উন্নয়ন আলোচনা পর্ব-৮

ndicia24

জানু ২, ২০২৫ | প্রকৃতি ও প্রতিবেশ

আলোচনার বিষয়- উষ্ণতার আঘাতঃ সংকট ও উত্তরণ

এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি লিঃ) মূলত একটি গবেষণাধর্মী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে গবেষণামূলক কাজ করে থাকে। এআইআরডি-এর একটি ওয়েভ পোর্টাল হচ্ছে nDicia (এনডিসিয়া) যার উদ্যোগে উন্নয়ন আলোচনা শীর্ষক এই আলাপচারিতার (টকশো) আয়োজন করা হয়েছে। আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ উষ্ণতার আঘাতঃ সংকট ও উত্তরণ। আলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ড. মো. আব্দুল মান্নান, আবহাওয়াবিদ এবং জনাব মো. শাহজাহান, এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশ। আলাপচারিতার সঞ্চালনায় ছিলেন জনাব মাসুদ সিদ্দিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি) লিঃ। অনুষ্ঠানটি nDicia24-এর ইউটিউব এবং ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিলো ২৬/১২/২০২৪ তারিখ রাত ৮ টা থেকে ৮:৪৫ মিনিট।

মাসুদ সিদ্দিকঃ হিট স্ট্রেস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিন।

মো. শাহজাহানঃ বিগত কয়েক দশকের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, যদি বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের দিকে তাকানো হয়, দেখা যায় যে গড় তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এটি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এর ফলে যে “হিট স্ট্রেস” বা “হিট ওয়েভ এর কথা বলা হয়, তা মানুষের এবং প্রাণিকুলের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। এই গরমের কারণে শরীরের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, সেটিকেই “হিট স্ট্রেস” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, যখন তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর উপরে পৌঁছে, তখন এটিকে “হিট ওয়েভ” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এই মান বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন হতে পারে। যেমন, ঢাকার ক্ষেত্রে এটি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও, চুয়াডাঙ্গা বা রাজশাহী অঞ্চলের ক্ষেত্রে এটি ৪০ ডিগ্রি বা এর উপরে হতে পারে। কারণ, এই অঞ্চলের জনগণের তাপমাত্রা মোকাবিলার সক্ষমতা কিছুটা বেশি।

. আব্দুল মান্নানঃ আসলে “হিট স্ট্রেস” যদি সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হয়, তবে অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ডগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, কোনো একটি অঞ্চলের মানুষের অভ্যস্ততা নির্ধারণে ওই এলাকার অঞ্চলভিত্তিক তাপমাত্রার ডেটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, যদি একজন মানুষ বা একটি প্রাণী দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় বসবাস করে, তবে তার শরীর ঐ তাপমাত্রার প্রতি অভ্যস্ত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো অঞ্চলের মানুষ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অভ্যস্ত হয়, তবে তাদের জন্য ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস খুব একটা অস্বস্তি সৃষ্টি করবে না। কিন্তু তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে গেলে, তখন তারা “হিট স্ট্রেস” অনুভব করতে পারে। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায়, বিশেষত রাজশাহী অঞ্চলে, ৩৪-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিয়মিত দেখা যায়। এই এলাকার জনগণ প্রতিবছর উচ্চ তাপমাত্রার মুখোমুখি হয়, ফলে তারা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রায় সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। যদি স্থানীয়ভাবে, অর্থাৎ জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে “হিট স্ট্রেস” বা “হিট ওয়েভ” নির্ধারণ করতে হয়, তবে ঐ অঞ্চলের অতীত তাপমাত্রার ডেটা এবং সেখানকার জনগণের অভ্যস্ততা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহী অঞ্চলে ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে “হিট স্ট্রেস” এর সূচক ধরা যেতে পারে, যেখানে ঢাকার ক্ষেত্রে এটি ৩৭ ডিগ্রি বা তার কাছাকাছি হতে পারে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ এবং এর তাপমাত্রার বৈচিত্র্য তুলনামূলক কম। তবুও, আবহাওয়া অধিদপ্তর দীর্ঘদিনের তাপমাত্রার রেকর্ড দেখে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে “অপটিমাল লেভেল” হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে তাপমাত্রাকে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ কোন অপটিমাম টেম্পারেচারটা ক্রস করলে হিট স্ট্রেস বলা যায়?

. আব্দুল মান্নানঃ যখন কোনো স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয় এবং তা পরপর তিন দিন স্থায়ী থাকে, তখন সেটাকে হিট ওয়েভ বা হিট স্ট্রেস বলা হয়। তাপমাত্রার সঙ্গে মানবদেহের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন হতে পারে। যেমন, কেউ যদি এক কিলোমিটার দৌড়ে আসে, তবে তার শরীর ঘেমে যায় এবং এক ধরনের চাপ অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) এবং বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছেন। একটি অঞ্চলে যদি কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পরপর তিন দিন ধরে অতিক্রান্ত হয়, তাহলে তা হিট ওয়েভ হিসেবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত মান হলো ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি এবং এই তাপমাত্রা তিন দিন ধরে থাকতে হবে। তাপমাত্রা এবং আদ্রতা একসঙ্গে কাজ করে। যখন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, তখন তাপমাত্রা শোষণ ও রিলিজের প্রক্রিয়া তীব্রতর হয়। ফলে, হিট ওয়েভ মানুষের অস্বস্থিকর অবস্থা বা “লোকাল ডিসকমফোর্ট” তৈরি করে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতের তুলনায় তাপমাত্রার রেকর্ড আপডেট করতে হয় সাম্প্রতিক ডেটা দিয়ে। আগে ক্লাইমেটোলজিকাল পিরিয়ড ১৯৬১-১৯৯০ পর্যন্ত ধরা হতো, যা বর্তমানে ১৯৮১-২০১০ বা ১৯৯১-২০২০ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই প্রেক্ষাপটে হিট ওয়েভ বা হিট স্ট্রেসকে বিজ্ঞানসম্মত, মানবিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা করা জরুরি।

মাসুদ সিদ্দিক: গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, যার প্রধান কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বা গ্রিনহাউস গ্যাস, এ কারণেই কি হিট ট্রেস বা তাপদাহ সৃষ্টি হচ্ছে?

. আব্দুল মান্নানঃ সারা পৃথিবীতে যদি কোনো মানব কার্যক্রম স্থির থাকত, অর্থাৎ মানব কার্যক্রমের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ না-ও হতো, তাহলেও গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক ফ্যাক্টর কাজ করত। যেমন: সোলার রেডিয়েশন, ল্যান্ড সারফেসের পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক কার্যক্রম। তবে সেক্ষেত্রে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার খুব ধীরগতির হতো। মানব কার্যক্রমের কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ছাড়াও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ট্রেস গ্যাসও রয়েছে। এসব গ্যাসের পরিমাণ কম হলেও এদের জীবনচক্র প্রায় ৪০০ বছর। এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে তাপ শক্তি ধরে রাখে। ফলে বায়ুমণ্ডল শুধু সোলার রেডিয়েশন নয়, বরং এই ফ্যাক্টরগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে উষ্ণ হচ্ছে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ মানব কার্যক্রম বলতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোই কি মূল কারণ, নাকি অন্যান্য কার্যক্রমও দায়ী?

মো. শাহজাহানঃ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো একটি কারণ মাত্র। এর বাইরে আরও কারণ রয়েছে, যেমন: শিল্প কার্যক্রম এবং অতিরিক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ। প্রাকৃতিক সম্পদ যত বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে, তত বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। যদি আমাদের অঞ্চল তথা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট দেখি, এখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন দূষণ আসছে। সেই সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের কিছু মৌলিক উপাদান এবং বায়ুকণাগুলোও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। এই উপাদানগুলো তাপ ধরে রাখে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ত্বরান্বিত করে। তাই শুধু গ্রিনহাউস গ্যাস নয়, বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর প্রভাবও উল্লেখযোগ্য।

মাসুদ সিদ্দিকঃ হিট এবং স্ট্রেসের কারণে যে তাপদাহ হচ্ছে, এতে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি, দৈনিক কর্মজীবী মানুষের অনেক শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে বলুন?

মো. শাহজাহানঃ যদি শ্রমঘণ্টার কথা বলা হয়, তবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে রিসার্চ হয়েছে। কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন বৃহত্তর এলাকাতে গবেষণা করার। ঢাকা শহরের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তাপদাহের কারণে রাস্তায় কাজ করা মানুষেরা প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা কর্মঘণ্টা হারায়। এ ছাড়া, তাপদাহের প্রভাব যদি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দেখা হয়, তবে তা আরও স্পষ্ট। বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলতে পারব না, তবে সাধারণভাবে বললে, হিট ওয়েভের সময় কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। হিট ওয়েভের কারণে সেকেন্ডারি ইম্প্যাক্ট যেমন ক্রনিক রোগের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত গরমে মানুষ অসুস্থ হয়, যার ফলে জ্বর, সর্দি, বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাপদাহের সময় বাংলাদেশে হঠাৎ বৃষ্টির ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে এবং ডেঙ্গুর প্রজনন বৃদ্ধি পায়।

মাসুদ সিদ্দিকঃ হিট স্ট্রেসের কারণে শ্রমঘণ্টা ক্ষতির বিষয়ে সাম্প্রতিক কোনো গবেষণার ডাটা কি বাংলাদেশে আছে?

. আব্দুল মান্নানঃ হিট স্ট্রেস সম্পর্কিত বিশদ ডাটা যদি দেখতে হয়, তবে আইইডিসিআর (IEDCR) এ বিষয়ে কাজ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিভিন্ন স্থানে গবেষণা পরিচালনা করেছে। তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেটাবেজ রয়েছে, বিশেষ করে চাঁদপুরের মতলব এলাকার ডায়রিয়া হসপিটালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। হিট স্ট্রেস পিরিয়ডে ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন রিসার্চ ও আইইডিসিআর-এর সার্ভিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সময় স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি কর্মঘণ্টার ক্ষতি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।

মাসুদ সিদ্দিক : এই হিট স্ট্রেসকে অ্যাড্রেস করার জন্য সরকারের আবহাওয়া অধিদপ্তর মিউনিসিপাল কর্পোরেশন কিভাবে তারা এগিয়ে আসবে।

. আব্দুল মান্নানঃ হিট স্ট্রেস যেহেতু একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় এবং এর জটিলতা সমাজের ওপর প্রভাব ফেলে, তাই সমাজ এবং বিজ্ঞান দুটিকেই একত্রিত করতে হবে। প্রথমত, যখনই হিট স্ট্রেস আসবে, তার পূর্বাভাস এবং সঠিক পূর্বাভাসের জন্য বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সেই বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, সমাজের বিভিন্ন স্তরে হোক তা প্রশাসন বা অন্যান্য সংস্থা সবারই তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী হিট স্ট্রেস বিষয়ে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি একটি যৌথ সেল গঠন করা হয়, যারা হিট স্ট্রেসের তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সেই তথ্য আগে থেকেই পূর্বাভাস আকারে প্রকাশ করবে, তাহলে এটি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। এই সেলটি সক্রিয়ভাবে কাজ করলে যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, যেমন উপজেলা বা জেলা স্তরের প্রশাসন, তারা এই উপদেশ অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি জানা যায় যে আগামী পাঁচ দিন চুয়াডাঙ্গা বা রাজশাহীর মতো দেশের পশ্চিমাঞ্চলে হিট ওয়েভ হবে, তাহলে যারা স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছেন, তারা লেবার শ্রেণির মানুষের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন যে কাজকর্ম সকালেই শেষ করে ১২টার আগে বাড়ি পৌঁছাতে হবে। স্কুল-কলেজগুলোকে রিসিডিউল করে মর্নিং সেশনে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। শপিং মলগুলো শুধুমাত্র সন্ধ্যায় খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, যাতে জনগণ সুবিধা পায়। এমনকি অফিস-আদালতের সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা বা সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত করা যেতে পারে।

মাসুদ সিদ্দিক: এটা কি শুধু হিট স্ট্রেস পিরিয়ডের জন্য প্রযোজ্য?

. আব্দুল মান্নানঃ হ্যাঁ, এটি শুধুমাত্র হিট স্ট্রেস পিরিয়ডের জন্য প্রযোজ্য। কারণ, হিট স্ট্রেস একটানা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে না। সাধারণত ১৫ দিনের বেশি হিট স্ট্রেস কন্ডিশন খুবই বিরল। তাই পূর্বাভাস এবং সতর্কতার ভিত্তিতে এই সময়ের জন্য কার্যক্রম রিসিডিউল করা হলে, যারা হিট স্ট্রেসের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হন, তারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। এছাড়াও, কিছু মেজারমেন্ট টেকনিক প্রয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের মানুষদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, কুলিং প্লেস বা শেল্টার তৈরি করা যেতে পারে। এসব ব্যবস্থা মানুষকে হিট স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে কার্যকরী হবে।

মোঃ শাহজাহানঃ আসলে সরকারের কি করা প্রয়োজন এবং যারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী তাদের কি করার প্রয়োজন, তা বোঝা জরুরি। দেখা যাচ্ছে যে তাপপ্রবাহ বা হিট স্ট্রেস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। তাই, সরকারের অবশ্যই নীতিমালা তৈরি করতে হবে। যেমন: ভেজিটেশন কাভারেজ কতটুকু থাকতে হবে, বিল্ডিংগুলো কোন স্ট্রাকচারে তৈরি হবে,  বাংলাদেশের এলাকায় এত গ্লাসের বিল্ডিং আদৌ প্রয়োজন কি না, তা বিবেচনা করা, শহরে ওয়েটল্যান্ড ভরাট বন্ধের প্রয়োজনীয়তা। এই ধরনের নীতিমালা বা দিকনির্দেশনা তৈরি করতে হবে। কারণ ওয়েটল্যান্ডের সাথে তাপপ্রবাহের একটি সম্পর্ক রয়েছে। তাই, এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

মাসুদ সিদ্দিকঃ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আর কী করণীয় আছে? আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে বলুন।

. আব্দুল মান্নানঃ আসলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ম্যান্ডেট হলো তথ্য সংগ্রহ করা, তা বিশ্লেষণ করা এবং সেই অনুযায়ী পূর্বাভাস বা আর্লি ওয়ার্নিং প্রদান করা। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বিগত সময় ধরে এ কাজগুলো করে আসছে। তবে কখনো কখনো আবহাওয়ার পূর্বাভাস বা ওয়ার্নিং তেমন কার্যকর হয়নি এ ধরনের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান ও প্রথম কাজ হলো কার্যকর আর্লি ওয়ার্নিং প্রদান করা। বিশেষত হিট স্ট্রেস ও অন্যান্য হ্যাজার্ডের ক্ষেত্রে তাদের তথ্য যেন যথাযথ ও সঠিক হয়। এতে জনগণও এ তথ্যের প্রতি মনোযোগ দেবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আর্লি ওয়ার্নিং যত আগে প্রদান করা যাবে, ততই তা কার্যকর হবে। উদাহরণস্বরূপ, আগামীকালের ওয়ার্নিং যদি আজকেই দেওয়া হয়, সেটি তেমন কার্যকর হবে না। বরং পাঁচ, সাত বা দশ দিন আগে ওয়ার্নিং প্রদান করা হলে ইউজাররা তা থেকে বেশি উপকৃত হবে। আরেকটি বিষয়, যদি হিট স্ট্রেস বা হিট ওয়েভের পূর্বাভাস জেলা বা এলাকার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, তবে তা আরও উপযোগী হবে। এতে প্রতিটি এলাকা তাদের অবস্থার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নিতে পারবে। কারণ, যদি কমনভাবে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়, তবে যেসব এলাকায় হিট স্ট্রেস নেই, সেসব এলাকার মানুষ তা উপেক্ষা করতে পারে। এতে তাদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, যদি ওয়ার্নিং যথাযথ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতের ওয়ার্নিংয়েও মানুষ আস্থা হারাতে পারে। তাই সঠিক, ইফেক্টিভ ও আস্থাজনক আর্লি ওয়ার্নিং প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বর্তমানে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব উপজেলায় আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করেছে। সারা দেশে মোট ২,২৬৫টি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এসব তথ্য ও সংযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার অন্তর্ভুক্তি বাড়ালে এবং বিষয়গুলো আরো কেয়ারফুলি হ্যান্ডল করলে জনগণ বেশি উপকৃত হবে এবং অধিদপ্তরের প্রতি আস্থা বাড়বে।

মো. শাহজাহানঃ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দায়িত্ব হচ্ছে ভালোভাবে আর্লি ওয়ার্নিং তৈরি করা। তবে, একই সঙ্গে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যেসব সংস্থা বা ব্যক্তি এ তথ্য কমিউনিটির কাছে পৌঁছে দেবে, তাদের মধ্যে লিংক তৈরি করতে হবে। যদি আবহাওয়া অধিদপ্তর হিট ওয়েভের পূর্বাভাস তৈরি করে, কিন্তু তা ইন্ডি-ইউজারদের কাছে পৌঁছায় না, তাহলে পূর্বাভাসের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই পূর্বাভাস ইন্ডি-ইউজারদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ দায়িত্ব কার, সেটি নির্ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় ঘটাতে হবে, যাতে ইন্ডি-ইউজাররা সঠিকভাবে ইনস্ট্রাকশন পায় এবং সেই অনুযায়ী অ্যাকশন নিতে পারে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ হিট স্ট্রেস মোকাবিলায় বিজ্ঞান ভিত্তিক পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে? একই সঙ্গে, কোনো গবেষণা উদ্যোগ, যেমন বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে কিনা?

. আব্দুল মান্নানঃ আবহাওয়ার বিষয়টি আগে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বিভিন্ন ক্লাইমেট মডেল গত দশ বছরে আপডেট হয়ছে এবং এসব ক্লাইমেট মডেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক পূর্বাভাস তৈরি করা সম্ভব। এই তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে আবহাওয়া দপ্তর প্রতিমান করতে পারবে যে আগামী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তাপমাত্রা পরিস্থিতি কেমন হবে। যদি এ তথ্য সরকারের কাছে কিংবা বিভিন্ন সেক্টরের (যেমন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে সরবরাহ করা হয়, তাহলে স্থানীয় পর্যায় তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এ অনুযায়ী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্মকালীন তাপদাহ (হিট ওয়েভ) মার্চ, এপ্রিল, মে বা জুন কোন মাসে বেশি প্রভাব ফেলবে তা নির্ধারণ করা গেলে, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে। এনজিও এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা ঠিক করে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে, আবহাওয়া দপ্তরের মূল কাজ হলো তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করা। যেহেতু এটি একটি জটিল এবং গবেষণানির্ভর কাজ, তাই বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা আবশ্যক। যৌথ গবেষণার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তৈরি করে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করা উচিত। এর ভিত্তিতে, সরকার নির্দেশনা প্রদান করতে পারে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব ভাগ করে সঠিক উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং স্বস্তি আসবে।

মো. শাহজাহানঃ বাংলাদেশে হিটওয়েভ নিয়ে এ পর্যন্ত খুব কম গবেষণা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। তাপদাহের প্রভাব শিল্প উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে পড়ে, তা নির্ধারণ করতে আলাদা আলাদা গবেষণা করা জরুরি। যদিও কিছু তথ্য রয়েছে, তবে তা এখনও সামগ্রিকভাবে পর্যাপ্ত নয়। উদাহরণস্বরূপ, হাসপাতালগুলোতে তাপদাহকালীন রোগীর সংখ্যা সম্পর্কে পরিসংখ্যান সহজে পাওয়া যায় না। এ ধরনের গবেষণার জন্য বিভিন্ন সেক্টরের সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ সম্প্রতি এআইআরডি-এর দ্বারা একটি গবেষণা করা হয়েছিলো হিট স্ট্রেসের উপর, যেখানে নগর ও গ্রামীণ পরিবেশের তাপদাহ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিলো। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

. আব্দুল মান্নানঃ যে স্টাডি হয়েছে, তা হলো গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের গ্রামীণ এলাকা এবং ঢাকার উত্তর সিটি। এই দুটি এলাকাতেই একই সময়ে সার্ভে, কেআইআই (কী ইনফরম্যান্ট ইন্টারভিউ), এবং এফজিডি (ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন) করা হয়েছে। এখানে সুন্দর একটি চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে হিট স্ট্রেস জনগণের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং তারা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি খুব ক্লোজলি দেখা যায়, তাহলে বোঝা যায় যে সচেতনতার বিষয়টি উভয় এলাকাতেই আছে। তবে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে কিছুটা কম, আর শহরের এলাকাগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি। শহরের জনগণ ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে বেশি দক্ষ। তারা সাধারণত ক্রিটিকাল পরিস্থিতি না হলে হাসপাতালে যায় না। অপরদিকে, গ্রামীণ এলাকার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা আসার কারণে যখন ক্রিটিকাল পরিস্থিতি হয়, তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যায়। গ্রামীণ এলাকাগুলোর মানুষ জরুরি অবস্থায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে তাদের কার্যক্রমের কারণে কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়। একইভাবে শহরের ক্ষেত্রেও আর্থিক ক্ষতি লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষত রিকশাচালকদের ক্ষেত্রে। দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল এসব মানুষ হিট স্ট্রেসের কারণে কাজ করতে না পারায় অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যদি দুই এলাকার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়, তবে দেখা যায় যে শহরের লোকেরা ম্যানেজমেন্টে কিছুটা এগিয়ে। যদিও গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া, সবাই মনে করে যে যদি আগে থেকেই “আর্লি ওয়ার্নিং” সিস্টেম চালু করা যায়, তাহলে জনগণ আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে। শহরের জনগণ এই ধরনের সিস্টেম থেকে বেশি সুবিধা পায়।

মাসুদ সিদ্দিকঃ হিট ওয়েভ কি একটি দুর্যোগ (Disaster)?

মো. শাহজাহানঃ এটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকারও এ বিষয়ে আলোচনা করছে যে হিট ওয়েভকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে কি না। স্ট্যান্ডিং অর্ডারে অন্যান্য দুর্যোগের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। তবে হিট ওয়েভ নিয়ে সেভাবে কিছু বলা নেই। এক জায়গায় শুধু নামটি উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এটি উপলব্ধি করছে যে হিট ওয়েভকে একটি হ্যাজার্ড হিসেবে চিহ্নিত করা জরুরি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে, এবং এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে, সরকার এটিকে একটি দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করার বিষয়ে ভাবছে।

. আব্দুল মান্নানঃ এটার দুটি প্রভাব রয়েছে, একটি হল “হ্যাজার্ড” এবং অন্যটি “ডিজাস্টার”। এগুলো আমাদের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এটি স্বাভাবিকও হতে পারে, যেমন কেউ একটি জায়গায় রওনা দিলেন এবং বৃষ্টি শুরু হলো। এটি তাকে বাধ্য করে কোনো জায়গায় সাময়িকভাবে অপেক্ষা করতে, অর্থাৎ এটি তার কর্মকাণ্ডকে বিঘ্নিত করল। এরকম পরিস্থিতি যদি সমাজের মধ্যে ঘটে এবং সেটি আবহাওয়াজনিত বা প্রাকৃতিক ফেনোমেনা হয়, তবে তা সাধারণত “হ্যাজার্ড” হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি বৃষ্টিপাত ১০০ বা ২০০ মিলিমিটারের বেশি হয় এবং তার কাছে যে প্রস্তুতি বা ভারসাম্য ছিল তা দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে এবং লোকজনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এখন, যখন এরকম কোনো পরিস্থিতি সমাজের কার্যক্রমে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তা ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন এটি “ডিজাস্টার” রূপে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিটওয়েভ যদি ঘটে এবং তা সোসাইটির ম্যানেজমেন্ট পজিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে সেটি সহনীয়। তবে, যদি তা টলারেন্সের বাইরে চলে যায়, তখন সেটি ডিজাস্টার হয়ে ওঠে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ আপনাদের দুজনকে এবং সম্মানিত দর্শক-শ্রোতাবৃন্দকেও ধন্যবাদ।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন