শেরপুরে হাতি ও মানুষের যুদ্ধ
এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (AIRD) লিমিটেড একটি গবেষণাধর্মী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণামূলক কাজ পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির একটি ওয়েব পোর্টাল হলো nDicia (এনডিসিয়া)। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা ‘উন্নয়ন আলোচনা’ শীর্ষক আলাপচারিতার (টকশো) আয়োজন করে থাকি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নলেজ ডকুমেন্টেশন। আমাদের আলোচনার ট্রান্সক্রিপ্ট nDicia-এর ওয়েব পোর্টালে থাকবে এবং সম্পূর্ণ আলোচনাটি nDicia-এর Youtube চ্যানেলে থাকবে। ভবিষ্যতে, এই আলোচনাগুলোকে সম্পাদনা করে একটি বই আকারে প্রকাশ করা হবে। আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ শেরপুরে হাতি ও মানুষের যুদ্ধ। আলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জনাব এম এ হাকাম হীরা, জেলা প্রতিনিধি, বাংলা ভিশন, শেরপুর এবং জনাব আবদুল মান্নান সোহেল, প্রতিনিধি, প্রথমআলো, নালিতাবাড়ী,শেরপুর।আলাপচারিতার সঞ্চালনায় ছিলেন জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক, এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি) লিঃ। অনুষ্ঠানটি nDicia-এর ইউটিউব এবং ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিলো ২৯/০৫/২০২৫ তারিখ রাত ০৮:০০ টা থেকে ৯.০০ মিনিট।
মোস্তাফিজুর রহমান: হীরা সাহেবের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই যে হাতিগুলো সেগুলোতো মূলত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসে, বিশেষ করে ইন্ডিয়া থেকে আসা, তো এই বন্য হাতির দল মূলত কখন থেকে বড় আকারে প্রবেশ করা শুরু করল এবং এরা কি কারণে এইভাবে আসে এবং কেন আমরা এগুলোকে সমস্যা হিসেবে দেখছি?
এম এ হাকাম হীরা:শেরপুর জেলার গারো পাহাড়জুড়ে হাতির যে তাণ্ডব চলছে এবং হাতি এবং মানুষের যে অসম লড়াই চলছে উন্নয়ন ভাবনায় এই বিষয়টিকে বেছে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তো শেরপুরে গারো পাহাড় শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতি এবং নালিতাবাড়ী আর এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলার বক্সিগঞ্জ ও রৌমারী এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধুবাউড়া এবং সিলেটের সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। তো শেরপুর জেলায় ৪০ কিলোমিটার বনাঞ্চল রয়েছে, এই গারো পাহাড়ে হাতি অনেক আগে থেকেই ছিল, তখন হাতি এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করত না, আমরা যতটুকু জেনেছি যে হাতি গুলো মূলত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পিক পাহাড় নামে একটা এলাকায় আছে এবং সেখানেই হাতিগুলোর স্থায়ী বসবাস ছিল। ৮০র দশকে এই পিক পাহাড়ের বনাঞ্চল কেটে সেখানে রাবার বাগান করা হয়, তখন ১৫/২০ টি হাতি যেগুলো দল ছুট হয়ে যায়, দল ছুট হয়ে মূলত এই শেরপুরের গারো পাহাড়ে তারা আশ্রয় নে ও অবস্থান করে এবং শেরপুরে তখন থেকেই হাতির যাতায়াত শুরু হয়। পরবর্তীতে ভারত যখন কাটা তারের প্রাচীর দেয় তখন দুই দেশে যে হাতিগুলো অবাধ বিচরণ ছিল সেটা বন্ধ হয়ে যায়, মূলত তখন থেকেই হাতিগুলো গারো পাহাড়ে বাংলাদেশ অংশে এই জায়গায় এসে ওরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। হাতির বিচরণ শেরপুরে ১৯৮০ সাল থেকে মূলত শুরু হয়েছে, তবে তখন এটা এত বড় ছিল না, দীর্ঘ এত বছরে পর অর্থাৎ প্রায় ৩ দশকে ১৫/২০ টি হাতি বেড়ে এখন কিন্তু এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ টির মতো। তো হাতি এবং মানুষের মধ্যে যে সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে, এই দীর্ঘ সময়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে যেমন বেড়েছে হাতির সংখ্যা। এই তুলনায় পাহাড় হয়েছে সংকোচিত কারণ এটা ভালো করেই আপনারা জানেন যে শেরপুরের শাল, মহুয়া, গজারী মানে প্রাকৃতিক যে বনাঞ্চল ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেই বনাঞ্চল ধ্বংস করেছে এখানে বিদেশি প্রজাতির ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি এ সমস্ত গাছ লাগিয়ে বনঞ্চল করা হয়েছে যেগুলোতে আসলে প্রাণীদের জন্য খাবার কোন উপযোগী কোন খাদ্য উৎপাদিম হয় না, এ সমস্ত গাছে পাখিরাও বসে না।তো এ কারণে মূলত মানুষও বেড়েছে মানুষের যেমন খাদ্য প্রয়োজন ঠিক তেমনি হাতিরও খাদ্য প্রয়োজন, এবং হাতির খাদ্য পাহাড়ে নাই বিধায় হাতিগুলো লোকালয়ে চলে আসে, ফসলের ক্ষেতে হানা দেয় ,বাড়ি ঘরে হানা দেয়-এ কারণেই মূলত হাতি এবং মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু। আর এটা দীর্ঘদিনে এখন একটা ব্যাপক আঁকার ধারণ করেছে, এখন লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে মাঝে মাঝে মনে হয় যে এই লড়াইয়ে কে টিকবে হাতি না মানুষ।
মোস্তাফিজুর রহমান: এই হাতিগুলোর তো মূলত ইন্ডিয়ার পাহাড়ে অবস্থান, এরা কি সারা বছর জুড়ে এই ধরণের বিচরণ করে না কি বাংলাদেশে এসে একটা নির্দিষ্ট সময়ে করে?
এম এ হাকাম হীরা: এখন বলতে গেলে বছরের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই এরা বাংলাদেশের সীমানায় থাকে, আর ভারত সীমানার মাঝে মাঝে চওেল যায়। এখানে যে সমস্যাটা রয়েছে তা হলো আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ের সমতলভূমিতে যেভাবে চাষাবাদ হয়, ভারত সীমানায় যেটা হয় না, ঢালু সীমান্তর মেঘালয়ে এটা পড়ে, ওখানে কিন্তু ওরা এভাবে ফসল আবাদ করে না। যার কারণে ওইখানে হাতির খাবার উপযোগী খাবারটা নাই এটা একটা, দ্বিতীয়ত যখন হাতিগুলো ভারত সীমান্তে প্রবেশ করে তখন ওইখানকার মানুষ বেশ শক্তভাবে এটাকে প্রতিহত করে, কারণ ওদের কাছে পটকা, মানে হাই পাওয়ারের এবং নানা রকমের পটকা আছে যেগুলো ফুটিয়ে হাতিগুলোকে শক্ত ভাবে প্রতিহত করে, যার ফলে হাতিগুলো আর ওইখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, এই কারণেই হাতিগুলো বাংলাদেশে মোটামুটি এখন স্থায়ীভাবে আবাশস্থল করে নিয়েছে এবং বিশেষ করে শেরপুরের গারো পাহাড়ের শ্রীবর্দী, নালীতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী এবং ওইদিকে বক্সিগঞ্জে, কুড়িগ্রামের রৌমারী, এইদিকে হালোয়ঘাট ও ধুবাউরা মানে এই অঞ্চল টুকুর মধ্যেই হাতি বিচরণ করছে।
মোস্তাফিজুর রহমান: ইন্ডিয়াতে ও হাতিগুলো ভালো অবস্থানে নেই, এপারেও হাতি গুলো ভালো অবস্থানে থাকতে পারেনা-এটা আমরা মোটামুটি একমত, আমরা একটু মান্নান সোহেলের কাছে আসি,আপনি একটু সূচনা বা কিছু বলবেন কি?
মান্নান সোহেল: হাতির আসলে কোন সীমানা নেই, ভারত বাংলাদেশে যেটা বলা হচ্ছে এটা হাতির বেলায় বা পশু পাখির বেলায় এটার সুযোগ নেই। হীরা ভাই বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যতটুকু জেনেছি যে, সীমান্তে ভারত বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে যখন বিভক্ত হয়েছে তারও আগে এখানে হাতির একটা বিচরণ ছিল। আপনি জানেন কিনা জানিনা আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতি পাকর নামের একটা জায়গার নামও রয়েছে। তো গারো পাহাড় অধ্যোষিত এখানে যে গারো পাহাড় রয়েছে এই পাহাড়ে হাতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তো হিরা ভাই যেটা বলেছেন তাতে আমি একমত পোষণ করছি এ কারণে যে, ১৯৯৫ সনের থেকে ভারতের পিক পাড় থেকে হাতি বাংলাদেশে চলে এসেছে। এরপর থেকে কিন্তু এই ১২০/১২৫টি হাতি, হীরা ভাই যেটা বলেছেন ১২০ বা ১৫০ টিরও বেশী সংখ্যক হাতি কিন্তু বেড়ে গিয়েছে এবং আজকে আপনাকে বলি এই মিটিংয়ে আসার আগে আমি বন বিভাগের সাথে কথা বললাম আজকে ঝিনাইগাতীর বালিজুরিতে একটা দল, নালতাবাড়ি মধুটিলা তাওদারা কাঁটাবাড়িতে একটা দল, এবং গোপালপুর বিট যেটা রামচন্দ্র ইউনিয়ন এবং হালুয়াঘাট এই বিটে একটা দল-এই তিনটে দল কিন্তু অবস্থান করছে। যেমন আজকে গতকালকে যে হাতি হানা দিয়েছে সেটা হচ্ছে দাওতানা কাটাবাড়িতে ৩৫ থেকে ৪০ টার মত হাতি অবস্থান করছে অর্থাৎ হাতির যে খাবারের যে প্রয়োজন, হাতির প্রতিদিন যে হাঁটার যে প্রয়োজন এইটা কিন্তু আমরা উৎপাদন করতে পারেনি, যেমন হীরা ভাই বন বিভাগের একটা কথা বলেছেন যে আসলে হাতির জন্য যে অবয়রণ্য সৃষ্টি করার বিষয় ছিল আমরা কিন্তু তা করি নাই। সম্প্রতি আমাদের পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান কিন্তু এসেছিলেন তখন তিনি বলেছেন যে, এতদিন হাতি মারা গেলে যে ভুর্তুকি আপনারা দিয়েছেন, তো বিকল্প কেন ব্যবস্থা নেন নাই যে ভুর্তুকি না দিয়ে কেন এটা হচ্ছে এই সমস্যাটা সমাধানে আমরা কেন যেতে পারলাম না, এখন হাতি যে লোকালয়ে নেমে আসছে শুধু খাদ্যের প্রয়োজনে, এর কারণ তো যে আজকে যে সংঘাত হাতির সাথে মানুষের এটা হওয়ায় কথা ছিল না, হাতি কিন্তু আমাদের ড্রয়িং রুমে চলে আসে নাই। আজ পর্যন্ত এই ফসলের যে হানি, মানুষের মৃত্যুর যে ক্ষতিপূরণ এবং সবমিলিয়ে বাড়ি-ঘরে হানা দিয়ে য়া করা হয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ২০১৪ থেকে আজ পর্যন্ত গণবিভাগ কিন্তু দিয়েছে এবং হাতির দ্বারা যে মানুষ মরেছে, শেরপুর এই পর্যন্ত তিনটা মামলা হয়েছে অনেকেই এখনো কারাগারে আছে এবং হাতির দ্বারা যে মানুষের মৃত্যু হয়েছে তারাও কিন্তু ক্ষতিপূরণ পেয়েছে এবং সবচেয়ে বিষয় হীরা ভাই এই কথাটা যেমন হাতি আগে মারলে কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে ৫০০০ টাকা সৎকারের জন্য দেওয়া হতো ,আর কোন ক্ষতিপূরণ তারা পেতো না। আজকে সাংবাদিকের এই লেখালেখির কারণে কিন্তু একটা পরিবার তিন লক্ষ করে টাকা পায়। তো আসলে হাতি এবং মানুষের যে সহ অবস্থান তৈরির যে বিষয়টা আমি এটাকে যুদ্ধ বলবো না, এটা সহ অবস্থান যে তৈরীর বিষয়টা সেই জায়গাটাতে বন বিভাগের কাজ করতে হবে সেই সঙ্গে মানুষেরও সচেতন হতে হবে। দেখেন বাইরের দেশগুলো তো হাতি মানুষের সাথে সহ অবস্থান একজন কাজ করছে, পিছন দিয়ে কিন্তু হাতি হেঁটে যাচ্ছে,এটা আমরা এখনো সৃষ্টি করতে পারি নাই এবং বন বিভাগ থেকে যে ধরণের কার্যক্রমে হয়েছে সোলার ফেন্সিং এটাকে আপডেট বলা হয় যে, সোলার ফেন্সিং এর মধ্যে দিয়ে হাতিকে তাড়ানো যায় কিন্তু দেখা গেছে যে হাতে এতটাই বুদ্ধিমান প্রাণী সেই এই সোলার ফেন্সিং তারের উপরে গাছে ডুম এনে গুড়িয়ে এখানে ফেলে দিয়ে নিছু করে তারপর কিন্তু সে ওভারকাম করে তার জায়গায় চলে গেছে। একটা কথা আছে যে, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটিÕ।
মোস্তাফিজুর রহমান: হীরা সাহেব যে উপজেলাগুলোর কথা বললেন, এখানে আসলে মানুষ কিন্তু একটু দারিদ্র সীমার নিচেই বসবাস করে। বেশির ভাগ মানুষই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে, অনেকেই সামান্য একটু জমি যেটা নিয়ে ওনারা চাষবাস করেন, আর একটা জিনিস যে, এই এলাকাটাতে কিন্তু বেশিরভাগই গারো উপজাতির একটা অবস্থান আছে, যতই আমরা একটু ভেতরের দিকে যাব একদম সীমান্ত রেখার পাশাপাশি গারো উপজাতিদের একটা অবস্থান আছে সেখানে। তো আমি আপনার কাছে পাশাপাশি আর একটা কোশ্চেন করে জেনে নিচ্ছি যে, ক্ষতির ধরণটা একটু বলবেন, মানুষের মৃত্যু, কতজন বা ফসলের জমিতে কি কি ধরণের ক্ষতি হচ্ছে, একটু ধরণটা সম্পর্কে একটু সামান্য বলবেন কি?
মান্নান সোহেল: প্রতিবছরই ধান এবং কাঁঠাল পাকার সময় ,যেমন বিশেষ করে আমাদের বেল্টে বোর এবং আমন দুইটা মৌসুম; দুইটা মৌসুমে যখন ধান পাকে তখন হাতি লোকালয়ে নেমে আসে অর্থাৎ হাতির জায়গাতে কিন্তু ধান হচ্ছে,ধানের জায়গা থেকে না কিন্তু। হাতি যেখানে বিচরণ করছে তার কাছেই ধান আছে, যেমন দেখেন হাতি খুব দ্রুত বুঝতে পারে আপনি যদি পাহাড়ে যান হাতির এলাকায় যদি আপনি পা রাখেন এই পা রাখার শব্দ টা ভাইব্রেশনটা তারা বুঝতে পারে, আমরা কিন্তু বুঝতে পারি না হাতি কিন্তু সে বুঝতে পারতেছে বুঝতে পারে যে মানুষ আসছে। তো আমরা আসলে তাদেরকে বুঝার মানে আমাদের এরক্ষত্রে পরিধিটা এতই কম যে এই জায়গাতে যে হাতি আসলেও আগেই আক্রমণ করতে চায় না, যখন প্রথমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, যেমন বিশেষ করে ওরা জানে এ জায়গার কোথায় ধান আছে, কোথায় খাবার আছে, কেননা ওদের ঘ্রাণ শক্তি এত প্রখর যে সে অনেক দূর থেকে এটা করতে পারে। আপনি পরশুদিন এই বন বিভাগেরই একটা কার্যালয়, বিট কার্যালয় বাকুচি, সেই বিট কার্যালয়ের যে চাল, ডাল ছিল কার্যালয় ভেঙ্গে তা তারা সেখান থেকে খেয়ে গেছে এবং তারা ভোরের দিকে দাউতারা কাটা বাড়িতে ছয়টা পরিবারের যে সদ্য বুরো ধানতলা ছিল, চাল ছিল সেগুলো কিন্তু খেয়ে ফেলে এবং নষ্ট করে গেছে, যাওয়ার সময় কলার বাগান ছিল সেটা কে ও নষ্ট করে দিয়ে গেছে। তো আসলে মূলত ওরা ওদের আগমনটাই খাদ্যের জন্য, কাউকে মারার জন্য না, খাওয়ার জন্যই মূলত নেমে আসে আর এই সময় এই হাতির হানায় বা সংঘর্ষে এই ধরণের ঘটনা ঘটে।
মোস্তাফিজুর রহমান: খুবই সুন্দর বলেছেন, এই যে পরিস্থিতি স্থানীয় কৃষকদের তো একটা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আমরা সবসময় দেখি, তাদের এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কতটা কার্যকর এবং সেটা ন্যয় সংগত কিনা না, নাকি কি উল্টো প্রাণী আর পরিবেশের প্রতি নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে বিষয়টা?
এম এ হাকাম হীরা: আপনার একটা কথা দিয়ে শুরু করি সেটা হচ্ছে যে পাহাড়ি এলাকার মানুষ মূলত দারিদ্রতার মধ্যে অবস্থান করে, পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনধারণের সূত্রটা কি? যে তারা এক সময় পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করত এগুলো বাজারে বিক্রি করতো এবং পাহাড়ের যে ঢাল আছে সেই ডালে চাষাবাদ করতো এবং সেই চাষাবাদ টা হতো পাহাড়ি যে ঝরণাগুলো আছে কিংবা বৃষ্টির সময় যে পানিগুলো জমা হয়ে থাকে সেই পানি দিয়ে কিন্তু মূলত কৃষি কাজটা করে, আমি যেটা শুরুতেই বলেছিলাম যে ৮০’র দশকে এই পাহাড়ের বনাঞ্চল গুলো ধ্বংস হয়েছে এবং অবাধে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে যার ফলে পাহাড়ে যে প্রাকৃতিক পানির উৎস ঝরণা পাহাড়ি, ছড়া যেটাকে আমরা বলি সেই ঝর্ণার উৎসব মুখ গুলো কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে পাহাড়ে কিন্তু এখন পানির সংকট আছে। এটা হাতির জন্যও একটা সমস্যা, মানুষের জন্যও সমস্যা। আর মানুষ ওই যে পাহাড়ের ঢালে যেটুকু জমি আছে সেটা সরকারি জমি না নিজের জমি সেটা দেখার বিষয় না তারা এখানে আবাদ ফসল করে সামান্য যা ধান পায় সেটা তাদের হয়তো সারা বছরের ভাতের যোগানটা হয় এবং সারা বছর সে কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। তো আগে যেমন পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় থেকে এই লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি করতো এখন যেহেতু করাকরি এটা করতে পারেনা, যার ফলে এই পাহাড়ি এলাকার অনেক মানুষ অনেকটা রক্ষা পেয়েছে আমাদের নাকুগাও স্থল বন্দর হওয়ার কারণে সেখানে অনেকেই শ্রম দেয়, এ নাকুগাও স্থল বন্দরে এসে শ্রম দেয়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে ওরা দিন রাত খেটে খাওয়ার লোক, তো এই অবস্থায় যখন হাতির দল এই পাকা ফসলের মাঠে নামে হাতির নিজের খাবার সংগ্রহ করার জন্য, তখন আসলে একটা মানুষের মাথা ঠিক থাকার কথা না, কারণ ওর ঘামের ফসলটুকু ধান তো কাজেই তখন মানুষও কেরোসিন তেল দিয়ে মশাল জ্বালিয়ে এ মশাল দিয়ে ঢুল পেটটা, মানে এগুলো আওয়াজ করে, হৈ-হুল্লোড় করে হাতিকে তারা দে এবং কিন্তু দীর্ঘদিন এইভাবে হাতি তাড়ানোর ফলে হাতি কিন্তু এখন মশালে ভয় পায় না, এখনো আর হাতি কোন কিছুতেই ভয় পায় না, আমরা যে হাতি মানুষের লড়াই বলতেছি ওইখানে বলতেছি লড়াই মানে একসময় হাতি একটু শব্দ মানুষের আওয়াজ পেলেই হাতি চলে যেত, কিন্তু এখন হাতি সুযোগ পেলে মানুষের উপর আক্রমণও করে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে প্রশ্নটা আপনি মান্নান সোহেলকে করেছিলেন যে, মানুষের আক্রমণে এই পর্যন্ত কিংবা অসুস্থতার কারণে এই পর্যন্ত ৩৬ টি হাতি মারা গেছে। আবার মানুষ কিন্তু এই যে গত সপ্তাহে দুইজন সহ এখন পর্যন্ত ৩৩ জন মানুষ মারা গেছে, তার মানে ঊভয় ক্ষেত্রে মৃত্যু প্রায় সমান সমানই। তারমা নে যুদ্ধটাকে আমরা আসলে বলতেই পারিনা লড়াইটা বলতেই পারি, এটাকে লড়াই বলছি কারণ দেখে, গত সপ্তাহ উপজেলায় যে দুইজন মানুষকে মারা হয়েছে তার মধ্যে একজন হাতিগুলো যখন একটা লিচু বাগানে তখন সবার সঙ্গে ওই দিন মজুর হাতিকে প্রতিহিত করতে চাযয়, তারপরে হাতি ওকে মারে। পরে আরেকজন আদিবাসীকে মারে, এটা ছিল খুব নৃশংস মৃত্যু, মানে আমি দেখি নাই যে, সে সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরছিল সিএনজি যুগে তার সঙ্গে আরো ৪-৫ জন ছিল, হাতি রাস্তার ভিতরে দাড়িয়ে এদেরকে আক্রমণ করে, তবে সবাই পালাতে পারলও সে পালাতে পারেনি, ফিলিপ মারাক সম্ভবত নামটা এবং এর যে লাশ তার কোন চিহ্ন নাই, মাথায় একদিকে হাত একদিকে, পা একদিকে ,পুরা শরীরে মানে লাশের কোন নমুনা নাই ছিল না।
মোস্তাফিজুর রহমান: আমিও দেখেছি ওটার কোনো চিহ্ন বুঝা যাচ্ছিল না, শুধু বুঝা যাচ্ছে হতে পারে।
এম এ হাকাম হীরা: তাহলে মানুষের প্রতি হাতিটা কতটা ক্ষুদ্ধ হয়ে এভাবে একজন মানুষকে মারে। এখান থেকে আসলে বুঝা উচিত যে হাতি বুদ্ধিমান প্রাণী, হাতি বিচক্ষণ প্রাণী,হাতিকে কে বলা হয় বনের পাহারাদার, হাতি আমাদের জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়কে রক্ষা করে সবই ঠিক আছে। কাজেই হাতিরা তার স্লোগান তুলতে পারে না, আওয়াজ করতে পারে না হাতিদের আসলে চাওয়াটাই এইটা যে ওদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা হোক, ওদের খাদ্যের যোগান দেওয়া হোক, তাহলেই হয়তো হাতি আর মানুষের মধ্যে যে পাহাড় এলাকায় যে অবস্থানটা সহঅবস্থানের কথা বলা হয়েছে, সেটা তৈরি হবে সেটা তৈরি করার জন্য উদ্যোগ হতে হবে এছাড়া এই সমস্যা সমাধানের আর কোন উপায় নেই।
মোস্তাফিজুর রহমান: তাহলে পরিবেশ বান্ধব বা সহানুভতিশীল কোন ধরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
এম এ হাকাম হীরা: এখানে আসলে আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ করে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ যারা আছেন আমাদের দেশে তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি যতটুকু জেনেছি, যে প্রথমত এই হাতি তাড়ানোর জন্য খুবই ইন্টারেস্টিং কিছু ব্যাপার আছে, একেক সময় একেক সরকার এসে এক এক রকম পদক্ষেপ নিয়েছে, তো একসময় মানে কেউ এসে বলল যে আফ্রিকায় আমি দেখেছি মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিলে হাতি আর থাকে না, এই মরিচের গুড়া ছিটানোর ব্যবস্থা করা হলো, তারপরে বলা হলো এইটা ঠিক না, কাটাযুক্ত গাছ লাগিয়ে দিলে হাতি আসবে না,এই কাটাযুক্ত গাছ রোপন করা হলো তারপর এল যে সোলার ফেন্সিং করলে হাতি আর আসবেনা, তো সোলার ফেন্সিং ও করা হলো যে, আমাদের প্রায় ৪০ কিলোমিটার বন আছে এর মধ্যে ১৩ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিন করা হয়েছে কিন্তু এই যে মান্নান সোহেল বলেছে যে সোলার ফেন্সিং ও হাতি কতটা বুদ্ধিমান সেটাকে গাছ ফেলে তারপরে সে চলে আসে সোলার ফেন্সিং টাও খুব একটা কার্যকর না। তো আমি যেটা মনে করি বন্য প্রাণীর বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তারা যা মনে করেন সেটা হচ্ছে যে হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ বা করিডোর নির্ধারণ করে সেটাকে উন্মুক্ত করা এই উদ্যোগটা নিতে হবে সবার আগে, কারণ একটা হাতি প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার হাটে, এবং হাতির অভ্যাসটাই হচ্ছে সে হেঁটে হেঁটে খাবার খায়, যে বনাঅঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে আমি আগেই বলেছি সেই ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি গাছ যেগুলো আমাদের গারো পাহাড়ের পরিবেশ উপযোগী গাছ না, সেগুলো রোপন করার ফলে পাহাড়ে যেন ন্যাচারাল কিছু খাদ্য ছিল আগে এসে দিন এক উপজাতি আমাকে বলছিল যে সে কি পাহাড়ে আমরা দেখলাম এখন কি পাহাড় আছে,আমরা এক সময় ক্ষুধা লাগলে পাহাড়ে চলে যেতাম সেখানে আমলকি, হটপকিপি, বড়ই, কলা এগুলো পাহাড়ে ছড়াই থাকতো এবং আমরা পাহাড়ে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে ফিরে আসতাম। এখনতো গারো পাহাড়ে ওই পরিবেশ নাই যেটা আছে সেটাও নাই, তো হাতিগুলো খাবে কি, আবার খাবারের পরে পানি লাগবে পাহাড়ি ছড়াগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তাহলে হাতি যাবে কোথায় এ লোকাল আসবে না কি করবে। তো কাজেই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের যেটা উচিত হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ বা করিডোর নির্ধারন করা এটা হল প্রথম কাজ, দুই নম্বর কাজ হচ্ছে আমাদের এই কি বলে এই যে হাতির খাদ্য সংস্থান, একটা খাদ্য সংস্থান হাতি যে সমস্ত খাবার খায় সে সমস্ত খাবার ব্যবস্থা করা। তো এইটার পাশাপাশি আমরা মানুষের সঙ্গে যে সহবস্থানের কথা বলছি সেটা করার জন্য যেটা প্রয়োজন যে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যে হাতি আসলে আমাদের শত্রু না হাতি আমাদের বন্ধু, এই বন্ধুর সম্পর্কটা তৈরি করার জন্য প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর, এখন একটা হাতির দল যখন আসে মানুষ যেইভাবে ওকে দেখার জন্য ভিড় করে তারপর ওকে যেভাবে ঢিল ছুড়ে এবং ওর দিকে যেভাবে তেরে যায় তো এইটা তো এই কারণে হাতি ক্ষুব্ধ থাকবেই, হাতির ভয় তো এই কারণেই ভেঙে গেছে। আরেকটা জিনিস যেটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত, যে সরকারের পক্ষ থেকে হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়, আহত হলে ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, আর ফসলের ক্ষতিপূরণের জন্য একর প্রতি ৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় যে সমস্ত জমিগুলো আবাদ করা হয় এই সমস্ত জমির অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি না অর্থাৎ বন বিভাগের জমি অথবা সরকারি জমি।এ কারণে যখন ক্ষতিপূরণের টাকা সে আনতে যায় তখন তার কাগজ নেই জমির সে মালিকানায়ই প্রতিষ্ঠান করতে পারে নাই, তো জমির ক্ষতিপূরণ পাবে সে কিভাবে এক, আবার যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে তারাও ক্ষতিপূরণ আনতে গেলে এই টাকা উঠাতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, এটাই আমাদের একটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাটাই উন্নয়ন প্রয়োজন এবং ক্ষতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি ক্ষতিপূরণটা ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে আমার মনে হয় যে মানুষের যে হাতির প্রতি যে ক্ষোভ, আতঙ্ক যেটা বেড়েছে সে সেটা অনেকটা কম হতো,কারণ এখন অনিশ্চয়তা সে ক্ষতি হওয়ার পরে মানে ক্ষতিপূরণ পাবে কি পাবেনা অনিশ্চয়তার মধ্যে তাকে তো আমার মনে হয় ওইদিকে একটা উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আর একটা উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন সেটা হল টেকসই সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ এখন আর একটা যেটা সমস্যা আছে যেমন বন বিভাগ সঙ্গত কারণেই বন দেখাশুনা করে তো শুধু বন তো আর কোন প্রশাসন না, এখানে সরকারি ডিসি, জেলা প্রশাসনের খাস জমি আছে, এই জমিতে বন বিভাগ যেতে পারে না আবার বন বিভাগের জমিতে জেলা প্রশাসন যেতে পারেনা এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি সেটা হচ্ছে যে আসলেই টেকসই সমাধানের জন্য সরকার, প্রশাসন, বন বিভাগ এবং মানুষ এবং যারা বিশেষ করে এই প্রাণী নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এখানে সামনে অগ্রসর হলে তাহলে যে দ্বন্দ্বের কথা আমরা বলছি এই দ্ধন্দ নিরশন এবং উন্নয়ন সম্ভব।
মোস্তাফিজুর রহমান: এতে করে কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা ও আসবে জীববৈচিত্র্য ও রক্ষা পাবে এবং আপনি যেটা বলেছিলেন যে স্থানীয় নীতি নির্ধারক এবং স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ এখানে সামাজিক ব্যক্তিত্ব বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সকলে মিলে একটা সম্মানিত পদক্ষেপ দরকার? আমি আবার মান্নান সাহেবের কাছে আসি,বন বিভাগের ভূমিকা এ পর্যন্ত কেমন ছিল এবং এই সংকট মোকাবেলায় সেটা কতটুকু কার্যকর বলে মনে করেন আপনি শুধু বন বিভাগের বিষয়টা?
মান্নান সোহেল : জানেন যে এ.আর.টি মানে এলিফ্যান্ট রেস্পন্স টিম, যেটা স্বেচ্ছা শ্রমিক ভিত্তিতে কাজ করে আমরা শেরপুর জেলাতে ইয়ে এআরটির মেম্বার আছে ৫০০ শতাধিক এর উপরে অর্থাৎ তারা সীমান্ত সংলগ্ন বসবাস করে এবং তারা ইলিফা রেসপন্স টিমের সদস্য আবার একটা গ্রামে ১০ বা ১২ জন একজনকে প্রদান করে এরকম কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে হ্যান্ড মাইক দেওয়া হয়েছে, যার প্রয়োজন বাইনোকুলার দেওয়া হয়েছে যেন হাতি আসলে তার একটা এলাকাতে জানান দিয়ে যেতে পারে হাতি আছে এলাকায় আপনারা সাবধান হয়ে যান, এছাড়া বন বিভাগ যেটা গণ সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন লিপ্লেট করে আমার কাছে মনে হয়েছে হাতির ক্ষুধার কাছে এগুলো আসলে কোন বিষয় কিছুই না। তবে আনন্দের বিষয় যে, এবার প্রধান বন কর্মকর্তা বলেছেন যে, এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমকে একটা সম্মানী যেন দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করা, এটা হচ্ছে একটা কার্যকরী ব্যাপার কারণ সেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কেউ আসলে কাজ করতে চায় না, রাতি এলাকায় এসেছে যদি আপনার এলিফেন্ট রেসপন্স টিম খুবই শক্তিশালী হয় এবং জানান টা যদি সঠিক মত দেওয়া হয় হীরা ভাই যেটা বলেছে যে, এই মৃত্যুর সংখ্যাটা এতটা বাড়তো না এবং হাতির মৃত্যুর সংখ্যাও এতটা বাড়তো এটা আমি মনে করি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে, যে যখন আপনার এলাকায় হাতি আছে এটা যদি আগেই জানান দেওয়া হয় এলাকাবাসীকে তাহলে এলাকাবাসী কিন্তু সাবধান থাকতে পারবে। এই যে একটা জায়গা বন বিভাগ, এখানে একটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে তাদেরকে ওনারারিয়ামের ব্যবস্থা করে দেওয়া তাহলে তাদের কাছ থেকে প্রতিদিনের আপডেটটা নেওয়া সহজ এবং দায়বদ্ধ হিসেবে কাজ করার একটা জায়গা তৈরি হবে আর সবচেয়ে ভালো একটা কাজ করেছে এই অন্তবর্তী কালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা। আপনি দেখেন ২০ তারিখের রাতে ঝিনাইগাতী গজনী বাঁকাতোরা গ্রাম এবং দরবেশ তলা দুইটা জায়গা ব্যাপক দুইটা হাতির পায়ে পৃষ্ঠ দুইজন কিন্তু মারা গেছেন এবং ব্যাপকভাবে মানে নিঃশংস যেটা বলে মৃত্যু হয়েছে, তো এটার দুইটা পরিবারই উপার্জন করেন যে দুইটার ব্যক্তি ছিলেন দুইজনই মারা গেছে। একজন ভ্যানচালক ছিলেন, একজন দ্বীন মজুর ছিলেন-এদেরকে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে এই সরকার বন বিভাগের মাধ্যমে দুজনকে তিন তিন ০৬ লাখ টাকার ক্ষতিপূরন দিয়েছে। হীরা ভাই তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওই পরিবারগুলোর তো এটা একটা ভালো উদ্যোগ, আর বন বিভাগের আমি যেটা বলবো যে ক্ষতিপূরণের যে জায়গাটা সে জায়গাটা আরো দ্রুত করা উচিত। এই বুরোতে ধান খেয়ে গেল,আমন আসলো, এরপরে বোর আসলো তারপরে আপনি ক্ষতিপূরণ পেলেন তাহলে আমি মনে করি হাতির প্রতি বৈরিতা বা মানুষের যে জায়গাটা এটা আরো কঠিন করতে হবে। যত দ্রুত এদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে, সে জায়গাটা ভালো হবে, তবে এর অপজিটে একটা কথা আছে, যারা আরেকটু ছোট্ট করে বলি যারা এই পাহাড়ের বা ঢিলার ঢালে ধান চাষ করেছেন তারা কিন্তু প্রকৃত মালিকটা, তারা কারো কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বর্গা নিয়ে এখানে চাষ করলে,তাহলে ওই জমির মালিকের কাগজটা রয়ে গেল জমির মালিকের কাছে আর চাষ করছে সেখানকার একটা ক্ষুদ্র নীগোষ্ঠী বা সেখানকার একটা প্রান্তিক কৃষক ক্ষতিপূরনটা সে আসলে দেখে না, এই ক্ষতিপূরণটা কাগজের বলে পেয়ে যায়, কিন্তু ওই সেই জমির মালিক। একরকম আপনি ১০০ টা ঘটনার মধ্যে ৯০ টা ঘটনা হচ্ছে এরকম আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমি এখানে যাবোই না এই যে কথাগুলো বললাম একটা কথা আমি মানে একমত না, এই কারণে আমরা কেন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এই গারো পাহাড়ের টিলা গুলোতে ধান চাষ না করে অন্য কোন কিছু চাষ করি না কেন। শ্রেণি পরিবর্তন করা উচিত ফসলের চাষাবাদের ভিন্নতা কেন আনছি না, এটা আরো ভালো যারা প্রাণী বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ তারা আরো ভালো বলতে পারেন। এখানে আমার মনে হয় যে, ক্ষতি করলে যদি ৫০,০০০/০০ টাকা দেওয়া হয় তাহলে আমরা কেন এই জায়গা লিজ নিয়ে নিচ্ছি না সরকার থেকে, তাদেরকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না, বা এখান থেকে কেনো পূর্ণবাসিত করা হচ্ছে না, হাতির দ্বারা প্রতিনিয়ত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন হাতিকে তারা মারতে যাচ্ছে, বৈদ্যুতিক তার রাখছে ক্ষেতের কাছে ফসলের কাছে ,এবার যেন না খেতে পারে এই ফসল ফলে হাতি মারা যাচ্ছে তো আসান্বিত হচ্ছে যে বন বিভাগের যে রেসপন্স টিম তাদেরকে যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে, তাহলে আমি মনে করি শেরপুর জেলায় হাতি এবং মানুষের মৃত্যুর হারটা কমে আসবে এবং যেটা হচ্ছে হাতির জন্য আহারের ব্যবস্থা করতে হবে, হাতির খাদ্য যদি পাহাড়ে থাকে তখন হাতি লোকালয়ে আসার চেষ্টা করবে না এই হচ্ছে বন বিভাগের ধারণা।

মোস্তাফিজুর রহমান: হীরা সাহেব সম্ভবত আজকে থেকে তিন দিন বা চার দিন আগে আমাদের সম্মানিত মাননীয় পরিবেশ উপদেষ্টা মহোদয় গিয়েছিলেন পরিদর্শন করতে উনার এজেন্ডা ছিল এটা একটা, আরেকটা ছিল ট্যুরিজম, সম্ভবত ট্যুরিজমকে কেন্দ্র করে। আমি ট্যুরিজমের দিকে যাচ্ছি না আমার প্রশ্ন হচ্ছে উনি বলেছিলেন যে হাতির জন একটা ‘অভয়ারণ্যÕ সৃষ্টি করতে হবে, এখন এই ‘অভয়ারণ্যÕ সৃষ্টি কি সম্ভব?
এম এ হাকাম হীরা: বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ,উনি মানে পরিদর্শনে এসে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে খুবই চমৎকার এবং আন্তরিকভাবে কিছু কথা বলেছেন। আমার মনে হয় ওগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের একটা নিদর্শন হবে। যেমন, উনি প্রথম বন পরিদর্শন করেই বলেছেন যে পাহাড়ি এলাকায় ইউক্লিপটাস এবং আকাশমনি গাছ রোপন করে বনকে ধ্বংস করা হয়েছে, এটার জন্য দায়ী বন বিভাগ এবং উনি নির্দেশন দিয়েছেন যত দ্রুত সময়ের মধ্যের সম্ভব সে সকল গাছ যেগুলো হাতি খায় বা পরিবেশ উপযোগী- এই সে ধরণের গাছ দ্বারা গাছগুলো রূপান্তিত হবে এবং তিনি বলেছেন যে এগুলোর যখন রোপন কার্যক্রম আবার শুরু হবে, আমি যদি থাকি আমি আবারও আসবো এখানে। এটা তারা নিঃসন্দেহে একটা ভালো কথা। তারপরে উনি হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য উনার সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ডক্টর রেজা আলি খান, যার কাছ থেকেও তিনি পরামর্শ নেন এবং উনিও এ কথাটা বলেছেন যে সরকার তো একা না, বনবিভাগ আলাদা কেউ না, জেলা প্রশাসন আলাদা কেউ না, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে এখানে ‘অভয়ারণ্যÕ গড়ে তুলতে হবে বা হাতি নিরাপদ ভাবে বসবাসের জন্য কি করা প্রয়োজন সেটা খুব দ্রুততম সময়ে পরিকল্পনা তৈরি করা হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করা হবে, তিনি কিন্তু এইভাবে কথা বলেছেন। তো তার উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে ভাল, কথাগুলো চমৎকার আমাদের দেশে তো কথা হয়, কিন্তু কাজ হয় না। অতীতে এই অভয়ারণ্যের কথা এসেছিল ২০১৬ সনে। এখানে আরেকটা জিনিস যা মানে হাতি এবং গারো পাহাড়ের পর্যটন গড়ে তোলার জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে এবং সেই সময় একটা পরিকল্পনা ছিল যে হাতির জন্য অভয়ারণ্যটা কেন করা হবে শুধু হাতি নিরাপদে থাকবে এই কারণে না, গারো পাহাড়ে যাতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ে, এ হাতি দেখার জন্য মানুষ যাতে এখানে ছুটে আসে এবং তাদের পরিকল্পনা টা ছিল এরকম যে একটা সুচ টাওয়ার থাকলো কিছু দূর হাতিগুলো যেখানে অবস্থান করছে, পর্যটকরা আসলো এসে ওই টাওয়ারের উঠে হাতিগুলো কে দেখলো এবং পাশাপাশি আমাদের যে আদিবাসী কালচারাল বা সংস্কৃতি আছে সেটাকে চাঙ্গা করে একদম বিদেশের মতো কোন পর্যটক ঢুকলেই সেই আদিবাসী সংস্কৃতির ওদেরকে গাইড করা। ওই সমস্ত বিষগুলো পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে কিন্তু নেওয়া হয়েছিল। কাজেই আমি এ কারণেই বলি কথা বলা হয় সুন্দর, মানে মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে, কাজেই আমাদের পরিবেশ মাননীয় পরিবেশ উপদেষ্টা তিনি যে সমস্ত সুন্দর কথা বলেছেন সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে গারো পাহাড়ের হাতে মানুষের দ্বন্দ্ব নিশন হওয়া ছাড়াও একটা চমৎকার পর্যটন এলাকায় হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে সারা বিশ্বে শুধু বাংলাদেশের না, তো আরেকটা জিনিস যেটা আমরা বলছি যে মানুষের ভিতরে সচেতনতা বাড়াতে হবে আপনি সুন্দর করে বলেছেন এই বিষয়টা এটা বলি না, যে আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের দিকে তাকাই শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড এই সমস্ত জায়গায় কিন্তু মানুষ হাতিকে পূজা করে, আর আমাদের দেশের মানুষ হাতি দেখলে হাতিকে ঢিল মারে এই যে পার্থক্যটা এ পার্থক্যটা দূর করার জন্য উদ্যোগটা নিতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান: আমরা আসলে একটা শব্দ জানি ন্যাচার বেস্ড সলিউশন, প্রকৃতিতে যা আছে ওই অবস্থাতেই তার প্রবলেমটাকে সমাধান করা, ন্যাচার বেস্ড সলিউশন। এখন আমাদের এই যে গারে পাহাড় যেটি প্রচুর সম্ভাবনাময় একটা ট্যুরিজমের জন্য এরিয়া, এখন এই ট্যুরিজমের এরিয়াতে এমনি করে মানুষের মধ্যে কিন্তু একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বলবো, না যুদ্ধ বিরাজমান বলবো, কারণ হাতি মারা যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টা এ পর্যন্ত মারা গেছে; না মানুষও প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন মারা গেছে এবং যে জিনিসটা আমি টিভিতে দেখেছি বা ফেসবুকেও দেখেছি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখেছি সর্বশেষ যে লোকটা মারা গেলেন উনার ছিন্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।কি নিশৃংস ভাবে তার মৃত্যু, এই অবস্থায় একে আমি ট্যুরিজম কে বৃদ্ধি করে আরো যখন লোক বাড়াবো তখন কি এই পরিবেশটা কি ওইভাবে ধরে রাখা সম্ভব হবে, আমার তো মনে হয় মানে প্রবলেমটা আরো বাড়বে কারণ, এই এমনিতেই আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেশি যে কারণে বনের ওপর আমাদের হাত গেছে, বনটাকে আমরা উজাড় করে ফেলেছি, হাতির আগমন ঘটেছে, তো মান্নান সোহেল আপনার কাছে আমার প্রশ্ন এই ট্যুরিজম টা কি অবশ্যই দরকার আছে, আমাদের দেশের সমৃদ্ধির জন্য দরকার আছে এবং সম্ভাবনাময় এরিয়া, ডেফিনেটলি কিন্তু সেটা কতটুকু সম্ভব আসলে কতটুকু উচিত বলে মনে করেন আপনি এ হাতির প্রেক্ষাপটে জানতে চাচ্ছি।
মান্নান সোহেল: ট্যুরিজম হচ্ছে একটা দেশের অর্থনীতি, এটাকে পেনাল্টি বলা হয়, যা খুব দ্রুত আর্ন করার একটা জায়গা তৈরি হয় এবং এটাকে খুব স্পেইড করার একটা জায়গা তৈরি হয়, তো তার আগে আমি বলছি যে আপনি বলে দিচ্ছেন যে খুব নিশৃংসভাবে শেষ হাতিটার আক্রমণে মৃত্যুবরণ করল, সেটা হচ্ছে এফিলিস সাংমা বড় গুজীতি বাড়ি, তো তার শরীরের বিভিন্ন অংশ শেষে কিন্তু ওই বস্তায় ভরে নিয়ে আসতে হয়েছে, তো আমরা এটা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছিলাম, তো আমাদেরকে বন্যপ্রাণী যারা কাজ করেন এবং বন বিভাগ যারা কাজ করেন তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম যে আসলে এইভাবে নিশৃংসভাবে কেন মারা হলো এটার কারণ কি। তো তারা অনেক কথাই বলেছে তবে আমি যেটা আপনাকে বলি, সেটা হচ্ছে তাদের ধারণা তবে পূর্বে হয়তো হাতিকে এমন ভাবে কোন বিরক্ত করে থাকতে পারে কারণে এই ধরণের একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট করা হয়েছে, আর যেটা আপনি বলেছেন যে আমাদের এখানে যদি পর্যটন করা হয়, পর্যটনের একটা পর্যটন কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে। একটা মানুষ কিন্তু তার কর্মসংস্থানে ১৮ টা জায়গা তৈরি করে, এটা আমরা আদৌ যেটা হাতির করিডোর বলা হয় সেখানে আমরা এগুলো পারবো কিনা। হীরা ভাই খুব সুন্দর করে বলেছে, যে আমরা যদি বলি এরকম একটা ওয়াচ টাওয়ার করতে পারিস এখান থেকে যদি আমরা বাইনোকুলার দিয়ে দেখার চেষ্টা কারি এবং হাতিকে যদি অভয়ারণ্য তৈরি করে দিতে পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে এই গারো পাহাড় বেল্টটা, যেটা এখানে আছে এখানে হাতি বসবাস করে, সারা বছরই হাতি থাকে কিন্তু মানুষের সাথে কোন সংঘাত হয় না এরকম একটা পরিবেশ করা যেতে পারে, তাহলে আমি মনে করি আমাদের যে পর্যটনের যে সম্ভাবনার যে জায়গাগুলো আছে এটা দারুণভাবে কাজে লাগানো সম্ভব কিন্তু আগে আপনাকে ভাবতে হবে যে বন্যপ্রাণীকে কোন রকমের ক্ষতি না করে, ডিস্টার্ব না করে আমরা যদি এটা করতে পারি তাহলে সারা বাংলাদেশ থেকে বা দেশের বাইরে থেকে একটা সময় ময়মনসিংহের এই শেরপুর জেলায় এই হাতি দেখার জন্য তার পরিবার, তার স্বজনদেরকে নিয়ে চলে আসতে পারে, আর বলছি একটা মানুষ যখন ভিজিট করার জন্য আসবে ১৮ টা মানুষ এখানে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তৈরি হবে। আমরা মনে করি যে আসলে আগে এটি প্রায়োরটি পাবে, তারপর প্রাইরোটি পাবে পর্যটন।
মোস্তাফিজুর রহমান: একটা বিষয় হচ্ছে এরকম যে যখন মানুষ হাতির কাছে যায়, বা দুই পক্ষের মাঝে একটা মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় তখন ওই যে ফসলের যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের যেমন একটা গ্রুপ তাকে, আবার সৌখিন টাইপের মানুষ মানে শুধু দর্শক টাইপের মানুষ তাদেরও একটা গ্রুপ থাকে এবং ওদের কিন্তু একটা নিজ থেকে শুধু শুধু হাতিকে একটা ডিস্টার্ব এর প্রবনতা লক্ষ করি, পর্যটক যারা আসবেন উনাদেরকে নিশ্চয়ই সে ধরনের কোন একটা বাইন্ডিংস থাকবে যে আমি কতটুকু দেখতে পাবো কতটুকু কি করতে পারব আমরা আশায় থাকলাম?
মান্নান সোহেল: আপনি হয়তো দেখে থাকবেন যেখানে কিন্তু বন্য একটা হাতিকে বনে রেখেই বন বিভাগ থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুইটা ক্যাম্পে তাকে পুনরায় প্রথমে ০১ মে সাফারি পার্কের যে জনাব মুস্তাফিজ ভ্যটেরিনারি সার্জন, তিনি বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে কিন্তু এখানে আসেন। শেরপুর, নালিতাবাড়ি বন বিভাগে যারা আছেন বন্যপ্রাণী যারা আছে তাদের এটা কিন্তু একটা দারুন বিষয় ছিল যে একটা বন্যপ্রাণী তাকে অচেতন করে তাকে চিকিৎসা দিয়ে যেমন পায়ের ভিতরে বল্লাম দেওয়া ছিল এটা ইন্ডিয়াতে সম্ভবত হয়েছিল, আমি শিওর না। তো ক্ষতটা ছিল অনেক বড়, ডান পায়ে ছিল হাতির, সেখানে তারা ওইখান থেকে অস্ত্র পাচার করে পুজ ও অন্যান্য জিনিস বের করে আবার ব্যান্ডেজ করে দিয়ে ইনজেকশন করে দিয়ে তাকে আবার পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ১৭ তারিখে আবার খুঁজে বের করে ফলোআপ যেটা আমরা করে থাকি আবার নতুন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, আমি বনবিভাগের সাথে কথা বলেছি, দামি দামি ইনজেকশন তারা দিয়েছে,এক একটা ইনজেকশনের দাম ২০ হাজার টাকার মত, এভাবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এইটা কিন্তু একটু ডিফারেন্ট ছিল যে বন বিভাগের অন্যরকম একটা ভালোবাসা।
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার প্রশ্ন হচ্ছে হাতিটার সর্বশেষ কি অবস্থা ,এটা কি ইন্ডিয়াতে চলে যেতে পেরেছে নাকি এখনো বাংলাদেশের বনেই আছে?
মান্নান সোহেল: হাতিটা এখন ও আছে,হাতিটাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে প্রয়োজনে আবার চিকিৎসা দেওয়া হবে,চমৎকার করে বলেছেন যে ডক্টর রেজা খান যিনি আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ তিনি কিন্তু এখানে এসেছিলেন তিনি সবসময় এখানকার খবর রাখেন তিনিও চমৎকার মেসেজ দিয়ে গেছেন। তো আমরা আশা করব যে এখানে হাতির অভয়ারণ্য সৃষ্টি হবে এবং একটা সময় ট্যুরিজম তৈরি হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান: মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মানুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য সঙ্গবদ্ধভাবে কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার এবং সেটা ভলেন্টিয়ার পর্যায়েও পারে সরকার, তো অবশ্যই ভূমিকা রাখছে, ভালো ভূমিকা রাখছে সরকার সেটা আর ডঃ রেজার কথা বললেন এ ধরণের মানুষদেরকে নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। হীরা ভাই সরকারের নিকট আপনার সুপারিশগুলো বলবেন?
এম এ হাকাম হীরা: পরামর্শ ও সরকারের নিকট দাবি এটাই যে সমস্ত কিছু কথার মাধ্যমে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, যেটুকু সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এজন্য ধন্যবাদ। সোলার ফেন্সিং থেকে শুরু করে হাতির খাবার জন্য পরিবেশ উপযোগী গাছ লাগানো, এগুলার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ, তো আমি আবারো যেটা আবেদন জানাবো বা দাবি জানাবো সেটা হচ্ছে যে প্রথমত দ্রুততম সময়ে হাতির করিডোর ও খাদ্য সংস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং দ্বিতীয়ত সোলার ফেন্সিংও যেটুকু বাকি আছে সেটুকু যাতে করা হয়, তৃতীয়ত হচ্ছে যে, সচেতনতা বাড়ানোর মানুষের মাঝে এবং ক্ষতিপূরণের যে দীর্ঘসূত্রিতা আছে সে দীর্ঘশক্তিটা দূর করা হোক তাড়াতাড়ি এবং টেকসই সমাধানের জন্য সবাই মিলে একটা সম্মনিত উদ্যোগ নেওয়া এগুলোই হচ্ছে আমার সরকারের নিকট দাবি এবং আশা করব আসলে ট্যুরিজম বলে যে মানুষকেও তার জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে, আর সেটা শুধু পাহাড়ের ঢালে ফসল করে হাতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকবে মানুষ এটা অসম্ভব না, এই কারণে ট্যুরিজমের কথাটা আসে, ট্যুরিজমটা যদি হয় এখানে মান্নান সোহেল বলেছে যে ১৮ জন সুবিধাভোগী তৈরি হয়, প্রপার সুফলভোগী তৈরি হয়। ট্যুরিজম প্লাস হাতি মানুষের সহ অবস্থান তৈরি করা এবং পর্যটকদের যদি আকর্ষণ করা যায় তাহলে গা ও পাহাড় এটা অর্থনীতির একটা কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যাবে। যখন অভাব থাকবে না তখন মানুষ হাতির পেছনে ছোটর সময় পাবে না, মানে হাতি কখন আসে টেনশন কাজ বাদ দিয়ে হাতির পিছনে মানুষকে ছুটতে হয় যে আমার পরিবার ও পাওয়া যায়, পাহাড়ি এলাকার মানুষের এখন তার পেটে খাবার থাক আর না থাক এক লিটার কেরোসিন ঘরে রাখে এই নিরাপদের জন্য, এই যে অবস্থা গুলো আমার মনে হয় যে মাননীয় পরিবেশ উপদেষ্টা যে চিন্তা করেছে, যে উদ্যোগ নিয়েছেন পাশাপাশি বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক তিনিও ছিলেন,জেলা প্রশাসক ছিলেন সবাই মিলে একটা চিন্তা করে পথ বের করুক যে পথটা আগামী দিনে মানুষ এবং হাতির একটা সহঅবস্থান তৈরি হবে হাতি দিয়ে সারা বিশ্বের বুকে শেরপুর আলাদা পরিচিত পাবে এটাই আমার আশা।
মোস্তাফিজুর রহমান: মান্নান সোহেল আপনার কাছে আপনার সুপারিশগুলো শুনতে চাচ্ছি?
মান্নান সোহেল: বর্তমানে যা চলছে যদি হাতির হানায় বা আক্রমণে কোন ক্ষতি হয় সেটার ক্ষতিপূরণ যেন দ্রুত বন বিভাগ দেওয়ার চেষ্টা করে, আর এছাড়া Ôএলিফ্যান্ট রেসপন্স’ টিমের জন্য অনারিয়ামের ব্যবস্থা করেন, আর ঘটনা হচ্ছে যে, বন বিভাগ যে অভায়ারণ্যর কথা বলছে সেটা আমি আপনাকে বলি ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী এবং এই তিনটা বেল্টেই অভায়ারণ্যর জন্য কিছু কিছু জায়গা তৈরি করতে হবে। তাই মনে করি যে আমাদের যে ২১ হাজারের মতো বনভূমি আছে তার মধ্য থেকে বিভিন্ন জায়গায় দখল হয়ে গেছে, এই দখল জমিগুলো উদ্ধার করতে হবে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত হাতির জন্য অভায়ারণ্যর সৃষ্টি না করতে পারবো হাতির খাদ্য উপযোগী বন তৈরি করতে না পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম, কথা বলা, কোন কিছুই কাজে আসবে না। শেষ একটা কথা বলতে চাই হাতি কিন্তু তার পাহাড়কে তার এলাকা মনে করে, এইজন্য কেউ যদি একটা নতুন ঘর তুলতে যায় হাতি কিন্তু পরের দিনে ভেঙে দেয়, তখন আমরা ভাবি যে এটা তার এলাকায় আমরা জবরদখল করতে গিয়েছি, হাতি কিন্তু তার জায়গাতে ঠিক আছে। বনবিভাগ থেকেও কিন্তু ছাড় দেওয়া হচ্ছে না,যেখানে তার অসঙ্গতি আছে আর খাদ্যের জন্য তো হাতি আসবেই, তাই মনে করি যে হীরা ভাইয়ের সাথে আমি বলতে চাই যে, হাতি ও মানুষের সহ অবস্থান আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না তৈরি করতে পারবো,ততক্ষণ পর্যন্ত এই ট্যুরিজম বলেন এগুলো কোন কিছুই কাজে আসবে না। তো এটার জন্য সম্মিলিত প্রয়াস দরকার, প্রশাসন, বন বিভাগ এখানে বিভাজন করে দেখার কোন সুযোগ নেই । আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত হাতি মানুষের সহ-অবস্থান সৃষ্টি না করতে পারছি, তাহলে সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে। হাতি বনে থাকলে অনেক কিছু অসম্ভব হয়ে যায়, কারণ হাতির জায়গাতে হীরা ভাই বলেছে হাতির জায়গাতে ১০০ জন বন বিভাগের গার্ডের কাজ করে দেয়, যদি কোথায় চুরাই সিন্ডিকেট থাকে আর সেখানে যদি হাতে অবস্থান করে তাদের কার্যক্রম কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়,তারা কাউকে ছাড় দেয় না। তো আমি মনে করি হাতি রয়েছে, থাকতে হবে, সেই সাথে মানুষেরাও বেঁচে থাকতে হবে, তবে এটার জন্য যদি আমরা হাতি এবং মানুষের সহ অবস্থানটা সৃষ্টিকরতে পারি সরকারের সাথে সম্মিলিতভাবে, তাহলে আমাদের এই যে মৃত্যুর যে তালিকা বাড়ছে, এটা মনে করি কমে আসবে। মানুষের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বন বিভাগ যে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে সেটাও দেওয়া লাগবে না এবং মানুষ ও হাতির প্রতি হিংসা পরম হয়ে উঠবে না, আমরা চাই হাতি এবং মানুষের একটা সহ অবস্থান তৈরি হোক- এটাই আমাদের চাওয়া।
মোস্তাফিজুর রহমান: আপনারা অনেক মূল্যবান সময় দিয়েছেন, আপনাদের দুজনের প্রতি কৃতঙ্গতা প্রকাশ করছি। ধন্যবাদ।