারণ করেছে। এই জমিদার বাড়ির সামনে সুবিশাল এক পুকুর রয়েছে যা বাড়িটির সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িটির উচুঁ উচুঁ দেয়ালে লতানো পাতায় আছে এবং পুরো দেয়াল জুড়ে স্যাওলা জমে আছে। রঙমহলের ভেতরের সৌন্দর্য আরো দেখার মতো যেমন দেয়ালে নর-নারীর চিত্র আঁকানো, বিভিন্ন লতাপাতার চিত্র আঁকানো এছাড়াও দেয়ালে বিভিন্ন হিংস্র পশু-পাখির চিত্রও দেখা যায়।
খাওয়া দাওয়াঃ
সুনামগঞ্জে স্থানীয় পর্যায়ে বিখ্যাত কিছু খাবার হলো পোরাও ও সাতকরা । এছারা আপনি আশেপাশে গ্রামীন পরিবেশে বিভিন্ন হোটেল আছে যেগুলোতে খেয়েও আপনি আপনার ক্ষুধা নিবারন করতে পারেন। এই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফলও পাওয়া যায়, যেমনঃ আনারস, কমলা, লেবু, কাঁঠাল, পেয়ারা, পান ইত্যাদি। এই এলাকায় দেশী হাঁস এবং প্রচুর পরিমানে মাছও পাওয়া যায়।
থাকা ও রাত্রি যাপনের স্থানঃ
সুনামগঞ্জে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস ও মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে, যেখানে ৪০০ থেকে ২,০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাওয়া যায়। এসব হোটেলের মধ্যে রয়েছে –
হোটেল নূর: পূর্ববাজার, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫২২৫, মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-৬৩০ ৮৮৭;
হোটেল সারপিনিয়া: জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫২৭৮;
হোটেল নূরানী: পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫৩৪৬, মোবাইল: ০১১৯৬-১৪২ ৯৩৯;
হোটেল মিজান: পূর্ববাজার, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫৬৪০।
সংলগ্ন দর্শনীয় এলাকাসমূহঃ
সুনামগঞ্জ জেলা ভৌগোলিকভাবেই বৈচিত্রপূর্ণ। হাসন রাজা মিউজিয়াম, সুনামগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী জাযুঘর, সুরমা নদী, ডলুরা শহিদ মিনার, উঁচু নিচু অনেক পাহাড় ছাড়াও রয়েছে দেখার মতো অনেক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান।