বাংলাদেশে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ সম্প্রসারণঃ সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি) লিঃ মূলত একটি গবেষণাধর্মী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে গবেষণামূলক কাজ করে থাকে। এআইআরডি-এর একটি ওয়েভ পোর্টাল হচ্ছে nDicia (এনডিসিয়া) যার উদ্যোগে উন্নয়ন আলোচনা শীর্ষক এই আলাপচারিতার (টকশো) আয়োজন করা হয়েছে। আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ বাংলাদেশে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ সম্প্রসারণ: সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। আলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রফেসর ড. রাজীব সরকার মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনাব মো. রহমত উল্লাহ, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পটুয়াখালী। আলাপচারিতার সঞ্চালনায় ছিলেন জনাব মাসুদ সিদ্দিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি) লিঃ। অনুষ্ঠানটি nDicia-এর ইউটিউব এবং ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিলো ০৯/০১/২০২৫ তারিখ রাত ৮ টা থেকে ৮:৪৫ মিনিট।
মাসুদ সিদ্দিকঃ সামুদ্রিক শৈবালের শ্রেণীবিন্যাস, প্রকারভেদ, এবং বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া শৈবাল প্রজাতি ও তাদের প্রাপ্যতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিন।
ড. রাজিব সরকারঃ প্রথমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আয়োজক কমিটিকে এবং এই লাইভ অনুষ্ঠানে যারা শুনছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সামুদ্রিক শৈবাল হচ্ছে এমন একটি উদ্ভিদ, যাকে আক্ষরিক অর্থে “সামুদ্রিক সবজি” বলা যেতে পারে। এটি উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। এটি সাধারণ উদ্ভিদের মতোই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরি করে। সামুদ্রিক শৈবাল একটি বহু-কোষবিশিষ্ট উদ্ভিদ, যা আকার, গঠন এবং রঙে বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।সামুদ্রিক শৈবাল শুধু পুষ্টিকর খাবার নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি আমরা সামুদ্রিক শৈবালের ট্যাক্সোনোমি করি, তাহলে তিন ধরনের শৈবাল পাওয়া যায়: সবুজ শৈবাল (Green Algae) যার বৈজ্ঞানিক নাম: Chlorophyta। সবুজ রঙ হওয়ার কারণ: এতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফিল এ এবং বি বিদ্যমান। বাদামি শৈবাল (Brown Algae) যার বৈজ্ঞানিক নাম: Phaeophyta। বাদামি রঙ হওয়ার কারণ: এতে Fucoxanthin নামে এক ধরণের পিগমেন্ট থাকে। লাল শৈবাল (Red Algae) যার বৈজ্ঞানিক নাম: Rhodophyta। লাল রঙ হওয়ার কারণ: এতে Phycoerythrin নামে একটি পিগমেন্ট থাকে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রধানত যেসব সামুদ্রিক শৈবাল পাওয়া যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গ্যাসিলারিয়া (Gracilaria): এটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সবুজ শৈবালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: Ulva lactuca: যাকে “Sea Lettuce” বলা হয়। Ulva intestinalis: এটি উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকভাবে জন্মায়। এখানে আরও একটি বিষয় বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। সামুদ্রিক শৈবাল ও সি-গ্রাসের (Seagrass) মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন, সামুদ্রিক শৈবালের শিকড় নেই। এটি হোল্ডফাস্ট নামক অংশের মাধ্যমে সাবস্ট্রেট বা কোন কিছুর গায়ে লেগে থাকে। আবার সি-গ্রাসের শিকড় থাকে এবং এটি প্রকৃত অর্থে শিকড়-বাকলযুক্ত উদ্ভিদ। সামুদ্রিক শৈবালের ফুল হয় না, কিন্তু সি-গ্রাসের ফুল হয়।
মাসুদ সিদ্দিকঃ খাদ্য ছাড়াও সামুদ্রিক শৈবাল থেকে আমরা কী কী ধরণের পণ্য উৎপাদন করতে পারি?
মো. রহমত উল্লাহঃ সী উইড থেকে বাংলাদেশে এখনো মানুষজন পুরোপুরি সচেতন নয়। তবে, কিছু উপজাতি এই প্রাকৃতিক সম্পদের মূখ্য নির্যাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন। বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে, সী উইড থেকে প্রাপ্ত উপাদানগুলোর সম্ভাবনা ও গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি হলেও আমরা তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছি না। বর্তমানে সী উইড থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, টুথপেস্টে আগার ব্যবহৃত হয়। প্রসাধনী সামগ্রীর ক্ষেত্রে সী উইড থেকে তৈরি জেল ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কেবল খাদ্য উপাদান নয়; সী উইড থেকে আগারসহ অন্যান্য উপাদানও তৈরি করা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন। বাংলাদেশে যদি সী উইডকে শিল্প পর্যায়ে উন্নীত করা যায়, বিশেষত আগার উৎপাদন ও সরবরাহে মনোযোগ দেওয়া হয়, তবে এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দরজা উন্মোচন করবে। সী উইড থেকে এক্সট্রাক্ট করে বিভিন্ন শিল্পে সরবরাহ করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলা সম্ভব।
ড. রাজিব সরকারঃ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নিয়ে বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, এজি-ই এবং অ্যান্টি-এজিং ক্রিম। শীতকালে ত্বক খসখসে হয়ে যায় এবং পা ফেটে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সি-উনিট থেকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া সি-উনিটের মাধ্যমে স্ক্রাব তৈরি করা সম্ভব, যা ত্বককে মসৃণ করতে সহায়ক হবে। আমাদের শরীরের যত্নের জন্য কিছু বডি কেয়ার প্রোডাক্টও তৈরি করা যেতে পারে, যেমন সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, এবং কন্ডিশনার। এর বাইরে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বায়োপ্লাস্টিক। সি-উনিটের পলিস্যাকারাইড কম্পোনেন্ট ব্যবহার করে বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং তার কারণে সৃষ্ট দূষণ একটি বড় সমস্যা। পরিবেশ উপদেষ্টারাও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতন। যদি আমরা প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সি-উনিট ব্যবহার করে বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করতে পারি, তবে প্লাস্টিকের ঘাটতি পূরণ হবে এবং পরিবেশ দূষণ থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। এটি আমাদের পরিবেশের জন্য একটি টেকসই সমাধান হতে পারে।
মাসুদ সিদ্দীক: নড়ি শিটের কার্যকারিতা কি? এটা কি কাজে ব্যবহার করা হয় এবং এটার উপজাত হিসেবে কি পাওয়া যায়?
মো. রহমত উল্লাহঃ নড়ি শিট প্যাকিং-এর কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত বিভিন্ন পণ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এটি বেশ জনপ্রিয়, এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেস, যেমন দারাজে সার্চ করলে সহজেই পাওয়া যায়। নড়ি শিট মূলত জাপানের বিভিন্ন সিউইড থেকে তৈরি, যা সুশি বা ওরিগামি র্যাপিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্যাকেজিংয়ে নড়ি শিটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এর দাম তুলনামূলক বেশি হলেও এর ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শুধু প্যাকিং নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। নড়ি শিট সমুদ্র থেকে আহরিত বা চাষ করা সিউইড থেকে তৈরি, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। সিউইডের প্রধান তিনটি প্রকার হলো গ্রিন, রেড এবং ব্রাউন সিউইড। এর মধ্যে রেড সিউইড, বিশেষ করে গ্রাসিলারিয়া এবং পরফাইরা প্রজাতির পুষ্টিমান সবচেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, গ্রাসিলারিয়া প্রজাতির সিউইডে প্রায় ২৫% প্রোটিন পাওয়া যায় (ড্রাই ওয়েটের ভিত্তিতে)। ব্রাউন সিউইডে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১২-১৪%, আর গ্রিন সিউইডে এটি ১৭-১৮% পর্যন্ত হতে পারে। প্রজাতি ভেদে এই পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। সিউইডে প্রোটিন ছাড়াও রয়েছে লিপিড, অ্যামাইনো এসিড এবং এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড। এতে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (PUFA) এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (MUFA) প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অধিকাংশ সিউইডে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম এবং পুষ্টির উৎস হিসেবে এটি বেশ কার্যকর। সর্বোপরি, নড়ি শিট আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎস এবং এর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে।
মাসুদ সিদ্দিকঃ সামুদ্রিক শৈবাল চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূল কতটুকু উপযোগী এবং উপকূলের কোন কোন এলাকাগুলো এটি চাষের জন্য উপযোগী? কি ধরণের উপকূলীয় ইকোসিস্টেম সামুদ্রিক শৈবাল চাষের জন্য উপযোগী?
ড. রাজিব সরকারঃ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কথা বিবেচনা করলে, সিউইড চাষের জন্য বিশেষত দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, স্যালিনিটি (লবণাক্ততা)। সিউইডের জন্য ২০ থেকে ৩০ পিপিটি (পার্টস পার থাউজ্যান্ড) স্যালিনিটি হলে তার বৃদ্ধি সবচেয়ে ভালো হয়। দ্বিতীয়ত, টার্বিডিটি (জলধারার স্বচ্ছতা)। জল যদি স্বচ্ছ থাকে, তবে সূর্যের আলো সহজে নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। এতে ফটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে সিউইড খাবার তৈরি করতে পারে, যা তার বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো বিবেচনা করলে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সিউইড চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। বিশেষত সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কুয়াকাটা, ও বরগুনার মতো এলাকা সিউইড চাষের জন্য সম্ভাবনাময়। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে যদি একটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করা যায়, যেখানে সিউইড চাষের জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে যেমন, নৌচলাচল বন্ধ রাখা, দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা তাহলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সিউইড চাষ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ ধরনের উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় এলাকার অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মাসুদ সিদ্দিকঃ এই যে উপকূলীয় ৭৩০ কিলোমিটার আদর্শ এলাকা যেখানে ক্রিস্টাল বেল্ট রয়েছে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী কোনটা এবং সবচেয়ে কম উপযোগী কোনটা ? এটা কি শ্রেনিবিন্যাস করা আছে বা এটার কি কোন ফিজিবিলিটি স্টাডি করা আছে?
মো. রহমত উল্লাহঃ স্যালাইনিটি হলো সিউইড চাষের জন্য প্রধান নির্ধারক ফ্যাক্টর। স্যালাইনিটি বৃদ্ধির সাথে সাথে সিউইডের বৃদ্ধি ভালো হয়। শীতকালে যখন তেমন কোনো ফ্রেশওয়াটার রানঅফ থাকে না, তখন সব জায়গাতেই স্যালাইনিটির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই সময় কুয়াকাটা কোস্ট বেল্ট এবং কক্সবাজার অঞ্চলের স্যালাইনিটিতে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। স্যালাইনিটি যদি ২০ থেকে ৩০ বা ৩৫ পিপিটি (ppt) এর মধ্যে থাকে, এটি সিউইড চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন এবং কক্সবাজার এলাকাগুলো সিউইড কালচারের জন্য পারফেক্ট। কক্সবাজারে যেসব মোহনা রয়েছে, সেগুলোতে স্যালাইনিটির মাত্রা বেশি থাকে। তবে, বর্ষাকালে টার্বিডিটির (জলের ময়লা বা পলির মাত্রা) পরিমাণ বেড়ে যায়, যা স্যালাইনিটি এবং সিউইড চাষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চাষের সময় ও অবস্থান নির্ধারণে স্যালাইনিটি এবং টার্বিডিটির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
মাসুদ সিদ্দিকঃ আমাদের দেশে এক্সাক্টলি সিউইডের কোন চাষ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ায় চাষ করা হয় ?
ড. রাজিব সরকারঃ সিউইড কালচারের পদ্ধতিকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:
১) কর্ড পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে দড়ির মাধ্যমে সিউইড চাষ করা হয়। লং লাইনে দড়ি বাঁশের খুঁটা দিয়ে বাঁধা হয়। দুটি প্যাচের মধ্যে সিউইড স্টিচ করে দিলে সেখান থেকে চাষ শুরু হয়।
২) ফ্লোটিং রাফট পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে ভাসমান কাঠামো তৈরি করে সিউইড চাষ করা হয়। কাঠামো পানির উপর ভাসমান থাকে এবং সিউইডের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
৩) ফ্লোটিং ফিক্সড পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে স্থায়ী ভাসমান কাঠামো তৈরি করে সিউইড কালচার করা হয়। কাঠামো স্থির থাকে, যা সিউইড চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে।তাছাড়া কালচারের জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ দরকার সে গুলো হলো:বাঁশ (মূল কাঠামোর জন্য), ড্রাম (ভাসমান কাঠামোর জন্য), বিভিন্ন ধরণের দড়ি ফ্রেম তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। সিউইড চাষ পদ্ধতি ও ফার্ম কনস্ট্রাকশন তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। এটি একটি সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে কার্যকরভাবে চাষ করা সম্ভব।
মাসুদ সিদ্দিকঃ পদ্ধতিগত বেশ কিছু জটিলতা আছে এগুলো সাধারণত জানা আছে তবে এগুলো আয়েত্তে আনা সম্ভব। কিন্তু দক্ষতা উন্নয়নের দরকার আছে কি?
ড. রাজিব সরকারঃ এখানে একটি সুবিধা হলো, যদি একবার একটি ফ্রেম তৈরি করা যায়, তবে ওই ফ্রেমটি ব্যবহার করা যাবে এবং তৈরি করার যে টেকনিকটা, তা ক্যাজুয়াল টেকনিক। এখানে কোনও জটিল মেকানিজম বা কোনো ধরণের কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া নেই।যদি ওইভাবে যারা যুবক, মহিলা, অথবা জেলে সম্প্রদায়ের সদস্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তবে তারা সহজেই এটি শিখতে পারবে। যেহেতু এটি সিজনাল বেসড এবং এই সিজনে তারা চাষ করতে পারবে, এখানে কোনো বৈজ্ঞানিক বা ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিজম নেই, এটি একটি ঐতিহ্যগত টেকনিক।
মাসুদ সিদ্দিকঃ সিউইডের জন্য যে সিড দরকার পড়ে এটা কি সব জায়গায় পাওয়া যায়? নাকি এটা নির্দিষ্ট কোন জায়গা থেকে আনতে হয়?
মো. রহমত উল্লাহঃ চাষের জন্য সিড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব সিউইড কালচারেবল নয়, যেমন: আমরা যদি মানগ্রোভের কথা চিন্তা করি, আমাদের সুন্দরবন বা কুয়াকাটা পুকুরের মতো কিছু জায়গায় কিছু সিউইড রয়েছে যেগুলো গাছের গোড়ায় লেগে থাকে এবং খুব ছোট হয়, এগুলো আমরা কালচার করতে পারি না। কিন্তু, যদি আমরা কালচারেবল সিউইডের কথা বলি, যেমন:গ্রাসিলারিয়া, উলভা স্পেসিস, হিপনিয়া এই সিউইডগুলো কালচারেবল। এই স্পেসিসগুলো আমার জানামতে শুধুমাত্র সেন্ট মার্টিনে এবং এই অঞ্চলে নেচারালি পাওয়া যায়।তবে, যদি কেউ এই সিউইডগুলো কুয়াকাটা উপকূলে বা সুন্দরবন উপকূলে চাষ করতে চায়, তাহলে তার জন্য সিড পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেন্ট মার্টিন বা কক্সবাজার থেকে সিড সংগ্রহ করাও কিছুটা কঠিন এবং এটি চাষের জন্য একটি বড় বাধা।প্রাকৃতিকভাবে এসব সিউইডের জন্মানোর সুযোগ খুব একটা নেই। তবে, যদি আমরা জানুয়ারি, ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসের দিকে লক্ষ্য করি, তখন স্যালাইনিটি বেশি থাকে এবং এই সময়ের স্যালাইনিটিতে কিছু সিউইডের প্রজাতি গ্রো করতে পারে।
মাসুদ সিদ্দিকঃ উপকূলীয় এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যুবসমাজ এবং দরিদ্র মহিলাদের উন্নয়নের জন্য সিউইডের কালচার কতটুকু উপযোগী বলে মনে করেন? এটা কি সম্ভাবনাময় পণ্য হিসাবে ইন্ট্রোডিউস করা যাবে এবং তাদের লাইভলিহুডকে ডেভেলপ করা যাবে?
ড. রাজিব সরকারঃ উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সিউইড (seaweed) জনপ্রিয় করা সম্ভব। তবে সমস্যাটা হলো, বাংলাদেশে সিউইড এখনো অনেকটাই অপরিচিত। এটি এখনো ভার্জিন স্টেজে রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়নি।নতুন কিছু গ্রহণ করানো সবসময় সহজ নয়, বরং এটি বেশ কঠিন। এজন্য যা দরকার, তা হলো স্থানীয় বাজার তৈরি করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে উপকূলীয় জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাদের বোঝাতে হবে যে সিউইড শুধু মাছের খাদ্য নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে সিউইড ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যেমন এটি সালাদ বা স্যুপ হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে। তবে জেলেদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা হলো, তারা কোনো কিছু সহজে গ্রহণ করতে চায় না যদি এর মধ্যে সরাসরি অর্থনৈতিক সুবিধা না থাকে। এজন্য তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক লাভ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে হবে। রহমতুল্লাহ বলছিলেন যে মার্কেটিং চ্যানেলকে আরও উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে, ওষুধ শিল্পে সিউইড ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ওষুধ কোম্পানিগুলো যদি এই খাতে বিনিয়োগ করে, তবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগ্রহ বাড়বে এবং তারা সিউইড চাষে উৎসাহী হবে। কিছুদিন আগে দেখলাম, স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার পরে যে নষ্ট বা অব্যবহৃত মাছগুলো (যেমন ছোট কাঁকড়া, পটকা মাছ) ফেলে দেয়, সেগুলো শুকিয়ে বাজারজাত করছে। এটি এখন একটি বড় বাজার তৈরি করেছে। শুকানো এই মাছ প্রায় ৩০-৪০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে এবং এটি ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফিড কোম্পানিগুলোতে হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্তমানে যেসব স্থানীয় মিডিয়া রয়েছে। এই মিডিয়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সিউইডের উপকারিতা কী, সিউইডের বাজার কোথায়, এবং আমরা সিউইড বিদেশে রপ্তানি করতে পারি কিনা এগুলো প্রচার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, আমাদের যে উপজাত পণ্যগুলো রয়েছে, যেমন অ্যালজিনেট, ক্যারাজিনেন, আগার আগার এই পণ্যগুলোর বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে। আমরা যদি বিদেশে রপ্তানি করতে পারি, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে একটি কার্যকর চ্যানেল তৈরি হবে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠী এতে জড়িত হবে এবং তারাও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।
মো. রহমত উল্লাহঃ এটি দেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা। তবে আমাদের প্রথমে এটি জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। এটি যে পুষ্টিগুণে ভরপুর, সেটি বোঝানো দরকার। আমাদের একটি প্রবণতা হলো, আমরা তাৎক্ষণিক ফলাফল চাই। সিউইডের ক্ষেত্রেও যদি আমরা প্রথমে এর স্বাস্থ্যগত সুবিধা এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা বলি, তাহলে এটি আরও গ্রহণযোগ্য হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি স্যালাইনিটির মাত্রা পরিবর্তন করে একই সিউইড প্রজাতির চাষ করা হয়, তাহলে এর প্রোটিন, মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। এটি স্পষ্ট যে, পরিবেশের উপর ভিত্তি করে সিউইডের মান পরিবর্তিত হয়। আমাদের এখন যা দরকার, তা হলো উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সিউইড চাষ জনপ্রিয় করা। যদি আমরা একত্রিত হয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সংগঠনের সহযোগিতায়, এটি বোঝাতে পারি যে সিউইড আমাদের জন্য উপকারী, তাহলে তারা এটি গ্রহণ করবে। আপনারা লক্ষ্য করবেন, কয়েক বছর আগেও কিছু মাছকে আগাছা মনে করে ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেই মাছগুলো শুকিয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাজার তৈরি হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়েছে। আমরা যদি সিউইডের জন্য একই ধরনের বাজার তৈরি করতে পারি এবং এর গুরুত্ব তাদের বোঝাতে পারি, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, তারা এটি অবশ্যই গ্রহণ করবে।
মাসুদ সিদ্দিকঃ বিফআরআই বাংলাদেশে তাঁদের রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষণা চালাচ্ছে। কিন্তু এক্সটেনশন করা, এটাকে জনপ্রিয় করা এই বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজের উদ্যোগ কতটুকু বা এখন পর্যন্ত কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়?
ড.রাজিব সরকারঃ ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ সিউইড নিয়ে অনেক জায়গায় ফান্ড দিয়েছে। তবে ফান্ড দেওয়ার পর প্রকল্পগুলো টেকসই হওয়া উচিত। একটা প্রোডাক্ট ডেভেলপ হলো, একটি প্রকল্প দেওয়া হলো, কিন্তু প্রকল্পের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর সেটির কোনো কন্টিনিউয়েশন থাকে না। এ কারণে মানুষ ভুলে যায়। আপনার যে গ্রুপগুলো ছিল, তারা তেমন কোনো চার্ম পায় না। এওয়ারনেস তৈরি করার আগেই সেই আগ্রহ নিভে যায়। আমার মতে, এটা সঠিকভাবে কন্টিনিউ করা দরকার। একটি প্রোডাক্ট ডেভেলপ হলে, সেখান থেকে আরও কোনো বায়োটেক উপাদান তৈরি করা যায় কি না, সেটাও দেখা উচিত। এখন পর্যন্ত, ইউনিভার্সিটিগুলো বিশেষত ডিপার্টমেন্ট অব মেরিন সায়েন্স কিছু কাজ করেছে। আমাদের বাংলাদেশ কোস্টে যে কয়েকটি সিউইড প্রজাতি রয়েছে, সেগুলোকে মর্ফোলজিক্যালি আইডেন্টিফাই করেছে। তবে শুধু মর্ফোলজিক্যালি আইডেন্টিফাই করলে অনেকটা কনফিউশন থেকে যায়। আমরা প্রফেশালি বলতে পারি না, কারণ পিসিআর, জেনেটিক মার্কার বা ডিএনএ বেসড আইডেন্টিফিকেশন হয়নি। শুধু মর্ফোলজিক্যাল ফিচার দেখে ছবি দেখে বলা হয়েছে।চিটাগাং ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিতে বিশেষত বেসেলারিয়া নিয়ে কিছু কাজ হয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে একটি প্রকল্প কুয়াকাটায় চালাচ্ছে, যা এখনো চালু রয়েছে। এক বছরের মেয়াদি এই প্রকল্পে আমরা এখনো কালচার ফেজে যেতে পারিনি। আশা করছি, আমরা খুব শিগগিরই কালচার ফেজ শুরু করতে পারব।
মাসুদ সিদ্দিকঃ বাজার তৈরি করতে পারলে কিভাবে তৈরি করা যায়? আবার স্থানীয়ভাবে বাজার তৈরি হলে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হবে। এই প্রক্রিয়া চলমান রাখতে কনসার্ন ডিপার্টমেন্টগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কোঅর্ডিনেশনটাকে একটি ইউনিট হিসেবে কীভাবে কাজে লাগানো যায়?
মো. রহমত উল্লাহঃ আমাদের দেশে সিউইড নিয়ে গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশে রিসার্চ খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি। সর্বোচ্চ ২০১১ বা ২০১৫ সাল থেকে কিছু কাজ হয়েছে। তবে সেটা ছিল আইডেন্টিফিকেশন টাইপের। চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি প্রথম শুরু করেছিল, আর কক্সবাজারে বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সেন্টার থেকে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। বাল্ক কালচারের কাজ খুব সম্প্রতি শুরু হয়েছে। কেউ কেউ সিউইড থেকে ফিড তৈরি করার চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত এটা ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। তবে সমস্যাটি হলো, গবেষণার ফলাফলগুলো পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করা হয় না। এটি একটি নেতিবাচক দিক।পাবলিকেশন করার মাধ্যমে তথ্যগুলো শেয়ার করা উচিত। কিছু স্পিসিসের কালচার টেকনোলজি বিফআরআইয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তবে এর আপডেট কতদূর, তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই এটি মাঠপর্যায়ে যাবে এবং সাধারণ জনগোষ্ঠী এটি গ্রহণ করবে।
মাসুদ সিদ্দিকঃ এটা কি প্রাথমিক শিক্ষার সিলেবাসে বা অন্য কোনো স্তরে অন্তর্ভুক্ত করা যায়? সিউইড চাষের সম্ভাবনা নিয়ে প্রাথমিক বা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে কোনো ভাবে জায়গা করে দেওয়া যায় কিনা, এ বিষয়ে কি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
মো. রহমত উল্লাহঃ করা যায়। আমাদের তো ছোট থেকেই শেখানো হয় কৃষি সম্পর্কে। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান বইয়ে কৃষি সম্পর্কিত বিষয় থাকে। সেখানে যদি একটা অধ্যায় যোগ করা যায় বা কোনো অধ্যায়ে সিউইড চাষ নিয়ে একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে ভালো হবে। সিউইড শুধু মাছ চাষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটা কৃষিরই একটি অংশ। এটি নিয়ে বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট কাজ করছে, পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও এর চাষ এবং বাজারজাতকরণ হচ্ছে। এটি কৃষি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হলে মানুষ ছোট থেকেই সিউইড সম্পর্কে জানতে পারবে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ হবে বলে আমি মনে করি।
মাসুদ সিদ্দিকঃ আজকের এই আলোচনা থেকে একটি বার্তা আমরা নিতে পারি যে পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে অন্তত সিউইড চাষের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। প্রফেসর রাজিব, আপনি কি মনে করেন?
ড. রাজিব সরকারঃ এটা অবশ্যই দারুণ একটি উদ্যোগ হবে। আমাদের পাঠ্যসূচিতে “কৃষি শিক্ষা” নামে একটি বই রয়েছে। এখন যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে অধ্যায় থাকে, ঠিক তেমনই সিউইড চাষ নিয়ে একটি অধ্যায় বা অংশ থাকতে পারে। সিউইড কেবল পুষ্টিকর খাবার নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিউইড সম্পর্কে ছোট থেকেই জানাশোনা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। শুধু উপকূলীয় অঞ্চল নয়, অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জন্যও এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ।যদি আমরা সিউইডের উপকারিতা তুলে ধরে এর বাজারজাতকরণ এবং প্রচার-প্রচারণা করতে পারি, তাহলে আজ বা আগামীকাল বাবা-মায়েরাই বাচ্চাদের জন্য সিউইড কিনে আনবেন। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত, তাই এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে বলে মনে করি।
মাসুদ সিদ্দিকঃ কিন্তু এই প্রকল্প ভিত্তিক উদ্যোগগুলো টেকসই হয় না। তার মানে, আমাদের আগে বাচ্চাদের সিউইডের গুরুত্ব, সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ভাবে জানাতে হবে। তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে এর সম্প্রসারণ সম্ভব।
ড. রাজিব সরকারঃ এখন ডাক্তাররা যাদের আয়রনের ঘাটতি থাকে, বিশেষ করে প্রেগন্যান্ট উইমেন, তাদের সিউইড খেতে পরামর্শ দেন। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এটি বাজারে সহজলভ্য নয়। সামান্য কিছু এডুকেটেড লেভেলের মানুষ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে এটি কিনছেন। ডাক্তাররা এখন সাজেস্ট করেন, সিউইড খাওয়ার জন্য।
মাসুদ সিদ্দিকঃ সরকারি উদ্যোগে যদি সিউইড চাষ এবং এর সম্প্রসারণ ঘটাতে হয়, তবে প্রকল্পভিত্তিক না করে সরকারের রেভিনিউ ইনিশিয়েটিভে নিয়ে আসা উচিত নয় কি?
মো. রহমত উল্লাহঃ যেটা বললাম, এডুকেটেড মানুষজন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সিউইড কিনছেন। কিন্তু সবাই এটি সহজে গ্রহণ করবে না। আগে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এভাবে করলে সরকারি রেভিনিউ ইনিশিয়েটিভ নেওয়া একটি ভালো পদক্ষেপ হবে।
মাসুদ সিদ্দিকঃ আপনাদের দুজনকে এবং সম্মানিত দর্শকশ্রোতাদেরকেও ধন্যবাদ।