Ended soon
হাওরে বেড়াতে যাবেন আর রাধা রমনের বাড়িতে যাবেন না, তা কেমন করে হয়। বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোক কবি রাধারমন দত্ত। তাঁর রচিত ধামাইল গান সিলেট ও ভারতের বাঙ্গালীদের কাছে পরম আদরের ধন। রাধারমন নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বিরহের আকুতি আর না পাওয়ার ব্যথা কিংবা সব পেয়েও না পাওয়ার কষ্টটাকে সাধকে পরিণত করেছে। তিনি দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরণের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। কবি রাধারমনের পারিবারিক ঐতিহের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল শৈশব কাল থেকেই। খ্যাতিমান লোককবি জয়দেবের গীতগৌবিন্দ এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তার পিতা রাধামাধব দত্ত। পিতার সংগীত ও সাহিত্যসাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল। ১২৫০ বঙ্গাব্দে রাধারমন পিতৃহারা হন এবং সুর্বণা দেবীর কাছে বড় হতে থাকেন। তিনি ১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজারের আদপাশা গ্রামে শ্রী চৈত্যদেবের অন্যতম পার্ষদসেন শিবানন্দ বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর কন্যা গুনময়ী দেবীকে বিয়ে করেন। পিতার রচিত গ্রন্থগুলো যে সময় তার জন্য পিতা আদর্শ হয়ে অন্তরে স্থান করে নিল। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাব কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান। লিখেছেন কয়েকশ ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারী কন্ঠে বিয়ের অনুষ্ঠানে গীত হয়। বিশেষত সিলেট, কাছাড়, ত্রিপুরা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে একসময় এর প্রচলন খুব বেশী ছিল। রাধারমন দত্ত একাধারে গীতিকার সুরকার ও শিল্লী ছিলেন। জানা যায়, সাধক রাধারমন দত্তও মরমি কবি হাসন রাজার মধ্যে যোগাযোগ ছিল।
দৃষ্টি নন্দন হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলা হতে ৪৫ কি:মি: দূরে জগন্নাথপুর উপজেলায় কেশবপুর গ্রামটি অবস্থিত। কেশবপুর গ্রামে রাধামাধব দত্তের বড় ছেলে রাধারমন দত্তের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সিলেটের ধামাইল, বাউল, সুফিসাধক এবং সিলেট আঞ্চলিক বাংলা গানসহ ২০০০ অধিক গান রচনা করে গেছে। সিলেটের ধামাইল, বাউল, সুফিসাধক এবং সিলেটের বাংলায় অসংখ্যা গান পরিবেশন ও গান রচনা করায় তাঁর অনেক হিন্দু ও মুসলমান ভক্ত তৈরী হয় যার জন্য।লোক মুখে কথিত আছে তার মৃত্যুতে হিন্দু সম্প্রদায় দাহ করবে আর মুসলমান সম্পদায় কবর দিবে বলে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে পঞ্চায়াতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুকুরের দক্ষিণ পার্শ্বে দাহ করার জন্য মঞ্চায়িত করা হয়েছিল, কিন্তু আগুনে তার শরীর দাহ না হওয়ায় তার পরশী হরমনি মালকার পঞ্চায়াতের নিকট আরজি করেন যে,তাঁর নিজস্ব জায়গায় সমাধি দিতে। পরে তার মৃত্যুকর্ম বলে পুকুরের উত্তর পাশে তার নিজস্ব জায়গায় সমাধি করা হয় এবং অদ্যবধি তার সমাধিস্থলে মৃত্যুকর্ম করে আসতেছে তার ভক্ত হরমনি মালাকারের পরিবার। রাধারমনকে ঘিরে তার ভক্তবৃন্দ তার স্বৃতি রক্ষার্থে দুটি সংঘ তৈরী করেছে। তার একটি রাধারমন স্বৃতি সংঘ। এখানে প্রতিবছর কার্তিক মাসের ২৬ তারিখে আর্থিক সংগতির ওপর নির্ভর করে ০১ থেকে ০৩দিনের লীলা কীর্তন করা হয়। আর রাধারমন সমাজকল্যাণ সংস্কৃতি পরিষদ প্রতিবছর একই তারিখে ০১দিনের গানের আসর করে। ঐ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাধারমনের হাজার হাজার ভক্তকুল দুটি অনুষ্ঠানে শরীক হন। প্রতিবছর হেমন্ত কালে হাজার হাজার লোক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাধারমনের জীবন কাহিনী ও তার ভক্তদের গান শুনার জন্য এখানে আগমন করেন।
সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত কেশবপুর গ্রামে ১৮৩৩ ইং সনে শ্রী রাধারমন সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়েস্থ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শ্রী রাধামাধব দত্তের বড় ছেলে রাধারমন ছোট বেলা থেকেই সংস্কৃতির প্রতি দুর্বল ছিল বিধায় সিলেটের স্থানীয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মঞ্চে গান পরিবেশন করতেন। কাল ক্রমে বড় হতে থাকে, গান করতে করতে গান লেখার কাজ শুরু করেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ পিতা ইহকাল ত্যাগ করার পর পিতার মৃত্যু শোকে আধ্যাতিক ও ধর্মীয় ধ্যান মুগ্ধ হয়ে পূজা উদযাপন শুরু করেন এবং ভৈষ্যনাভিজম (কৃঞ্ঝ পূজা) ধর্মীয় ও আধ্যাতিক গান লেখা ও গান গাওয়া শুরু করেন। এভাবেই চলতে থাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যার জন্য মাঝে মাঝে সে তার ছোট কুঠিরে রাত্রী যাপন করতেন। আর এই জন্য তার প্রচুর হিন্দু ও মুসলমান ভক্ত তৈরী হয়। ১৯১৫ইং সালে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন এবং মৃত্যুর সময় অসংখ্য হিন্দু মুসলমান ভক্ত রেখে যান। তাইতো আপনার হাওর ভ্রমনের স্থানের তালিকায় রাধারমনের বাড়ি থাকা চাই।