বাংলাদেশে সৌরশক্তি উন্নয়ন ও সম্ভাবনা 

ndicia24

মে ১৪, ২০২২ | সমসাময়িক

Ended soon

ধীর গতিতে হলেও সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশে অনেকটাই এগিয়েছে। ২০০৭-০৮-এ মানুষের কাছে মাত্র ৪৫ শতাংশের মত বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছেছিল। দুর্গম বা প্রত্যন্ত এলাকায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। যার ফলে এ জায়গাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য সৌরবিদ্যুতের চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়।

শুরুর দিকে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ছিল ব্যাটারি দিয়ে ছোট ছোট সোলার হোম সিস্টেম, যার ব্যবহার  দু-চারটি লাইট আর ফ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০০৮ সালে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি গ্রহণ করে। আশা করা হয়, ২০১৫ সাল নাগাদ আমাদের শক্তিচাহিদার ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সাল নাগাদ ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত থেকে আসবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি অর্থনৈতিক  সমস্যার কারণে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। উৎসগুলোর মধ্যে আছে সৌরশক্তি, বায়ু, খরস্রোতা নদী, সমুদ্রস্রোত, ভূতাপীয় শক্তি ইত্যাদি। এই উৎসগুলোর প্রাপ্যতা দেশভেদে ভিন্ন হয়। যেমন—ভলকানিক জোনে থাকে ভূতাপীয় শক্তির সম্ভাবনা। এটা কমবেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে এমন অঞ্চলে কার্যকর, যেমন—ফিলিপাইন, আইসল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, এল সালভাদর ও জাপানের মতো দেশ। মাটির চার কিলোমিটারের মতো গভীরে তাপ ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি হতে হবে। ওই স্তরগুলো সাধারণত পাথুরে ও উত্তপ্ত হয়। সেখানে পানি প্রবেশ করানো হলে তা বাষ্প হয়ে যায়। ওই বাষ্পের শক্তিতে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশে তিনটি জায়গার সমীক্ষার ফল দেখা গেছে, তাতে মাটির চার কিলোমিটার গভীরে তাপমাত্রা ১৫০ ডিগ্রিরও কম।  যা খনন করে এর বেশি নিচে যাওয়া প্রযুক্তি ও ব্যয়ের দিক থেকে বাস্তবসম্মত নয়। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সমুদ্রস্রোতের বিষয়টি বৈশ্বিক পর্যায়েই খুব প্রয়োগ হয়নি। তারপর রয়েছে জলবিদ্যুৎ। পাহাড়ি অঞ্চলে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা থাকে। আমাদের পাহাড়ি নদী তেমন নেই। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে হয়তো আমরা আর বেশি হলে ১০০ মেগাওয়াট যোগ করতে পারব। ‘ক্যাসকেডিং’ প্রক্রিয়ায় উজানে আরেকটা প্রকল্প নিলে আবার কাপ্তাইয়ে উৎপাদন কমে যাবে। জলবিদ্যুতের পরিবেশগত প্রভাবের দিকও আছে। দেশের অন্য জায়গায় হয়তো ছোট কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে পারে, যেমন:সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নদীগুলোতে। কাজেই ধরা যায়, জলবিদ্যুৎ থেকে বড়জোর আর ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ মেগাওয়াট আসা সম্ভব। উপকূলীয় এলাকায় বায়ুবিদ্যুতের কিছু সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা বড় আকারের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারিনি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতায় সৌরশক্তিই নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে ভালো উৎস।

বাংলাদেশে সৌরশক্তির প্রাপ্যতা সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। যত বিষুবরেখার দিকে যাবে সূর্যের কিরণ তত খাড়াভাবে পড়বে। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অনেকটা জায়গা লাগে। এই কাজে কৃষিজমি ব্যবহার না করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যেমনটা রয়েছে কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রেও।  দেশে পতিত বা অনাবাদি জমি তুলনামূলক উত্তরাঞ্চল, নদীর তীরবর্তী চর ও সাগরের মোহনা এলাকায় বেশি। তাই এসব অঞ্চলে বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা হচ্ছে। নেট মেটারিংয়ের আওতায় বাংলাদেশে রুফটপ সৌরবিদ্যুতেরও একটি বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।  দেশে সৌরশক্তির বিষয়টি এগিয়ে নিতে সোলার এনার্জি রোডম্যাপের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি এখন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনাধীন।  ২০১৭ সালের আগস্টে দেশে প্রথম জাতীয় গ্রিডে সৌরবিদ্যুৎ যুক্ত হয়। সেটা ছিল সৌরশক্তির বিকাশে এক উজ্জ্বল মাইলফলক। বিশ্বের ভবিষ্যৎ এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। যে সব দেশ আগে শুরু করবে তারা এগিয়ে থাকবে।

দেশে এখন অনেক সোলার মিনি গ্রিড তৈরি করে তা দিয়ে অফ গ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ নেই এমন এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য তা কাজে লাগছে। অনেকে দাম বেশি বলে এর বিপক্ষে কথা বলেন। কিন্তু  দুর্গম এলাকায়, সন্ধ্যা হয়ে গেলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছু আর করার নেই। কুপি, হারিকেন দিয়ে আর কতক্ষণ চলে? সৌরবিদ্যুতের আলোয় এখন এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম যেন সত্যিই শহর হয়ে গেল। প্রত্যন্ত গ্রাম, চর ও দ্বীপাঞ্চলের লোকও এখন সৌরবিদ্যুতের সুবাদে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

বর্তমানে সৌরবিদ্যুতের অনেক বড় বড় প্রকল্প পরিকল্পনা বা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রায় ১০০০ মেগাওয়াটের ওপর সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে, যা উত্তরোত্তর বাড়বে।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন