বিষধর সাপেও হতে পারে অর্থনৈতিক লাভ!

ndicia24

Ended soon

সাপ মানুষের প্রত্যক্ষ ভাবে কাজে না আসলেও পরোক্ষ ভাবে এর অনেক উপকারিতা রয়েছে।  ঔষধ থেকে শুরু করে অনেক প্রয়োজনীয় কাজে সাপের বিষ ব্যবহার করা হয়। ওয়াইল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা শুরুর আগেই গোখরার আশ্রয় ও বিচরণস্থল সংরক্ষণ করে এগুলোর হত্যা যদি বন্ধ করা যায় এবং রফতানির উদেশ্যে খামার গড়ে এই সাপের বিষ সংগ্রহ করা যায় তাহলে বিষধর সাপও হতে পারে অর্থ আয়ের উৎস।  

ওয়াল্ডলাইফ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গোখরাসহ বৈচিত্র্যময় অনেক প্রজাতির সাপ থাকার পরেও এগুলোর বিষ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা না থাকায় এ বিষয়ে বাণিজ্যিক কোনও উদ্যোগ নিতে পারছেন না আগ্রহীরা। এমনকি সাপের খামার করার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় চাইলেই কারো পক্ষে এমন উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, চাহিদা থাকায় সীমিত পরিসরে এদেশেও সাপের বিষ দিয়ে কিছু ওষুধ তৈরি হচ্ছে, যদিও এর কাঁচামাল বা বিষ আসছে দেশের বাইরে থেকে। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ‘ওষুধ তৈরি সংস্থা ইনসেপ্টা অ্যান্টি ভেনাম তৈরি করে। তবে কাঁচামাল বাইরে থেকে আসে। সব সাপ সব দেশে থাকে না, ফলে আমদানির বিকল্প নেই। দেশে যেসব প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় সেগুলো থেকে বিষ কিভাবে সংগ্রহ করা যায় সে নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৭০ প্রজাতির সাপ আছে যার মধ্যে বিষধর প্রজাতি ২৭টি। এই বিষধর প্রজাতির মধ্যে ১২ প্রজাতি থাকে বঙ্গোপসাগরে। বাকি ১৫ প্রজাতি দেশের সবখানে কম বেশি মেলে। বিষধর গোখরা সাপের বিষ অতি মূল্যবান। যার মধ্যে পটাসিয়াম সায়ানাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সাপের বিষ দিয়ে তৈরি জীবন রক্ষাকারী নানা ওষুধ বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে। বনবিভাগে বন্যপ্রাণী শাখা থাকা সত্ত্বেও  জাতীয়ভাবে সাপের সংরক্ষণ ও প্রজনন খামার নেই। এরকম খামার করা জরুরি। খামার তৈরি করে বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বৈধতা দিলে এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। বাংলাদেশে আবহাওয়া সাপের উপযোগী হওয়ায় এত প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় যে এগুলোর কালচার করা গেলে সাপের বিষ দেশে-বিদেশে কাজে লাগানো সম্ভব।

বিষেজ্ঞরা বলছেন, অনেকে বাসা-বাড়িতে বা বনে জঙ্গলে সাপ দেখেলে মেরে ফেলেন। কারন সাপ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ সরকার থেকে নেয়া হয় না।  যার ফলে মানুষ ভয়ে হোক বা অসচেতনতায় হোক সাপ মারার জন্যে উদ্ধত হয়। সাপ মেরে ফেললে বাস্তু সংস্থানে সমস্যা দেখা দিবে। দেশে সাপ না থাকলে ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে বাঁচা যাবে না। বিষেজ্ঞরা আরও বলছেন, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ লাগে সেটা কিন্তু সাপের বিষ থেকেই তৈরি হয়। তাই ওষুধ তৈরির প্রয়োজনেও হলেও সাপের সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগে সূত্রে জানা যায়, সাপের বিষ ভীষণ মূল্যবান, তবে বাংলাদেশে সাপের বিষ ব্যবহার করে কোনও ওষুধ তৈরি হয় না,  কারণ, এর টেকনোলজি ভীষণ দামি, প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। আর এটাও মনে রাখতে হবে সাপের বিষের তৈরি ওষুধ লাগে এমন রোগীর সংখ্যা যে অনেক বেশি তাও নয়। ফলে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা আসলে প্রস্তুত নন। তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটা যদি বৈধভাবে করার ব্যবস্থা করা হয় সেটি বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।  আমাদের দেশে বিষ সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে চীন ও থাইল্যাণ্ড থেকে চোরাই পথে সাপের বিষ আসে, বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে।

বন বিভাগে সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কেউ ব্যক্তিগতভাবে খামার করতে চাইলেও পারবে না, বনবিভাগ অনুমতি দেবে না। অবশ্য, ছোট পরিসরে কেউ কেউ কাজ করছেন, তাদেরকে কিছু কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষ রফতানি করার অনুমতি তারাও পাননি।

বাংলাদেশে সাপের বৈচিত্র্য অনেক। চাইলে অর্থনৈতিকভাবে এটাকে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় আইন না থাকায় সাপের বিষ সংরক্ষণের লাইসেন্সও প্রদান করা হয় না। এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন