বাংলাবাজার শ্রীশদাস লেনের বিউটি বোর্ডিংয়ের ইতি কথা

নাজমুল হাসান
সাংবাদিক

এপ্রি ১৪, ২০২২ | ইতিহাস ও ঐতিহ‌্য

Ended soon

বিউটি বোর্ডিং বাংলার শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির আঁতুরঘর নামে পরিচিত। পুরান ঢাকায় বাংলাবাজার শ্রীশদাস লেনের ১ নম্বর বাড়িটিই হলো বিউটি বোর্ডিং। বই প্রকাশ ও সংগ্রহের কারনেণ এখানে কবি-সাহিত্যিকদের পদাচরণ প্রতিদিনের। সেই সুবাদে এ বোর্ডিং এ আড্ডার পশরা বসত কবি সাহিত্যিকদের। সে কাল থেকে এ কাল এখানো মাঝে মাঝে বিউটি বোডিং এ মিলন মেলা ঘটে শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক সবার।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বাড়ির মালিক সুধীরচন্দ্র দাস জায়গাটি বিক্রি করে ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে এখানে একটি ছাপা খানা গড়ে ওঠে। এই ছাপা খানা থেকেই দৈনিক সোনার বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হতো। অনেক কবি সাহিত্যিকদের কবিতা প্রকাশনার হাতেখড়ি ছিলো এই পত্রিকায়। বিখ্যাত ও নন্দিত কবি শামসুর রাহমানের প্রমথ কবিতাটিও মুদ্রিত হয়েছিল এখানে। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন সুনীল কুমার মখোপধ্যায়। দেশ ভাগের পর ছাপাখানাটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হলে সুধীরচন্দ্র দাসের কাছ থেকে প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও তার ভাই নলিনী মোহন সাহা এটি কিনে রেস্তোরাঁ ও হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। নলিনী মোহন সাহার বড় মেয়ের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় বিউটি বোর্ডিং।

ষাটের দশকে বাংলার কবি সাহিত্যিকদের জাগরণে বিউটি বোর্ডিংয়ের ছিল এক অনন্য ভূমিকা। আহমেদ ছফা, হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক নির্মলেন্দু গুণ সহ আরও অনেক গুণী কবি সাহিত্যিক এখানে আসতেন। এছাড়া ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধেও নানা চিন্তা বিকাশের আড্ডাখানা হিসেবেও বিউটি বোর্ডিং এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও এখানে আসতেন শিল্পী ফজলে লোহানী, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী প্রমুখ। কলাম লেখন আবদুল গাফফার চৌধুরী, ভাস্কও নিতুন কুন্ড, কবি আল মাহমুদ, শহিদ কাদরী ও আরও অনেকে।

১৯৭১ সালে শ্রীশদাস লেনের এই ১ নম্বর বাড়িটিতে আড্ডায় ছেদ পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী জেনে যায় বাঙালি কবিও শিল্প সাহিত্যিকদের মিলনমেলার কথা। পাকবাহিনীর হামলায় শহিদ হন প্রহ্লাদ সাহা আরও অনেকে। ১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহার স্ত্রী প্রতিভা সাহা, দুই ছেলে সমর সাহা ও তারক সাহকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আবার শুরু করেন এ বোর্ডিং ব্যবসা।

সময়ের বিবর্তনে ফিকে হয়ে যাচ্ছে এই বিউটি বোর্ডিংয়ের অনেক স্মৃতি। প্রতিদিনের ব্যস্ততা ও শহুরে জীবনের কালধারায় আড্ডা কমে এসেছে বোর্ডিং এ। বিউটি বোর্ডিং রযেছে কিন্তু নেই সেই দিনগুলি। প্রহ্লাদ সাহার ছেলে তারক সাহার মৃত্যুর পর এখন বোর্ডিংটি দেখাশোনা করেন সমর সাহা ও বিজয় সাহারা।

তবে সকাল ও দুপুরের খাবারের জন্যে সাধারণ অনেক মানুষ এখনো আসের এই বিউটি বোডির্ং এ। বাংলা খাবারের অনেক পদই পাওয়া যায় এখানে। বাহারি সব খাবারের তালিকায় রয়েছে ভাত, ডাল, সবজি, ভর্তা, বড়া, চড়চড়ি, সরিষা ইলিশ, বাইলা, রুই, কাতলা, চিতল, পাবদা, তেলাপিয়া, চিংড়ি সহ আরও অনেক মাছ। এছাড়াও রয়েছে মুরগি ও খাসির মাংস। এ বোর্ডিএ রয়েছে সব মিলিয়ে ২৭ টি খাকার ঘর। এর মধ্যে ১৭টি পৃথক বেড, ১০টি ডাবল বেড। রুম গুলোর ভাড়া হয়ে থাকে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। তবে বাড়িটি অনেক পুরোনো হওয়ায় আগের মতো আর রুম ভাড়া দেওয়া হয় না।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন