Ended soon
মুক্তা একটি মূল্যবান রত্ন। প্রাচীনকালে মুক্তার উৎপাদন কৌশল জানা ছিল না। তখন শুধুমাত্র প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মুক্তাই সংগ্রহ করা হতো। পরবর্তী সময়ে চীন এবং জাপানে ঝিনুকের মুক্তা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবিত হয়। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশেও মুক্তাচাষের অপার সম্ভাবনা দেখা গেছে। এরই মধ্যে দেশীয় ঝিনুকে মুক্তাচাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের গবেষকরা।
দেশব্যাপী জরিপ চালিয়ে এখন পর্যন্ত স্বাদু পানির ৫ ধরণের মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে কিছু উন্নত জাতের ঝিনুক সংগ্রহ করে গবেষণা করা হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, উদ্ভাবিত এই মুক্তাচাষ দেশের ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি আনবে বৈদেশিক মুদ্রাও। মুক্তার চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে।
মুক্তাচাষ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। তাদের মতে, বাংলাদেশের মিঠাপানির জলাশয় মুক্তা উৎপাদন ও বহনকারী ঝিনুকে পরিপূর্ণ। জলবায়ুও মুক্তাচাষের উপযোগী। প্রায় ১০ মাস উষ্ণ আবহাওয়া থাকায় ঝিনুকের বৃদ্ধি ও মুক্তাচাষের পরিবেশও অনুকূল এখানে। তাই এই খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন তারা। তাই উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পুকুরে মুক্তা চাষ
দেশীয় আবহাওয়ায় মুক্তাচাষের ওপর বেশ কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইতোমধ্যে অনেকে, দেশের কিছু জায়গায় খাল-বিল থেকে স্বাদু পানির প্রায় দুই হাজার ঝিনুক সংগ্রহ করে চাষ শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে ঝিনুকের মধ্যে অস্ত্রোপচার করে ইমেজ (মুক্তার বীজ) প্রতিস্থাপন করেছেন। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুকগুলোও বেড়ে উঠছে। নির্দিষ্ট সময় পর ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণ করা হবে। মুক্তাচাষের জন্য অস্ত্রোপচার কোনো কঠিন কাজ নয়। খুব অল্প খরচে সরঞ্জাম কেনা যায়। মাছের পুকুরেই বাড়তি আয় আনতে অনেকেই মুক্তাচাষ শুরু করেছেন।
সংগৃহীত মুক্তা থেকে গহনা তৈরি
দেশের স্বাদু পানিতে প্রথমবারের মতো মুক্তাচাষ পদ্ধতি বের করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহসেনা বেগমের নেতৃত্বে একদল গবেষক।
প্রাথমিকভাবে সফলতা পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত এক হাজার জনকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮০০ জনই নারী। বিএফআরআই থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ১২ জন সফলভাবে প্রথম পর্যায়ে মুক্তা উৎপাদন করছেন। বাকিদের বড় অংশ চাষ শুরু করেছে। ইমেজ মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি তুলনামূলক সহজ এবং বাণিজ্যিকভাবে করা সম্ভব। তাই প্রথমে এটির উপর নজর দেয়া হচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে মুক্তা রফতানিতে প্রথমে রয়েছে চীন। চীনের উৎপাদিত স্বাদু পানির মুক্তা বিশ্ব বাজারের ৯৫ শতাংশ দখল করে আছে যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার টন। এই মুক্তার প্রায় অর্ধেকেই এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং আমেরিকায় রফতানি করা হয় হয়।
এ সব দিক বিবেচনায় এ খাতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা। তবে ঝিনুকের জাত নিয়ে কিছুটা বিপাকে রয়েছেন তারা। মুক্তা উৎপাদনে এগিয়ে থাকা দেশগুলো উন্নত জাতের ঝিনুক পাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে চাষিদের নির্ভর করতে হচ্ছে দেশীয় জাতের ছোট আকৃতির ঝিনুকের ওপর। তাই মুক্তার আকৃতির দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছে চাষিরা। দুই থেকে তিন মিলিমিটারের বেশি বড় মুক্তা পাচ্ছেন না তারা। সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সূত্র মতে, দেশব্যাপী জরিপ চালিয়ে এ পর্যন্ত স্বাদু পানির ৫ ধরনের মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে কিছু উন্নত জাতের ঝিনুক সংগ্রহ করে গবেষণা করা হচ্ছে। ঝিনুকের আকৃতি বড় হলে মুক্তার আকার বড় হবে, এতে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়বে।