উন্নয়ন আলোচনা পর্ব-১৫

ndicia24

মার্চ ১, ২০২৫ | প্রকৃতি ও প্রতিবেশ

ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার: সমস্যা ও সম্ভাবনা

এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (AIRD) লিমিটেড একটি গবেষণাধর্মী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণামূলক কাজ পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির একটি ওয়েব পোর্টাল হলো nDicia (এনডিসিয়া), এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা ‘উন্নয়ন আলোচনা’ শীর্ষক আলাপচারিতার (টকশো) আয়োজন করে থাকি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নলেজ ডকুমেন্টেশন। আমাদের আলোচনার ট্রান্সক্রিপ্ট nDicia-এর ওয়েব পোর্টালে থাকবে এবং সম্পূর্ণ আলোচনাটি nDicia-এর Youtube চ্যানেলে থাকবে। ভবিষ্যতে, এই আলোচনাগুলোকে সম্পাদনা করে একটি বই আকারে প্রকাশ করা হবে। আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার: সমস্যা ও সম্ভাবনাআলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ড. মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান মিলন, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষি-জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং মোঃ মোখলেছুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র কৃষিবিদ, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (CNRS)আলাপচারিতার সঞ্চালনায় ছিলেন জনাব মাসুদ সিদ্দিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি) লিঃ। অনুষ্ঠানটি nDicia-এর ইউটিউব এবং ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিলো ১৩/০২/২০২৫ তারিখ রাত ০৮:০০ টা থেকে ৯.০০ মিনিট।

মাসুদ সিদ্দিকঃ ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার সম্পর্কে একটা ধারণা দিন?

. কামরুজ্জামানঃ ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার (CSA) বর্তমান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য। যদি সংক্ষেপে বলা হয় , এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে মানুষ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং কৃষি থেকে নির্গত গ্রীনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে আনবে। এই ধারণাটি মূলত তিনটি প্রধান স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে,

প্রথমত, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, যাতে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে, খরা, বন্যা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে চাষাবাদের সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এমন প্রযুক্তি এবং কৌশল ব্যবহার করতে হবে, যাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায় এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

দ্বিতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ, কৃষকদের এমন সক্ষমতা তৈরি করতে হবে যাতে তারা পরিবর্তিত আবহাওয়া ও জলবায়ুর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খরাপ্রবণ এলাকায় খরারোধী ফসল চাষ, লবণাক্ত এলাকায় সহনশীল জাতের ধান উৎপাদন, বৃষ্টিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থায় পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।

তৃতীয়ত, গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা বা মিটিগেশন। কৃষি খাত থেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। তাই ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের মাধ্যমে এমন কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত যা পরিবেশবান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়ক। যেমন, জৈব সার ও সবুজ সার ব্যবহার, সঠিক সেচব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সংরক্ষণমূলক চাষাবাদ এবং কৃষি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এই তিনটি বিষয় উৎপাদন বৃদ্ধি, অভিযোজন এবং নির্গমন হ্রাস যখন একসঙ্গে কাজ করবে, তখনই আমরা সত্যিকার অর্থে একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব। ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার শুধুমাত্র একটি কৌশল নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের কৃষির জন্য একটি অপরিহার্য পথ।

মোখলেছুর রহমান চৌঃ জলবায়ু পরিবর্তনটাকে এড্রেস করে, কৃষকের প্রোডাকশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, পাশাপাশি গ্রিনহাউজ গ্যাসের ইমিশন হ্রাস করা এটাই মূল লক্ষ্য। এর জন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও টেকনিক গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে যত আধুনিক ও কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলোকে এডপ্ট করে কৃষি ব্যবস্থাকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করা যেতে পারে। কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল চাষ, মাটি ও পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই কৃষি নিশ্চিত করাই ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের মূল থিম।

মাসুদ সিদ্দিকঃ প্রথাগত কৃষির তুলনায় স্মার্ট এগ্রিকালচার কতটুকু স্মার্ট? কেন? এটা কিছুটা যদি আলোকপাত করেন।

ড. কামরুজ্জামানঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেই বিষয়গুলি আমাদের সামনে দেখছি, সেগুলো পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা ৮০-এর দশকের পর থেকে দৃশ্যমান হওয়া শুরু করে। এখন যদি ২০২৪ সালের জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়,  তাহলে জানুয়ারিতে একটা কোল্ড ওয়েভ দেখা গেলো, টেম্পারেচার ৫-এর নিচে নেমে গেল। এপ্রিলের দিকে হাই টেম্পারেচার দেখা গেলো, যা গত অনেক বছরের মধ্যে রেকর্ড, ২৬ দিন পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা স্থায়ী ছিল। আমরা দুইটা বন্যা দেখা গেলো, ঘূর্ণিঝড় রেমালসহ সব ধরণের ক্লাইমেট রিলেটেড হ্যাজার্ড ২০২৪ সালেই দেখা গিয়েছিলো।  এখন, যে প্রশ্নটি করেছেন সনাতন কৃষির সাথে এই পরিবর্তনের সম্পর্ক কী? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী দেখতে পাচ্ছি? বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। আগে নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হতো, এখন অসময়ে হচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বৃষ্টিপাত দেখেছিলাম, যা আগে ছিল না। বিগত ৫০ বছরের রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে, বৃষ্টিপাতের বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের কৃষি এখনো পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর হয়নি, বরং প্রকৃতি নির্ভর। ন্যাচারাল বৃষ্টিপাত, সূর্যের আলো, তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে সনাতন কৃষি পরিচালিত হতো। কিন্তু বিগত ৫-১০ বছর ধরে আমরা জলবায়ুর বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে, বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে গেছে, হিটওয়েভ দেখা যাচ্ছে, খরা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কৃষিকে ঢেলে সাজাতে হবে। গবেষক হিসেবে যদি বলি, জলবায়ু পরিবর্তনকে সামনে রেখে আমরা কী করছি? আমরা বেশ কিছু নতুন জাত (variety) ডেভেলপ করেছি খরা সহনশীল (drought tolerant), লবণাক্ততা সহনশীল (salinity tolerant), বন্যা সহনশীল (flood tolerant) জাত তৈরি করেছি। পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রযুক্তি ডেভেলপ করা হচ্ছে। ব্রি এর মাধ্যমে হিট-টলারেন্ট জাতের কাজ শুরু হয়েছে, বিশেষ করে ধানের ক্ষেত্রে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসলের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য গবেষণা চলছে। কৃষকদের এসব প্রযুক্তি ও জাত ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সনাতন কৃষি থেকে বের হয়ে এখন ক্লাইমেট স্মার্ট টেকনোলজির দিকে আসতে হবে, যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বের হতে চাই এবং খাদ্য উৎপাদনের স্থায়িত্ব বজায় রাখতে চাই।

শর্ট ডিউরেশন ভ্যারাইটি (Short Duration Variety) বলতে এপ্রিল-মে মাসে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। যদি ধানের ক্ষেত্রে বলা হয়, ফুল ফোটার সময় (anthesis) তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে, তাহলে ধান স্টেরাইল হয়ে যাবে, অর্থাৎ চিটা হয়ে যাবে। তাহলে কী করতে হবে? জাত তৈরি করতে হবে, যা আগে ফুল ফোটাবে, যাতে তাপমাত্রার চূড়ান্ত পর্যায়ে এটি না পড়ে। আবার যদি আর্লি ট্রান্সপ্লান্ট করি, তবে দেখা যায়, এটি কোল্ড ওয়েভে পড়ে যায়, তখনও স্টেরাইল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমরা এমন শর্ট ডিউরেশন জাত তৈরি করছি যাতে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রার চূড়ান্ত পর্যায় এড়ানো যায়। বড় ধানের মৌসুম (Boro season) আমাদের ধানের মোট উৎপাদনের ৫০%-এর বেশি অবদান রাখে। কিন্তু হাওর অঞ্চলে দেখা যায়, এপ্রিল-মে মাসে ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়, যা ফসল নষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে যদি ধানের পরিপক্কতা ১৬০ দিনের পরিবর্তে ১৪৫-১৪০ দিনে নিয়ে আসা যায়, তাহলে ফলন ঠিক রেখে, সঠিক সময়ে ফসল কেটে নেওয়া সম্ভব হবে। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি, গবেষণা চালাচ্ছি, এবং কৃষকদের উপযোগী সুপারিশ দিচ্ছি।

মোখলেছুর রহমান চৌঃ এই যে স্ট্রেস অথবা ডিজাস্টার অথবা ক্লাইমেটের ইম্প্যাক্ট গুলোকে টার্গেট করে যে টেকনোলজি গুলোকে ডেভেলপ করা হচ্ছে, এটা সরাসরি ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের সাথে যাচ্ছে, এর গুরুত্বটাতো অলরেডি স্যার আলোচনা করেছেন। এর পাশাপাশি  ক্লাইমেট চেঞ্জের যে ইম্প্যাক্ট গুলো হচ্ছে এবং ক্লাইমেট চেঞ্জকে ত্বরণায়িত করছে, এ ধরণের কার্যক্রম গুলো, বিশেষ করে আমরা জানি যে একটা খুবই প্রচলিত ধারণা আছে যে ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাসের একটা নির্গমন হয়, পাশাপাশি এগ্রিকালচারের অন্যান্য প্র্যাকটিসগুলো থেকে এই ধরণের একটা এমিশন হয়। সেই ধরণের কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে এই এমিশনটাকে যতটুকু কমানো যায় আধুনিক টেকনোলজির মাধ্যমে, সেটাও কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই ধরনের টেকনোলজিগুলো কিন্তু অ্যাডপ করা হচ্ছে এই ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের আন্ডারে। তো ওই দিকটা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই জায়গাকে চিন্তা করে বলা যায় যে, বিভিন্ন ধরণের আধুনিক পদ্ধতিসমূহ অবলম্বন করা যার মাধ্যমে সার্বিকভাবে প্রোডাকশনটাকে এনহ্যান্স করা। অনেকগুলো বিষয় এখানে  আলোকপাত করেছে তিনি। যেটা হচ্ছে যে প্রোডাকশনটা এনহ্যান্স করে, কৃষিকে একটা প্রফিটেবল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, সেটাও একটা মূল মন্ত্র বলা যায় ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের।

মাসুদ সিদ্দিকঃ রাইস কাল্টিভেশনে গ্রিন হাউজ গ্যাস মিনিমাইজ করতে কোন স্মার্ট টেকনোলজি প্রয়োজন?

ড. কামরুজ্জামানঃ রাইস চাষে পানি থাকলে, বিশেষ করে মনসুন সিজনে, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন হয়। মিথেন পানির লক কন্ডিশনে এবং নাইট্রাস অক্সাইড ইউরিয়া ফার্টিলাইজার থেকে আসে। কৃষকরা প্রচুর ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ব্যবহার করেন, তবে তার ৬৫-৭০% নষ্ট হয়ে যায়। AWD (অল্টারনেটিং ড্রাইং এন্ড ওয়েটিং) পদ্ধতি ব্যবহারে পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা যায়, যা গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, ফার্টিলাইজার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কৃষকরা সারের দাম কম হওয়ায় বেশি ব্যবহার করেন, কিন্তু এটি সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হলে পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ইউএসজি অ্যাপ্লিকেটর বা সুপার গ্র্যানিউয়াস পদ্ধতিতে ইউরিয়া সেভ করা যায় এবং নাইট্রাস অক্সাইড কমানো সম্ভব। তবে, কৃষকরা এই পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করছেন না, কারণ তারা এগুলোর সুবিধা বুঝে না। এখন একটি মেশিন তৈরি করা হয়েছে, যা কম দামে ইউরিয়া সেভ করতে সাহায্য করে। এতে ৩০-৪০% ইউরিয়া সেভ করা যায়, এবং এটি ক্লাইমেট স্মার্ট টেকনোলজি হিসেবে কাজ করে, যা উৎপাদনের সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করে না। সরকারকে এই প্রযুক্তিগুলোর ওপর বিনিয়োগ করতে হবে এবং কৃষকদের এগুলি গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

মোখলেছুর রহমান চৌঃ যে জিনিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে যদি লক্ষ্য করা হয় যে কৃষি সিস্টেমটা যেভাবে এখন রান করছে এই জায়গাতে এটি খুবই আমুল পরিবর্তন নিয়ে আসা দরকার। যদি প্রথমত যেটা হচ্ছে এ ডব্লিউডির যে মেথডটা আছে, এটা পপুলার না হওয়ার পিছনে মেইন কারণটা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে যে ইরিগেশন সিস্টেম আছে এটা কৃষকরা যেটাতে নিয়েছে, এটা একটা প্রাইভেটইজেশন এর কারণে হয়েছে, তার মানে কম্পারেটিভলি যারা সমাজের আছে,  তারা এটার মাধ্যমে ব্যবসাটা নিয়ন্ত্রণ করছে। তো তারা হচ্ছে যে তাদের মডালিটিটা সেট করে চুক্তিভিত্তিক এবং সাম হাউ কৃষকরা ও তাদের জন্য এটা এক জায়গা থেকে হচ্ছে, তাদের জন্য এই কারণে হচ্ছে যে ক্রেডিটে তারা পানি নিতে পারছে, মৌসুম শেষ হলে পানিটা মূল্য ফেরত করতে পারছে অথবা অগ্রিম ধান দিচ্ছে যার একটা ক্যালকুলেশন করে তারা এটা পরিশোধ করছে। তো এ মেকানিজমে হয়তো দীঘা অথবা একর প্রতি একটা রেট সেট করা থাকে, এটা হচ্ছে মৌসুমভিত্তিক। এই মৌসুম ভিত্তিক যে রেটটা থাকে, বিশেষ করে বোর সিজনে, আমনে তো পানি এমনিতেই থাকছে, তো এইখানে মৌসুম ভিত্তিক যে চুক্তিটা থাকে, এটার পিছনে কৃষকের যেটা হয় যে তাকে তা মৌসুম ভিত্তিক সে পে করছে, তো পানি রেট কতটুকু আসলো না আসলো, সেটা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নাই। পানি যত নিতে পারবে, তার জন্য সেটা ভালো। তো এখানে তো কোনো ধরণের টাকা সেভ হচ্ছে না। এখানে আর একটা ঝামেলা হচ্ছে যে, একটা হয়তো কৃষকরা মনে করছে যে অনেক বেশি পানি পাচ্ছে, কিন্তু মজার বিষয়টা হচ্ছে, এইখানে এই সিস্টেমের কারণে আমরা বলছি যে বিভিন্ন ট্রেস টলারেন্ট এবং টাইমিং গুলোকে শিফট করা, বিশেষ করে যা করতে হবে তা হলো কোনটাকে হয়তো আগে নিয়ে আসা। যেখানে যদি আমি বলি হাওরের ক্ষেত্রে অথবা যদি নর্থ বেঙ্গল এর কথা চিন্তা করি, যে সময়টাতে কালবৈশাখীর প্রভাব পড়ছে অথবা ফ্লাশ  ফ্লাড আসার চান্স আছে, তো সেইটাকে এডজাস্ট করার জন্য হয়তো কিছুটা হচ্ছে যেখানে আগে সিডলিং রেজ করা। এখানে জমি প্রিপারেশন করার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু এই যে মনোপলি যে ব্যবসা গুলো এখন তৈরি হয়েছে ইরিগেশনের ক্ষেত্রে,  সেই ক্ষেত্রে ইরিগেশনের সাপোর্ট ছাড়া ল্যান্ড প্রিপারেশন করাটা একদম অসম্ভব হয়ে গেছে। তো সেই জায়গাটাতে দেখা যাচ্ছে যে যারা এন্টারটেনার হিসেবে কাজ করছে, এদের সাপোর্টার দিচ্ছে, তাদের একটা ইন্টেনশন থাকে যে যত দুর দেরি করে এই সিস্টেমটাকে রান করা যায়, তাদের মেইন টার্গেট থাকে, যদি যত বেশি বৃষ্টি ধরা যাবে, তাদের হচ্ছে তত বেশি কম পানি দিতে হবে ফিল্ডে। তো তাদের হচ্ছে এ ধরণের চিন্তাভাবনা থাবক। যার কারণে দেখা যাচ্ছে যে পানিটা তারা দেরি করে দিচ্ছে, কৃষকরা বাধ্য হয়ে দেরি করে চাষ শুরু করছে এবং বিভিন্ন ধরণের যে হ্যাজার্ডগুলো আছে, সেটার সম্মখীন হচ্ছে। তো এই জায়গাটাতে সিস্টেমের পরিবর্তন দরকার, পাশাপাশি যেটা হচ্ছে যে বিভিন্ন টেকনোলজি বিড়ি, বাড়ি এবং রিসার্চ ইনস্টিটিউটগুলো আছে, শত শত টেকনোলজি তারা বের করেছে, কিন্তু এখনো যদি আমরা মাঠ পর্যায়ে যাই, তাহলে দেখব যে এখন পর্যন্ত হয়তো ৮০ দশকের যে ভ্যারাইটিগুলো দেখেছি সেহুলোই আবারও দেখতে পাই। এই জায়গাগুলোতে মেইনলি যেটা ডাইভারসিটি হিসেবে কাজ করে, সেটা হচ্ছে যে সাপোর্ট সার্ভিস গুলো, যেমন: যে যার রোল টা প্লে করার কথা, যেমন: বিএআরসি এর মার্কেট চেনটা।

মাসুদ সিদ্দিকঃ একটা কথা আমি ভুলে যেতে পারি, যেটা আপনি বলেছেন, যে ইরিগেশনের ক্ষেত্রে পানি, এটা একটা এন্টারপ্রপনারশিপ সিন্ডিকেট টাইপের কিছু আছে নাকি বাংলাদেশের যাদের কাছে আমরা আমাদের কৃষকরা বন্দী।

. কামরুজ্জামানঃ ইরিগেশন ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা বলতেই হবে। যখন মালয়েশিয়ায় ছিলাম, তখন তাদের ইরিগেশন ব্যবস্থায় কিছু চ্যালেঞ্জ দেখেছি। আর দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন এখন ইরিগেশন ব্যবস্থার জন্য একটা বড় সংকটে পরিণত হচ্ছে। দেশে রেইনফল প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে যে বৃষ্টি হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না, আর এ কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে আমন মৌসুমে কৃষকরা বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় সিডলিং বা ট্রান্সপ্লান্টিংও ঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। এখন এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে আবাদি জমির উপর, কারণ ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ডিপ্লেশন ঘটে যাচ্ছে, এবং বিএমডিএ (বাংলাদেশ মেসী ড্রেনেজ অথরিটি) কিছু অঞ্চলে এই সমস্যায় পড়েছে। আমাদের দরকার সাপ্লিমেন্ট ইরিগেশন ব্যবস্থা। এই বিষয়টাকে গম্ভীরভাবে নিতে হবে, কারণ অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট আরও বাড়বে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ কিন্তু সমস্যা শুধু ধানেই সীমাবদ্ধ নয়, কৃষি নিয়ে আমাদের আলোচনা আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত। ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

মোখলেছুর রহমান চৌঃ অবশ্যই! ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার বর্তমান পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ধারণা। বিশেষ করে লাইভস্টক প্রোডাকশনে বায়োপ্রোডাক্টগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে এসব প্রোডাক্ট কৃষক ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই উপকারী হবে। যেমন, ক্যানাল ভ্যালি, ফসলের বর্জ্য ও পোল্ট্রি ওয়েস্ট থেকে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে এসব ওয়েস্টগুলোকে ইউটিলাইজ করা যেতে পারে। এছাড়া, আমাদের ফিশারিজ সেক্টরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে জলজ পরিবেশের মান ঠিক রাখাটা জরুরি। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পিএইচ, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত উপাদানগুলোতে পরিবর্তন আসছে। এই ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। একইভাবে, পোষ্ট হার্ভেস্ট লসগুলো কমানো এবং ফসলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ আপনার বক্তব্যগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমাদের দেশে রবি শস্যের উন্নয়ন নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে কি?

. কামরুজ্জামানঃ হ্যাঁ, রবি শস্য নিয়ে গবেষণা চলছে, তবে সেগুলোর পরিসীমা সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, আইপিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি রাতের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াসও বৃদ্ধি পায়, তবে ধানের ফলন ১০% কমে যাবে। এটি অন্য শস্যের জন্যও প্রযোজ্য। গম, ভুট্টা, সয়াবিন, এই সব শস্যের ফলনে পরোক্ষ প্রভাব পড়বে। আমাদের গমের একটি হিট টলারেন্ট প্রজাতি দরকার, যেটি গরমে বাঁচতে পারে। একইভাবে, লবণাক্ত অঞ্চলে স্যলিনিটি টলারেন্ট ধান, গম ও অন্যান্য শস্যের উন্নয়ন দরকার। ভবিষ্যতে যদি এই বিষয়ে উদ্ভাবনী গবেষণা না হয়, তবে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই, সরকারের আরেকটা বড় দায়িত্ব হচ্ছে এই গবেষণাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

মাসুদ সিদ্দিকঃ ক্লাইমেট টেকনোলজি, উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের গরিব কৃষক সমাজের পক্ষে কতটুকু সহনীয়? এটা এডাপ্ট করা এবং ডিসেমিনেট করা, রেপ্লিকেশন করা, এটা কি মূল্যটা কি পাচ্ছে না?

. কামরুজ্জামানঃ বাংলাদেশের গবেষণা, দেশের গবেষক আর সামাজিক অবস্থার সাথে সংহতিপূর্ণ। গবেষকের গবেষণায় আমরা কাজ করি, কিন্তু ওইটাই করি। যে মেশিন বিদেশ থেকে আনতে হয় ৪০ লাখ বা ৫০ লাখ টাকা, সেটাকে ১০ লক্ষে তো কেমনে করা যায়? ৫ লাখের কেমনে দেযা যায়, লাখ বাদে একবারে ১০ হাজার টাকায় নিয়ে আসা যায় কিভাবে? গবেষণার টার্গেট কিন্তু ওই জায়গাটাই তো এখন হওয়া দরকার। টেকনোলজি গুলি সেটা দক্ষ জনগণের অভাব, গবেষক এর অভাব, গবেষক এর দক্ষতা বাড়ায় হবে। যেমন, আমি মডেলিং নিয়ে কাজ করি, আমার হাজার হাজার ডাটা দরকার নাই, এক্সপেরিমেন্ট করার খরচের দরকার। আমি একাই হাজারটা এক্সপেরিমেন্ট আমি আমার কম্পিউটারেই বসে করতে পারি। এই টেকনোলজি এখন আছে, আমি কাজ করি যেটা নিয়ে। তো এখন আমাদের রিমোট সেন্সিং, আমি ঘরে বসেই এখন কিন্তু সেই পর্যন্ত চলে আসছি। যে এগুলো যে কম, খুব বেশি কষ্টের সেটা না। সারা পৃথিবীতে কৃষি ভর্তুকির উপরে চলে। আমেরিকায় ২% লোকজন কৃষি কাজের সাথে জড়িত, কৃষি কি বন্ধ হয়ে গেছে? বন্ধ হয়ে যায় নাই। সবচেয়ে বড় প্রবলেম  কৃষকরা উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম পাচ্ছে না। একটা ভ্যালু চেন আছে  যে চেনে প্রোপার মার্কেটিং সিস্টেম নাই, কোঅপারেটিভগুলি কাজ করছে না। কোরিয়াতে পড়াশোনা করছিলাম,জাপানে, গিয়েছিলাম,পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখেছি, সেখানে কিছু কোঅপারেটিভ সিস্টেম আছে। সরকার একটা মূল্য নির্ধারণ করে, বাংলাদেশের সরকার ও মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ধানের। কেউ ধান বিক্রি করতে চায় না, এই ধরনের কাজ করলে তো হবে না। এখন ধানের মূল্যটা ওইভাবে করতে হবে যাতে কৃষকরা কিছুটা লাভবান হয়। সরকারতো কোঅপারেটিভের সাথে আলোচনা করে, তারা কিন্তু একটা মূল্য নির্ধারণ করে। আর এদের কার সাথে আলাপ করতে হবে, তাই স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বসতে হবে, কৃষকদের নিয়ে বসতে হবে, যে বিক্রি করবে ধান তাকে গুরুত্ব ‍দিতে হবে, কৃষককে গুরুত্ব দিতে হবে। এই ফেয়ার প্রাইজের ব্যাপারটা জাপানে প্রবলেম হচ্ছে না, কোরিয়াতে প্রবলেম হচ্ছে না, অন্য দেশের প্রবলেম হচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রবলেম হয়ে যাচ্ছে, ক্রপ জোনিং যেটা বিএআরসি করছে বা আমরাও করছি, এটা প্রয়োজন। এমন উৎপাদন করব না যেটা কতটুকু দরকার আছে, ঠিক ওই জায়গাটায় করতে হবে, এগুলো আসলে গুরুত্বপূর্ণ, এই পলিসি গুলো দরকার।

মাসুদ সিদ্দিকঃ বেসরকারি সংস্থা বা বেসরকারি উদ্যোগ, এই যে টেকনোলজিগুলো ডেভেলপ করছেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে দেশীয় প্রযুক্তির টেকনোলজি এগুলো ডিসেমিনেট করা, এগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে বেসরকারি সংস্থা? আর বেসরকারি সংস্থাগুলো তো প্রজেক্ট পেলে তারপরে সাপোর্ট দিবে, সরকারের পক্ষে তো সেভাবে করা সম্ভব না।

মোখলেছুর রহমান চৌঃ এই বিষয়টাতে যাওয়ার আগে, রিসার্চের যে গ্যাপগুলো আছে, সেইটাকে একটু হাইলাইট করে তারপর এটাতে আসতে চাচ্ছিলাম, যেটা হচ্ছে, হয়তো শুধুমাত্র এগ্রিকালচারের সেক্টরের যে গবেষণাগুলো আছে, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ক্রপ অথবা ক্রফ রিলেটেড যে টেকনোলজিগুলো আছে, সেটার সাথে সীমাবদ্ধ আছে অন্যান্য জায়গাগুলোতে। কিন্তু এই সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে, যেমন: যদি বলি যে ইরিগেশনের ক্ষেত্রে যদি সারফেস ওয়াটার ইউজ করা হয়, তাহলে প্রোডাকশন এনহ্যান্স হবে, পাশাপাশি ফার্টিলাইজার এপ্লিকেশনের প্রয়োজনীয়তাটা কমে যাবে। তাহলে  কেন পারছিনা, যে স্ট্রাকচার গুলো হচ্ছে যেটার কারণে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে? যদি হাওরের কথা বলা হয়, সে ক্ষেত্রে ফ্লাডের জায়গাগুলোর পাশাপাশি, অন্যান্য জায়গা গুলোর ক্ষেত্রে নদীর যে সারফেস ওয়াটার ইউজ করার ক্ষেত্রে, যেটার প্রতিবন্ধকতা গুলো, যে পরিমাণ পলি পরার কথা, যেটা হয়তো আমার উর্বরতা বাড়ানোর কথা, সেই জায়গাগুলোতে আনপ্লান্ট ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রাখছে? সেই জায়গাগুলোতে কতটুকু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে? সেই জায়গাগুলোতে হয়তো এগ্রিকালচার সেক্টর থেকে গবেষণা করার দরকার। সেই জায়গাটাতে। আর এখন যদি বলা হয় যে বেসরকারি সংস্থা গুলো কিভাবে কাজ করতে পারে, বেসরকারি সংস্থার আগে সবার আগে আরেকটা জায়গায় মানে আগায় আশা উচিত এই জায়গাটা, সেটা হচ্ছে ইউনিভার্সিটি গুলো। যদিও অন্যান্য ইউনিভার্সিটির তুলনায় কৃষি ইউনিভার্সিটি গুলো যথেষ্ট পরিমাণ গবেষণায় ভূমিকা রাখে, কিন্তু তারপরেও এই জায়গাগুলোতে আরো একটু সক্ষমতা বাড়ানো উচিত আর। এক্সটেনশন সার্ভিসের ক্ষেত্রে যেটা মূল মেইন প্রতিবন্ধক কথাগুলো, সেটা হচ্ছে যে এক্সটেনশনের সাথে অন্যান্য যে সমন্বয়টা, বিশেষ করে যদি বলি বিএডিসি। বিএডিসি হচ্ছে, তার মার্কেট বা মার্কেট নিয়ে কাজ করার কথা, প্রাইজিং নিয়ে কাজ সার বা বীজের, হচ্ছে এভেলেবিলিটি নিয়ে কাজ করার কথা। সেই জায়গাটাতে কিন্তু আপনাকে ধরা যাচ্ছে যে, বিআরআই থেকে একটা নতুন টেকনোলজি ইউজ করলে, এনজিও অথবা ডিএই  সাময়িক সময়ের জন্য সেটা প্রমোট করার চেষ্টা করলে, এক দুই বছর সে বীজ আর এভেলেবল থাকছে না, থাকছে না মার্কেটে। এ কারণে শতশত ভ্যারাটি হচ্ছে যা আমরা প্রমোট করতে পারছিনা। যেগুলো হয়তো পারমিনেন্ট। এখানে বিএডিসির জায়গাটা, তারা দেখা হচ্ছে তাদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে, তো তারা যখন প্রফিটেবল হয় না, সেই জিনিসটার প্রোডাকশন তারা বন্ধ করে দে,তারা এই জায়গাটাতে একটা ভ্যারাইটি মাঠ পর্যায়ে এক্সটেনশন করার জন্য মিনিমাম হচ্ছে, থেকে আট বছরের প্রয়োজনীয়তা। অনেক সময় দেখা যায় তো এই দীর্ঘ সময় ধরে যে সাবসিডি অথবা এখানে যে ভূমিকা রাখার কথা, বিএডিসির, এইটা হচ্ছে না। প্রাইভেট সেক্টর গুলো, বিশেষ করে যারা হচ্ছে, প্রফিট মার্জিনটাকে এনহান্স করার জন্য কাজ করে, তাদের যে মার্কেটিং পলিসি এবং তাদের যে ইনভলভমেন্ট গুলো মাঠ পর্যায়ে, সেই জায়গাটাতে আসলে আমাদের যে সরকারী সার্ভিস দরকার, অথবা যে যে ভ্যারাইটি গুলো নিয়ে গেলে কৃষকরা লাভবান হবে, সেই জায়গাটাতে কিন্তু আমরা ভূমিকা রাখতে পারছিনা। এখানে প্রাইভেট সার্ভিসগুলো, তাদের ভ্যারাইটিস গুলো, যেটা হয়তো মনোপলি একটা ব্যবসা, এই জায়গাটাতে তারা  মার্কেটটাকে গ্রাস করে ধরছে। এটা একটা খুব এলার্মিং এবং এই কারণে স্যার হয়তো আরো ভালো জানবেন, মাঠ পর্যায়ে কিন্তু আসল যে কৃষকরা, এরা কিন্তু আস্তে আস্তে কৃষি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। এখন যারা কৃষির সাথে জড়িত আছে, তারা কিন্তু বর্গা চাষী হিসেবে, যারা আছে, তারা আগে ডে লেবার হিসেবে কাজ করতো, তাদের মধ্যে কোন প্ল্যানিং নাই। আমি হালদার ওখানে স্টাডি করেছি, আমি বিভিন্ন আরবান ফেরিতে স্টাডি করেছি। যেটা হচ্ছে, যারা মাঠ পর্যায়ে এখন কৃষির সাথে জড়িত, আপনার বিশেষ করে আরবান গুলোতে, খুবই অ্যালার্মিং সিচুয়েশন। এখানে দ্রুত হাত বদল হচ্ছে,  একেকটা কারণে লিজিং সিস্টেমে যাচ্ছে, যারা লিজ নিচ্ছে, তাদের কোন বিজনেস প্ল্যান নাই, তারা লিজ নিচ্ছে ৩০,০০০ টাকা দিয়ে, হয়তো এক বিঘা নেয়, সে এটাকে আসলে রিটার্ন করতে পারবে কিনা, সেই ধরণের কোন তাদের প্ল্যান নাই। এক বছর দুই বছর চাষ করার পরে তারা সর্বস্ব হারায়, তারা হচ্ছে কৃষি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আরেকজন এসে নিচ্ছে, তো এদের তো আসলে ডে-লেবার যারা, তারা তো আসলে কৃষক না। তো এই জায়গাটাতে হচ্ছে তাদেরকে ক্যাপাসিটি বিল্ডের সমস্যা আছে এবং হচ্ছে, সর্বোপরি যে তাদের বিজনেস প্ল্যানটাটা না থাকার কারণে, ওভার মূল্য দিয়ে দিচ্ছে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ এই যে কথাটা যে প্রকৃত কৃষক কৃষি কাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যে এখন কৃষকদের ডেল্যাবার, এবারে কৃষি শ্রমিক এ প্রসঙ্গে?

. কামরুজ্জামানঃ কোন একটা দেশ যদি উন্নতির দিকে যায়, তার ইন্ডিকেটর হচ্ছে, কৃষি থেকে লোক নন-কৃষি কাজের দিকে চলে যাবে, এটা হচ্ছে ইন্ডিকেটর। এর মানে, দেখবেন যে চাপটা সরাসরি কৃষি থেকে লোকজন নন-কৃষি সেক্টরে চলে যাবে। আপনি যদি সারাদিন কৃষি কাজ করেন, হয়তো এক হাজার টাকা পেয়ে ফিরবেন, কিন্তু রিক্সা চালালে, ভেন্টা বের করলে তার থেকে বেশি ইনকাম করে ঘরে ফিরবে। এখন কৃষক কষ্টকর কাজ করছে, কৃষিকাজ করা খুবই কঠিন, শ্রমসাধ্য কাজ। এখানে কোন কৃষকের ছেলে এখন আর স্বপ্ন দেখে না যে আমার ছেলে কৃষক হবে। তারা ভাবে, আমার ছেলে চাকরি করবে, বা অন্য কোন প্রফেশনাল কাজ করবে। এখন ৮০% লোক কৃষির সাথে যুক্ত ছিল, কিন্তু এখন মাত্র ৪০% মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। এর শিফটিং ঘটছে। ২০০৮ সালে আমি চায়না গিয়েছিলাম, মেকানাইজেশন নিয়ে ট্রেনিং করতে। সেখানে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার এবং কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করার জন্য প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এক প্রফেসর বলেছিলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের শ্রমিক শঙ্কা থাকবে, তবে কৃষি বন্ধ করা যাবে না। এই জন্য প্রযুক্তি আনতে হবে। তাদের পলিসি মেকিং তাতে ভূমিকা রেখেছে, কম্বাইন হারভেস্টার ৯০% ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের জন্য এনে দেওয়া হয়েছে। চিন্তা করবেন না, কৃষকরা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমার নিজে মনে হয়, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খুব জরুরী। করোনার সময়, যখন মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ ছিল, তখন হাওরে ধান কাটার জন্য লোকজন পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন সরকার কৃষকদের জন্য কম্বাইন হারভেস্টার নিয়ে আসে, ৩হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয় এবং হাওরে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কাছে কম্বাইন হারভেস্টার পৌঁছে দেওয়া হয়। এখন ওই অঞ্চলের চেহারা পুরোপুরি বদলে গেছে। ১০-২০ বছর ধরে বলছি, শ্রমিক সংকট আসবে, বেকার হবে। এটা কিন্তু হয়ে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকরা এখন মুভমেন্ট করতে পারছে না। আমি নিজে পরীক্ষায় দেখলাম, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ২০% বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমি জানি, অনেক কৃষক প্রথমে বিরক্ত হয়েছিল, কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছে। কৃষিকে মেকানাইজ করতে না পারলে আমরা বাঁচতে পারব না। তবে, যদি প্রযুক্তি আসে, তবে কৃষিতে বহু ধরনের নতুন ব্যবসা তৈরি হবে। ধানের চারা বিক্রি, সার্ভিস, মাটি তৈরি, অনেক কিছুই হবে। আমাদের কৃষিকে বাঁচাতে, সরকারের উদ্যোগ জরুরী।

মাসুদ সিদ্দিকঃ এগ্রিকালচার সেক্টরে আসলে বিশেষ করে আমাদের স্টুডেন্টসরা ফিউচার জেনারেশন তারা কিন্তু যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না। আমি বিনয়নের সাথে বলছি যে তারা এই দিকটা দেখে না, আমাদের সরকার বা দেশ, দেশের সরকার এই যে দীর্ঘমেয়াদী ক্লাইমেট স্মার্ট টেকনোলজিটা ইন্ট্রোডিউস করার জন্য ডিসেমিনেট করার জন্য এবং অল ওভার দি কান্ট্রি কোন রকমের কি পলিসি বা নীতি নির্ধারণ আছে?

. কামরুজ্জামানঃ অনেকগুলো পলিসি আছে, ডিউ টু দ্য বেস্ট অন দ্যা ক্লাইমেট চেঞ্জ। ক্লাইমেট চেঞ্জকে বেজ করে কিন্তু অনেকগুলি ন্যাশনাল পলিসি রয়েছে, যেমন: কৃষি নীতি, ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান, যেটার জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩ থেকে ২০৫০ পর্যন্ত একটা প্ল্যান আছে, সেখানে কিন্তু এই বিষয়গুলো, যে কথাগুলি বললাম, সে কথাগুলি কিন্তু ওখানে আছে। পলিসি আমাদের আছে, কিন্তু তারপর আছে যে আমাদের এনডিসি, আমাদের ডেল্টা প্ল্যান, আমাদের লট প্ল্যান। কিন্তু এখন এগুলি এক্সিকিউট করার জন্য যে পরিমাণে আমাদের মোটিভেশন দরকার, পলিসির দরকার, ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য অর্থের দরকার, সেই জায়গাটাতে আমাদের কিন্তু যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমাদের হয়তো চেষ্টা বা কিসের অভাব আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা, বা আমাদের সেই জায়গাগুলিতে কিছুটা হেফাজার্ট। আমার কাছে মনে হয় যে পলিসি আছে, আমি নিজেই অনেকগুলোর সাথে জড়িত ছিলাম।

মোখলেছুর রহমান চৌঃ এই জায়গায় বড় গ্যাপটা হচ্ছে সেক্টরাল কোঅর্ডিনেশনটা। এই জায়গাতে খুবই গ্যাপ আছে। সেক্টরাল কোঅর্ডিনেশনটা, যার কারণে হচ্ছে প্রায়োরিটি সেট করার একটা বিষয় আছে। আরেকটা হচ্ছে ন্যাপের সাথে লাপার যে উপযোগিতাটা আছে, লোকাল এডাপটেশন প্ল্যান তো ওই জায়গাতে দেওয়ার মতো। এখন পর্যন্ত ওই ধরনের ইনিশিয়েটিভগুলো নাই। কিছু হয়তো ব্যক্তিগত, এনজিও বা কিছু কিছু অর্গানাইজেশন এই জায়গাগুলোতে, যেগুলো ক্লাইমেটিক হটস্পট, যে জায়গাগুলোতে হয়তো ফান্ডিংয়ের অনেক সুযোগ আছে, সেগুলো টার্গেট করে লাফা ডেভেলপ করছে। কিন্তু এটা আসলে কোঅর্ডিনেটেড ভাবে, প্রত্যেকটা ইউনিয়ন বা উপজেলার কেন্দ্রিক যে লাফা ডেভেলপমেন্টের প্রচেষ্টা হওয়া উচিত, সেই জায়গাটা এখনো নেই। তোর সেক্টরকে কাজে লাগানোর, সমস্ত সেক্টরাল এনগেজমেন্টগুলো এবং কোঅর্ডিনেশনের জায়গাটাতে হয়তো ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকবে। যে কৃষি সেক্টরকে নিয়ে সরকারের অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান আছে, কোঅর্ডিনেশনের অভাবও আছে, সেটাও আমি বলবো না। আমি একজন গবেষক হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব আছে সেটা আমি যেমন পালন করতেছি, ঠিক তেমন ডিইএ আছে, তারা গবেষণায় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবেন, এক্সটেনশন করবেন, উনি এক্সটেনশন কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। টেকনোলজিও কিন্তু আছে, সলিউশনও আছে, কিন্তু এগুলো মাঠ পর্যায়ে যে টেস্টিং করার জন্য যে বিষয়গুলি আছে, সেই জায়গাটায় কিছুটা ঘাটতি আছে। আরেকটা বিষয় আছে, যে পলিসিগুলি আছে সেগুলি এক্সিকিউট করার জন্য, একটা প্রকল্প নেওয়া হয় বা প্রকল্প নিয়ে কাজ করা হয়। যেমন, ধরেন সেটা জলবায়ু সম্পর্কিত, সেখানে কিছু বরাদ্দ আসে। গবেষণার জন্য সেখানে একটা বড় অংশ বরাদ্দ হওয়ার কথা। সেই থিমেটিক এরিয়াগুলোর উপর ভিত্তি করে আসার কথা প্রকল্পগুলি, কিন্তু গবেষণায় যে পরিমাণ বরাদ্দ আসে, গবেষকদের জন্য যথেষ্ট নয়। আপনি যদি গবেষণাকে গুরুত্ব না দেন, টাকা দিয়ে সঠিকভাবে গবেষণা করানোর সুযোগ না দেন, তখন সলিউশন কোথা থেকে আসবে? আপনি দেখুন, আগে সরকারগুলোর সময় এই ধরনের কাজগুলো সেভাবে হয়নি। তারা সোলার লাইট বানানোর মতো কাজ করেছে বা নদী খনন করেছে, কিন্তু গবেষণায় বরাদ্দটা দেয়নি। আমি বিদেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গবেষণা যদি গুরুত্ব না পায়, তবে ফলাফল কিছুই আসবে না। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা অনেক ভালো কাজ করছেন, কিন্তু তাদের জন্য যে কাঠামো দরকার, সেটা দেওয়া হচ্ছে না। যখন আপনি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিবেন না, গবেষণাটাকে এমফাসিস দিবেন না, তখন আপনি কখনোই প্রকৃত সমাধান পাবেন না। কাজেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

মাসুদ সিদ্দিকঃ আমরা সেটাই চাই যে, গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারের নজর আরো সুনির্দিষ্ট হোক, আরো সুবিন্যস্ত হোক, এটাই আমরা চাচ্ছি। আপনারা দুজনই অত্যন্ত মূল্যবান সময় দিয়েছেন, আপনাদের দুজনকেই এনডিসিয়া এবং এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (AIRD) লিমিটেড এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ফেসবুকে মন্তব‌্য করুন