জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তাঃ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও প্রস্তুতি
এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (AIRD)লিমিটেড একটি গবেষণাধর্মী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণামূলক কাজ পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির একটি ওয়েব পোর্টাল হলো nDicia (এনডিসিয়া), এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা ‘উন্নয়ন আলোচনা’ শীর্ষক আলাপচারিতার (টকশো) আয়োজন করে থাকি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নলেজ ডকুমেন্টেশন। আমাদের আলোচনার ট্রান্সক্রিপ্ট nDicia-এর ওয়েব পোর্টালে থাকবে এবং সম্পূর্ণ আলোচনাটি nDicia-এর Youtube চ্যানেলে থাকবে। ভবিষ্যতে, এই আলোচনাগুলোকে সম্পাদনা করে একটি বই আকারে প্রকাশ করা হবে। আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তাঃ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও প্রস্তুতি আলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জনাব মুহম্মদ আব্দুস সামাদ, ডিরেক্টর প্রোগ্রাম, প্রত্যাশী এবং ডা. মুশাররাত জাহান, পাবলিক হেলথ এন্ড নিউট্রিশন প্রফেশনাল। আলাপচারিতার সঞ্চালনায় ছিলেন জনাব আব্দুল হাই চৌধুরী পরিচালক এসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (এআইআরডি) লিঃ। অনুষ্ঠানটি nDicia-এর ইউটিউব এবং ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিলো ১৬/০১/২০২৫ তারিখ রাত ৮ টা থেকে ৮:৪৫ মিনিট।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিন?
আব্দুস সামাদঃ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বলতে গেলে অনেকটা একাডেমিক বিষয় মনে হয়। তবে এটি শুধু পাঠ্যপুস্তকে নয়, বাস্তব জীবনেও অনুভব হয়। প্রত্যেকেই একভাবে না একভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব টের পায়। এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না, কারণ প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকেই তা বুঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আগে যখন শীত আসত, তখন তার জন্য একধরনের প্রস্তুতি থাকত। কখন শিউলি বা কদম ফুটবে, কখন বর্ষা আসবে, কোন মাসে কী ধরনের পোশাক পরা উচিত এগুলো পূর্বাভাসের মতো জেনে রাখা হতো। কিন্তু এখন সেই ধারাবাহিকতা আর নেই। শীতকাল বা বর্ষাকাল এখন আগের মতো নিয়ম মেনে আসে না। প্রকৃতির আচরণে এমন অস্বাভাবিকতা স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। যদি সহজ ভাষায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন হলো তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, এবং অন্যান্য আবহাওয়াগত উপাদানের গড় পরিবর্তন, যা দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে। এটি শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় নয়, বরং প্রতিদিনের বাস্তবতায় জীবনের একটি অংশ।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ মূল বক্তব্যটা হচ্ছে, আগে শুনতাম বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এখন তো মনে হয়, এটা যেন দুই ঋতুর দেশ হয়ে গেছে। এটাই হয়তো ক্লাইমেট পরিবর্তনের প্রভাব। ডা. মুশাররাত জাহান এই ক্লাইমেট পরিবর্তনের যে প্রভাব, সেটা খাদ্য নিরাপত্তার ওপর কীভাবে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
ডা. মুশাররাত জাহানঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান যে প্রভাব, সেটা মূলত পড়ছে দুটি ক্ষেত্রে। এক হলো স্বাস্থ্য, আরেকটি হলো খাদ্য বা পুষ্টি। যদি সহজ বাংলায় বলা হয়, এই প্রভাবটা নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর খাদ্যের প্রাপ্যতা (availability), প্রবেশযোগ্যতা (accessibility), এবং ব্যবহার উপযোগিতা (utilization)। এখন ক্লাইমেট পরিবর্তনের প্রভাব কীভাবে পড়ছে? প্রথমত, প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে। যখন বৃষ্টি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, অতিবৃষ্টি হচ্ছে, বা উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে এসব কারণে ফসল উৎপাদনে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দ্বিতীয়ত, খাদ্য চেইনের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটা ক্লাইমেট পরিবর্তনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট সমস্যাগুলো যখন আসে, তখন ফসল সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বড় সংকট দেখা দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলি, শীতকালীন সবজির ক্ষেত্রে। যদিও আমরা এখনও কিছু শীতকালীন সবজি বাজারে দেখতে পাই, কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার সুযোগ প্রায় নেই। সম্প্রতি দেখলাম আলুচাষিরা খুব কষ্ট পাচ্ছেন, কারণ তারা আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এমনকি তারা উৎপাদিত আলু ফেলে দিচ্ছেন। এটা প্রতি বছরই দেখি। স্টোরেজ বা সংরক্ষণ ক্ষমতার অভাবে এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। তৃতীয়ত, ক্লাইমেট পরিবর্তনের কারণে খাদ্যের দাম বাড়ছে। যখন আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি না, তখন আমদানি করতে হয়, যার ফলে খরচ বেড়ে যায়। এতে অনেকের জন্য খাদ্য প্রবেশযোগ্য হয়ে ওঠে না। আর যখন প্রবেশযোগ্যতা কমে, তখন খাদ্যের ব্যবহারও সীমিত হয়ে যায়। সব মিলিয়ে, ক্লাইমেট পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। এটি একদিনে ঘটছে না, কিন্তু এর ধাক্কা স্পষ্টভাবে অনুভব হচ্ছে। এই বাস্তবতাকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ জলবায়ু পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক ইস্যু। সাম্প্রতিককালে আমরা ক্যালিফোর্নিয়ার ঘটনা বা আজারবাইজানের মতো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন কপ (COP) বা অন্যান্য সেমিনার দেখেছি। আমি জানতে চাই- জনাব সামাদ সাহেব, ক্লাইমেট চেঞ্জের বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রভাব কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।
আব্দুস সামাদঃ জলবায়ু পরিবর্তন এবং জাস্টিসের প্রসঙ্গে বলি, এটি শুধুমাত্র জীবিকা নয়, আমাদের জীবন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, প্রকৃতি এবং ইকোসিস্টেমের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। কিন্তু যারা নিম্নবর্গের মানুষ, তাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিকল্প নেই। তাদের জীবনযাত্রা ও জীবিকা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চল যেমন খুলনা বা সাতক্ষীরায় চিংড়ি চাষীদের উদাহরণ ধরা যাক। লবণাক্ততার কারণে মাটি ও পানির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পুনরুৎপাদন সক্ষমতায় প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে শহরে বা দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছে। কিন্তু যাদের বিকল্প নেই, তারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। এ কারণেই ক্লাইমেট জাস্টিসের কথা আসে। বিগত বছরগুলোতে কপ-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ফান্ডিং এবং কার্বন নিঃসরণের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়ে গেছে। বড় শিল্পোৎপাদনকারী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিলেও যথাযথ অর্থায়ন করছে না। ফলে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে কৃষি নির্ভর নিম্নবর্গের মানুষের উপর। নিম্নবর্গের কৃষকরা ইন্ডিজেনাস প্রযুক্তি এবং বীজ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতেন। কিন্তু এখন তাদের সেসব প্রযুক্তি ও জ্ঞান অকার্যকর হয়ে পড়ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বড় দেশগুলো যেমন শিল্পোৎপাদনের মাধ্যমে নদীগুলো ধ্বংস করছে, তেমনি এই ধ্বংসের মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে সীমান্তবর্তী ও নিম্নবর্গীয় জনগণ। সর্বশেষ, ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাব থেকে নিম্নবর্গীয় জনগণকে সুরক্ষা দিতে ইকুইটেবল জাস্টিস নিশ্চিত করতে হবে। এদের জন্য টেকসই সমাধান প্রয়োজন।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ বর্ণনাটা গ্লোবাল থেকে লোকাল পর্যন্ত শুনলাম। এখানে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে যতই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করা হোক, আমরা দেখতে পাই যে উন্নত দেশগুলোরও এই প্রভাবের জন্য একটি ন্যায্য দায় রয়েছে। তবে সত্যিকার অর্থে এই ন্যায্যতাটা (জাস্টিস) বজায় রাখা হচ্ছে না। অনেকেই এটাকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করছেন কেউ ধর্মীয়ভাবে, আবার কেউ বলছেন যে, যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় যা হয়েছে, সেটি কি প্রকৃতির ন্যায্য বিচার? এটি তাদের জন্যও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আর শুধু আমাদের দিকে আঙুল তোলার সময় নয়; তাদের নিজেদের দিকেও তাকানোর প্রয়োজন আছে। ফুড সিকিউরিটি (খাদ্য নিরাপত্তা) বিষয়টি কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
ডা. মুশাররাত জাহানঃ ফুড সিকিউরিটির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন এই ধরনের দুর্যোগ ঘটে, তা সরাসরি খাদ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, এবং তা শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও। এই প্রভাব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা মানবসৃষ্ট, তা বৈশ্বিক খাদ্য বাজারেও প্রতিফলিত হয়। খুব সাম্প্রতিক সময়েও দেখা যাচ্ছে যে যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে কৃষির গভীর সংযোগ রয়েছে। যখন পুষ্টি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন শুধু পুষ্টি নির্দিষ্ট উদ্যোগে মনোযোগ দিয়েছিলাম। পরে বুঝলাম, শুধুমাত্র পুষ্টি নির্দিষ্ট উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়। এরপর কৃষি, পশু পালন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কাজ শুরু করা হলো। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন SUN নেটওয়ার্ক বা অন্যান্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, পুষ্টি কেবল স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, এটি এখন একটি ব্যবসা ক্ষেত্রও হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ফুড ফোর্টিফিকেশন বা খাদ্য সমৃদ্ধকরণ এখন গ্লোবাল ট্রেন্ড। যেমন, চালে জিংক যোগ করা, তেলে ভিটামিন এ এবং ডি মেশানো। এই ধরনের উদ্যোগগুলো খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজার উন্নয়ন এবং পণ্যের সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়গুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল থেকে লোকাল স্তর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াগুলো অব্যাহত রয়েছে। আশা করা, জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও উন্নত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ লিঙ্গভিত্তিক সমতা বা ইংরেজিতে যাকে “জেন্ডার ইকুয়ালিটি” বলা হয়, এই বিষয়টি ক্লাইমেট পরিবর্তনের কারণে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় কী প্রভাব ফেলছে, তা যদি মোশাররত আপা সহজ ভাষায় দর্শকদের জন্য বিশ্লেষণ করেন?
ডা.মুশাররাত জাহানঃ আসলে, লিঙ্গভিত্তিক সমতার প্রসঙ্গ শুরু থেকে বললে, আমাদের দেশে ফিমেল এবং মেইলের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল, তা ক্লাইমেট পরিবর্তনের কারণে তৈরি হয়নি। এই বৈষম্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অনেক পলিসি এবং এডভোকেসি কার্যক্রমের ফলে এটি অনেকটাই উন্নত হয়েছে। এছাড়াও সচেতনতার বৃদ্ধি ঘটেছে।তবে খাদ্য নিরাপত্তার প্রসঙ্গ এলে আমরা দেখতে পাই, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে, মহিলারা প্রায়ই নিজেদের না খেয়ে সন্তান বা স্বামীকে খাবার দেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি ডিম থাকলে, তা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, তাদের মধ্যে এই ধরনের ত্যাগের চিত্র স্পষ্ট। ফুড সিকিউরিটির ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে লিঙ্গভিত্তিক সমস্যার উপস্থিতি এখনও রয়ে গেছে। তবে যদি আমরা খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারি এবং সচেতনতা আরও বাড়াতে পারি, তাহলে এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব হবে।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ আমার জানার বিষয় হলো, ইদানীং লোকালাইজেশন নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আমরা ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে গ্লোবাল প্রেক্ষাপটটি দেখলাম। কিন্তু লোকাল লেভেলে, বিশেষত আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষজন কীভাবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কাজ করছেন, তা জানাটা জরুরি। যেমন আপনি বললেন, ওরা গাছ লাগাচ্ছে। এই প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করলে মানুষ আরও উদ্বুদ্ধ হবে। আমার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলি। নেপালে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখলাম একজন ব্যক্তি তার বাড়ির সব ধরনের বর্জ্য রিসাইকেল করছেন। তার এই জ্ঞান এবং উদ্যোগ গ্লোবাল স্কেলে ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারে। আমি তাকে বলেছিলাম, “আপনার ছোট কাজটার গ্লোবাল প্রভাব আছে।” যদি আমরা সবাই এভাবে কাজ করি, পৃথিবী বদলে যাবে। আমাদের কমিউনিটি ভিত্তিক অভিজ্ঞতা কী? যেমন সিবিও নিয়ে আপনি বললেন। এদের কাছে প্রাসঙ্গিক তথ্য নেই, কিন্তু তারা বাস্তবে কী করছে? গ্লোবালের জন্য এসব উদ্যোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
আব্দুস সামাদঃ লোকালাইজেশন বা কমিউনিটি বেসড অ্যাপ্রোচ নিজেরাই একেকটি তথ্যের ভান্ডার। যেমন গহের আলী শত শত তালগাছ লাগিয়ে দিলেন। তিনি হয়তো লোকালাইজেশন বা ইন্ডিজেনাস নলেজ সম্পর্কে জানেন না, কিন্তু তার কাজ হিউজ ইমপ্যাক্টফুল। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, গ্রামীন এরিয়ার মানুষ কখনো পরিবেশ ক্ষতি করছে না, তা নয়। প্রপার ইনফরমেশন এবং এওয়ারনেসের অভাবে অনেক কিছু হয়ে থাকে। ধরুন, আমাদের সিলেট অঞ্চলে অনেক খালি জমি থাকত, যাকে আমরা খিল বলতাম। গরু-ছাগল চড়ত, ছেলে-মেয়েরা খেলত। যখন কোনো পশু মারা যেত, সেটা ওই খিলেই ফেলে রাখা হতো। এতে পাবলিক হেলথে বড় ধরনের প্রভাব পড়ত। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, গ্রামীন মানুষের কন্ট্রিবিউশন দুই দিকেই যায় ক্লাইমেট পজিটিভ এবং নেগেটিভ। তাই কমিউনিটিকে প্রোপার ইনফরমেশন এবং সেনসিটাইজেশন দিলে তারা আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। আমাদের এখানে একসময় প্রচুর দেশীয় গাছপালা ছিল, যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখত। এখন সেই জায়গায় আমরা ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ লাগাচ্ছি, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ফলে অনেক প্রাণীর আবাস এবং খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে। আমরা চুনতি মডেলের কথা জানি, যা জাতিসংঘ পুরস্কৃত করেছে। এই মডেলটি স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছিল, যেখানে কমিউনিটির লোকজন বন রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। আরেকটি বিষয় হলো আমাদের লোভ কমানো। আগে আমরা কম আয়ে চলতাম, এখন আয় বেড়েছে কিন্তু লোভও বেড়েছে। আমরা ফাইনান্সিয়াল লাক্সারি বাড়াচ্ছি, অথচ প্রকৃত সুখ খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের শুধু খাবারে নয়, জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে ডায়েটিং দরকার। আমাদের কমিউনিটিগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে তথ্য দেওয়া, তাদের ইন্সপায়ার করা এবং পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করাটা অত্যন্ত জরুরি।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ ডা.মুশাররাত জাহান, আপনার লোকাল এক্সপেরিয়েন্সটা যদি ফুড সিকিউরিটি অ্যাসপেক্টে শেয়ার করেন, আপনি তো মাঠে কাজ করছেন, কিছু গল্প বলুন, যেভাবে কৃষকরা সংগ্রাম করছেন পৃথিবীকে কন্ট্রিবিউট করার জন্য, তাদের অভিজ্ঞতা।
ডা.মুশাররাত জাহানঃ ফুড সিকিউরিটি নিয়ে বলতে গেলে, আমি যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছি, সেটা কিছুটা ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। কৃষকদের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করি, কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আর তাদের প্রকৃত অবস্থা আমাদের জানা থাকে না। প্রকল্প শেষ হলে, আমরা আর তাদের সাথে ফলোআপ করতে পারি না। যেমন সূচনা প্রকল্প ছিল, খুব বড় একটা প্রকল্প, কিন্তু সেই প্রকল্পের পরে আমরা জানি না তারা সেই প্রশিক্ষণগুলো বাস্তবে ব্যবহার করছে কিনা। সিলেটে আমি কিছু সময় কাটিয়েছি, সেখানে কৃষকরা খুব একটা উদ্যোগী নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তারা বিদেশে চলে যায় বা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই সীমিত থাকে। মাঠে, গাছে, বা কৃষিকাজে তাদের কোন আগ্রহ নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, তবে এটা একটা বড় সমস্যা। ফুড সিকিউরিটির ক্ষেত্রে, সরকার কি করছে বা আমাদের দেয়া প্রশিক্ষণগুলো কার্যকর হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে কোনো ফলোআপ নেই। এক্ষেত্রে, আমাদের সিস্টেমের মধ্যে একটা গ্যাপ রয়েছে। আবার, অনেক বড় প্রকল্পের মতো সূচনা প্রকল্পের পরেও কৃষকরা এর সুফল পাচ্ছে কিনা, সেটা জানার কোনো উপায় নেই। তবে শহরে ছাদ বাগান করার প্রবণতা এবং কৃষকদের মধ্যে একটি নতুন উদ্যোগ তৈরি হচ্ছে। কিছু উদ্যোক্তা গ্রামে গিয়ে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, কিভাবে তারা নিজে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, কিন্তু এই ধরনের উদ্যোগগুলো আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়া উচিত। এককভাবে একজন আর কত করতে পারবে? সবাইকে একসাথে নিয়ে আসা উচিত।
আব্দুস সামাদঃ আপনি যে সিলেটের কৃষকদের বিষয়ে বলছেন, এটি আসলেই সত্যি। সিলেটের অনেক এলাকা এখনও অপ্রযুক্ত, এবং এতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা প্রেক্ষাপট জড়িত। শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে এখানে ভূমি ব্যবস্থাপনা খুব দুর্বল। এছাড়া, ভূ-প্রশাসন এবং সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কিছুটা দুর্বল, এবং এক্ষেত্রে পেশাদার দক্ষতার অভাব রয়েছে।
মুশাররাত জাহানঃ সিলেটে অনেক স্কোপ রয়েছে, যেমন হবিগঞ্জে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়, তবে সেই মাছগুলোর স্টোরেজ এবং ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে করা হয় না। সিলেটে একদিকে চা বাগান আছে, অন্যদিকে সবজি উৎপাদনও প্রচুর। তবে সেখানে কৃষকদের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। পঞ্চগড়ে গেলে দেখা যায়, সেখানে চা বাগানের পাশাপাশি প্রচুর সবজি চাষ হয়, যদিও তাদের চিনির কল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে চা বাগানের পরিবেশ এখন আগের মতো সবুজ নয়, অনেকটা ক্ষতির দিকে যাচ্ছে।
আব্দুস সামাদঃ চা বাগানের প্রসঙ্গে, আমার একটা বই আছে ‘ধুন্ধুবুড়ি’ নামে, যেখানে ৬০% আলোচনা চা বাগানের অর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়ে। সেখানে বন্ডেড স্লেভারি এবং এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। চা বাগানকে শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাটা যথাযথ নয়, এর সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও জরুরি। আর পঞ্চগড়ের প্রেক্ষাপটে সিলেটের চা বাগানের সাথে একটি কমপ্লিট ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। আর পঞ্চগড়ের চা বাগান ব্রিটিশ বেনিয়ারা তৈরি করেনি। এটি সম্প্রতি শুরু হয়েছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। আমরা ছোটবেলায় স্কুলে পড়েছি যে, পাহাড়ি ঢালু জমি ছাড়া চা বাগান সম্ভব নয়। কিন্তু পঞ্চগড় সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এ কারণে বলছি যে, এই আলোচনা একটু অন্যভাবে দেখতে হবে।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ সরকার কী করছে বা কী করবে, সেটি আমি এই আলোচনায় আনতে চাইছি না। এটি অন্য একটি বিষয়। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য কী সুপারিশ করা যায়, বিশেষত ফুড সিকিউরিটি অ্যাসপেক্টে? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফুড সিকিউরিটিতে একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং এটি দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে। ট্রেন্ড দেখে মনে হচ্ছে, এ সমস্যা আরো বাড়বে। আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে যদি আপনি সরকারের জন্য দুই-তিনটি সুপারিশ দিতে চান, যা কাজে লাগতে পারে, তাহলে সেই সুপারিশ কী হতে পারে?
ডা. মুশাররাত জাহান: প্রথমেই বলব, সাপ্লাই চেইনটাকে আগে স্ট্রং করতে হবে। এটি যদি এক অর্থে শক্তিশালী হয় স্টোরেজ থেকে শুরু করে উৎপাদন এবং আমার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো চেইন তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি মনে করি, এটি একটি বড় ইস্যু। আমাদের যারা প্রধান উৎপাদক, অর্থাৎ কৃষক ভাইয়েরা, তাদের যেন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সময়মতো দেওয়া হয়। চাষ করতে গেলে যা যা লাগে সার, বীজ, ইত্যাদি সেগুলো যেন তারা সময়মতো পান। একইসঙ্গে, কৃষকদের জ্ঞান বাড়ানো জরুরি। এখন আমরা ধীরে ধীরে অর্গানিক পদ্ধতির দিকে যাচ্ছি এবং পেস্টিসাইড বাদ দিয়ে অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করছি। যেমন, নেপালে যেভাবে রিসাইক্লিং করে সার তৈরি করা হয়, সে ধরনের জ্ঞান যেন কৃষকেরা পান। মোটকথা, আমার মেইন ফোকাস হলো সাপ্লাই চেইন ইস্যু।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ এক্স্যাক্টলি, যদি সাপ্লাই চেইনটা ঠিক করা যায়, যা বড় দুর্বলতা তাহলে মনে হয় ফুড সিকিউরিটির অনেক সমস্যার সমাধান হবে। সাপ্লাই চেইন নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কিছু আলোচনা রাখবো। যেটা বলছিলাম, সরকারের ভবিষ্যতে কী করা দরকার? পরবর্তী প্রজন্মের, এবং পৃথিবীর জন্য দুই-তিনটি সুপারিশ চাই।
আব্দুস সামাদঃ আমি সময়ের দিকে তাকাচ্ছি। মনে হয় আমরা সময়ের বাইরে চলে গেছি। আমি শুধু একটি পয়েন্ট বলব। সরকারকে কিছু বলার দুঃসাহস নেই, তবে বলতে চাই যে, সরকারি প্রকল্পগুলোতে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট নামে একটি বিশাল ডকুমেন্ট তৈরি হয়। অনুগ্রহ করে এই ডকুমেন্টগুলো শুধু স্পাইরাল বা বাইন্ডিং করে সুন্দর করে প্রজেক্ট ডিরেক্টরের অফিসে ঝুলিয়ে রাখবেন না। এটি কেবল একটি ডকুমেন্ট হয়ে থাকলে চলবে না। এই অ্যাসেসমেন্টের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কেবল একটি কাগজের কাজ হিসেবে থেকে যায়।
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ এই জায়গাটা যদি সঠিকভাবে সমাধান করা যায় এবং বড় বড় প্রকল্পের জন্য নতুন অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে মনে হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিছুদিন আগে আমাদের বর্তমান উপদেষ্টার সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। টিভিতে দেখলাম। দেখা যাক, তিনি কোনো পরিবর্তন আনতে পারেন কি না। এটি একটি খুবই সুন্দর প্রস্তাব। শেষে আমি শুধু যোগ করতে চাই, আমাদের এই উদ্যোগটি আমরা প্রতি সপ্তাহে চালিয়ে যাচ্ছি। এক একটি বিষয় ধরে আলোচনা করছি। যেমন প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রায় ৪০-৫০টি পর্ব পর্যন্ত যাব। পরে আমরা এই আলোচনাগুলো একটি প্রকাশনার রূপ দেব। আজকের আলোচনাটি একটি ট্রান্সক্রিপ্ট হিসেবে তৈরি হবে এবং এটি আমাদের ওয়েব পোর্টাল এনডিসিয়ার (nDicia) ওয়েব পোর্টালে প্রকাশিত হবে। এছাড়া ইউটিউব লিংকেও থাকবে। কেউ পড়তে না চাইলে শুনতেও পারবে। আমাদের মডেল হলো একটি আলোচনা, একটি ট্রান্সক্রিপ্ট, এবং একটি বই তৈরি করা। এটি আমরা একটি জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে নিতে চাই। ভবিষ্যতে এটি হয়তো একটি সোশ্যাল বিজনেস মডেলেও রূপান্তরিত হতে পারে। এরকম দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। আমাদের এই ১০-১১ পর্ব আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবে চলছে। এই উদ্যোগ নিয়ে আপনাদের দুজনের কিছু পরামর্শ চাই। এই উদ্যোগটি নিয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাই। যদিও এটি একটি ছোট উদ্যোগ এবং হয়তো ১০০-২০০ ভিউ পাচ্ছি, তবুও আমরা চাই এটি অব্যাহত রাখতে। উন্নয়নমূলক আলোচনা চালিয়ে যেতে। এর নামও তাই দিয়েছি। এখানে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে এক ঘণ্টার আলোচনা করব এবং একটি ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করব। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় এটি থেকে যাবে।
ডা.মুশাররাত জাহানঃ আমার কাছে মনে হয় এটি অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। আপনারা যেমন ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করছেন, ফুড সিকিউরিটি বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইস্যুও আসতে পারে। ক্লাইমেট চেঞ্জের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত কিছু বড় প্রভাবও রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া আরবান হেলথ বা নগরজীবন নিয়েও কথা বলা যেতে পারে। আমার মতে, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যেহেতু এখন সবকিছুই ভিজুয়াল, তাই মানুষ এটি দেখবে। যদিও এটি চটকদার কোনো আয়োজন নয়, তবুও কিছু মানুষ অবশ্যই এটি দেখবে। তারা যদি এখান থেকে কোনো দিকনির্দেশনা বা উপকার পায়, তাহলে এটি সফল হবে। এটি একটি ভালো ইনিশিয়েটিভ। ইনশাআল্লাহ এটি ভালো কিছু হবে।
আব্দুস সামাদঃ আমি খুবই ইমপ্রেস যে আপনারা এই আলোচনা নিয়ে ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করছেন এবং এটাকে পাবলিক পাবলিকেশন হিসেবে প্রকাশ করছেন। আমার জানা ছিল না যে এটি একটি পাবলিক ডকুমেন্ট হবে। আমার মনে হয়, টকশো এবং আলোচনা সংকলিত ও ডকুমেন্টেড করা একটি অসাধারণ উদ্যোগ। এই ধরনের আইডিয়া নিয়ে খুব কম কাজ হয়েছে, অন্তত আমি শুনিনি। এটি একটি ইন্টারেস্টিং এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে যাচ্ছে। প্রথমেই, আমি nDicia কে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। আমার মনে হয়, এটি শুধু আলোচনা নয়, বরং প্র্যাকটিশনারদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং তাদের চিন্তাভাবনাকে তুলে ধরার একটি এক্সিলেন্ট ইনিশিয়েটিভ। কারণ, যখন আমাকে লিখতে বলা হয়, তখন আমি যেটা বলি তার অনেক কিছুই হয়তো বলতাম না। অনেস্টলি বলতে গেলে, আমি যা বলেছি তার ৫%ও আমার লেখায় আসত না। আমি সেই লেখাকে রিভিউ করতাম, রেফারেন্স দিতাম এবং অন্যভাবে উপস্থাপন করতাম। কিন্তু এখানে আমি একদম স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার চিন্তাগুলো প্রকাশ করেছি। আমার মনে হয়, এটি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার একটি মূল্যবান দলিল হয়ে উঠবে। আপনারা ইতোমধ্যে ১১টি পর্ব সফলভাবে আয়োজন করেছেন এবং আরও ৫০টির বেশি আয়োজন করার পরিকল্পনা করছেন। এটি সত্যিই কিছু ইউনিক হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত থাকতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আশা করি, আপনারা এ বিষয়ে আরও কাজ করবেন এবং নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!
আব্দুল হাই চৌধুরীঃ আপনাদের দুজনকে এবং সম্মানিত দর্শকশ্রোতাদেরকেও ধন্যবাদ।