ঢাকার বাতাস বিপদজনক মাত্রায় দূষিত- একটি সাম্প্রতিক গবেষণার প্রতিফলন

শায়েরী নাওয়ার
গবেষক

সেপ্টে ৮, ২০২১ | গবেষণা ও উন্নয়ন

Ended soon

বায়ুদূষণ মাত্রার নিরিখে সারাবিশ্বের দূষিততম শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। অপরদিকে সার্বিক দূষণ মাত্রার পরিমাপে ঢাকার অবস্থান ২১তম। দূষণ তথা বায়ুদূষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্য বরাবরই হুমকিস্বরূপ। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই প্রকৃতিতে মানুষের পাশাপাশি বায়ুমণ্ডলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সহ-অবস্থান করে আসছে। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবের একটি বড় অংশ বায়ুবাহিত হয়ে মানবদেহে নানাধরনের রোগব্যাধির কারণ হয়ে দাড়ায়। বিশেষ করে যক্ষ্মা, বিভিন্ন ধরনের উচ্চ শ্বাসনালীর প্রদাহ (Upper Respiratory Tract Infection) বা বক্ষব্যাধি এবং সাম্প্রতিকতম ভয়াবহ মহামারী কোভিড-১৯, এসবই বায়ুবাহিত রোগের উদাহরণ। এমন অবস্থায়, বায়ুমণ্ডলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মত ক্ষতিকর জীবকণার উপস্থিতি সনাক্তকরণ, তাদের আনুপাতিক অবস্থান নির্ণয়সহ এসকল জীবকণার এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা নির্ণয়ের মতো গবেষণা পরিচালনা এখন সময়ের দাবী। প্রতিদিন একজন মানুষ কমবেশী প্রায় ১৪ কিউবিক মিটার বাতাস নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে থাকে। এ থেকেই বোঝা যায় যে নিঃশ্বাসের সাথে সে যথেষ্ঠ পরিমাণ ক্ষতিকর অণুজীব নিজদেহে প্রবেশ করাতে বাধ্য হয় যদি তাঁর চারপাশের বায়ুমন্ডল দূষিত থাকে।

এ উপলব্ধির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বায়োটেকনোলজী বিভাগের তরুণ গবেষক শায়েরী নাওয়ার ও সহ গবেষক মালিহা রশীদ মাঠ পর্যায়ে নমুনায়ন করে ঢাকার বায়ুমন্ডল নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তাঁদের গবেষণার শিরোনাম ছিল “এ স্টাডি অব প্রিভিলেন্স এন্ড প্যাথজেনিক এ্যাক্টিভিটি অব ব্যাকটেরিয়া ইন দি এয়ার অব ঢাকা সিটি এন্ড দেয়ার এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্যাটার্ন ”। গবেষণার সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম মাহবুব হোসেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আকাশ আহমেদ।

এই গবেষণায় ঢাকার বায়ুমণ্ডলের ব্যাকটেরিয়ার মত ক্ষতিকর জীবকণার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়েছে। পাশাপাশি হিমোলাইসিস প্রক্রিয়া ও অন্যান্য এমিনো এসিড এবং রাসায়নিক মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের পরিচিতি শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, ঢাকার বাতাসে বিভিন্ন ধরণের ব্যাসিলাস, স্ট্রেপ্টোকক্কাস এবং সীগেলা প্রজাতির অত্যন্ত ক্ষতিকর স্ট্রেইন রয়েছে যা মানবদেহের বিভিন্নরকম প্রাণঘাতী রোগের কারণ। একই গবেষণায় এসকল স্ট্রেইনের এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়েছে। গবেষকেরা মনে করেন যে, এই গবেষণাটির ব্যপ্তি আরও বাড়ানো প্রয়োজন যার প্রেক্ষিতে বহু মানুষের জীবন বাচাঁনোর মত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয় করা যাবে এবং বায়ুদূষণ মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করা যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে এই গবেষণাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

এই মূল্যবান গবেষণা প্রবন্ধটি শায়েরী নাওয়ারকে প্রথম গবেষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্প্র্রতি আমেরিকান জার্নাল অব মলিকিউলার বায়োলজী, ২০২১, ১১ তম সংখ্যায় (পৃ: ৫১-৬২) প্রকাশিত হয়েছে। যাঁরা গবেষণাটির বিস্তারিত জানতে চান তারা https://doi.org/10.4236/ajmb.2021.112005 এই ওয়েব লিংকে গিয়ে দেখে নিতে পারেন।
আমরা আশা করব মানব কল্যাণমূখী এরূপ গবেষণা আরও বৃহৎ পরিসরে করা হবে এবং তরুণ গবেষকদের উপযুক্ত পৃষ্টপোষকতা দিয়ে উত্তরোত্তর উৎসাহিত করা হবে।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন